দেশ বিদেশ
‘ডোন্ট ক্রাই ফর মি, আর্জেন্টিনা’
মানবজমিন ডেস্ক
২৪ নভেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবারবিশ্বকাপ ফুটবলে বিস্ময় সৃষ্টি করে ইতিহাস নির্মাণ করেছে সৌদি আরব। মঙ্গলবার তারা ২-১ গোলে টপ ফেভারিট লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে মরুর বুকে ফুটবলের নতুন পতাকা উচ্চে তুলে ধরেছে। বিশ্বের কাছে ফুটবলের নতুন বিস্ময় হয়ে উঠেছে আল সেহরি এবং আল দাওসারির সৌদি আরব। তা নিয়ে সৌদি আরবে, মধ্যপ্রাচ্যে যেমন আনন্দের সীমাহীন ঢেউ খেলে যাচ্ছে, তেমনি উদ্বেলিত মুসলিম বিশ্ব। এসব দেশে আর্জেন্টিনার ভক্তের সংখ্যা বিপুল হলেও তারা এদিন প্রশংসায় ভাসিয়েছে সৌদি আরবকে। সঙ্গত কারণেই শেষ পর্যন্ত তাদেরকে সমর্থন দিয়েছে। এ বিজয়ের খবর সৌদি আরব তথা মুসলিম বিশ্ব একরকম উদ্যাপন করেছে, অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ হলেও আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ফুটবলের ঘোর শত্রু ব্রাজিলে দুয়োধ্বনি উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সয়লাব নেতিবাচক মন্তব্যে। গতকাল আরব নিউজের প্রধান সংবাদ শিরোনাম ছিল- ‘ডোন্ট ক্রাই ফর মি, আর্জেন্টিনা’। নেতিবাচক দিক থেকে এ শিরোনাম করা হয়েছে।
একপর্যায়ে এই গান গেয়েছেন ম্যাটেরিয়াল গার্লখ্যাত ম্যাডোনা। বিদায় আসন্ন হওয়া বা বিদায় নেয়ার পর দেশবাসীকে কান্না না করতে, বিলাপ না করার আহ্বান জানানো হয়েছে এর মধ্যদিয়ে। সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনার পরাজয়ের ফলে ওই গানের ৫টি শব্দ ব্যবহার করে ওই শিরোনাম করেছে আরব নিউজ। এতে সারাবিশ্বের মতো সৌদি আরবের খেলোয়াড়দের, কোচের প্রশংসায় ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। এই যখন অবস্থা তখন ব্রাজিলের নাগরিকরা, তাদের ভক্তরা আর্জেন্টিনাকে নিয়ে উপহাস করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা লিখছে- ‘ডোন্ট ক্রাই ফর মি, আর্জেন্টিনা’। তবে সবাইকে সতর্ক করেছে গালফ নিউজ। তাদের শিরোনাম- ‘কাতার ওয়ার্ল্ডকাপ: ডোন্ট রাইট অফ আর্জেন্টিনা অ্যান্ড লিওনেল মেসি ইয়েট’। অর্থাৎ এখনই আর্জেন্টিনা এবং লিওনেল মেসিকে বিশ্বকাপ থেকে মুছে দেবেন না। গত চারটি বিশ্বকাপে মেসি দেখিয়ে দিয়েছেন, একজন জিনিয়াস সব সময় ট্রফি জেতেন এমন নয়। ডাচ্ টোটাল ফুটবলের প্রবক্তা তিনবার ব্যালন ডি’অর পুরস্কার জেতার পরও বার্সেলেনা ও অ্যাজাস্কের ট্রফি ছুঁতে পারেননি। একই রকম ভাগ্যবরণ করেছিলেন আরও অনেকে। এর মধ্যে আছেন ফেরেঙ্ক পুসকাস, আলফ্রেড ডি স্টেফানো এবং আরও অনেকে। গালফ নিউজ লিখেছে, দিয়েগো ম্যারাডোনার দিকে তাকান।
তিনি একমাত্র ফুটবলার, যাকে পেলের সঙ্গে তুলনা করা যায়। এই ম্যারাডোনার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে মেসিকে আবিষ্কার করে গেছেন নিজে। ফলে আর্জেন্টিনার হয়ে তিনিও বিশ্বকাপ জিততে পারেন। এখনো বাস্তবে কোনো চাপ নেই তার ওপর। ব্রাজিলের ভক্ত হওয়া সত্ত্বেও সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক শ্যাম এ কৃষ্ণা বলেন, মেসির গলায় আমি বিশ্বকাপের মেডেল দেখতে পছন্দ করি। কিন্তু সমস্যা হলো, মেসিকে ব্যাক দেয়ার বা সমর্থন দেয়ার মতো টিম কখনো ছিল না আর্জেন্টিনায়। তারা সাম্প্রতিক সময়ে মাত্র ২০১৮ সালে ফাইনালে ওঠে। সেখানেও তারা ব্যর্থ হন জার্মানির কাছে। কিন্তু এবার ব্যাপারটা ভিন্ন। একটানা ৩৬টি জয়ের পর আর্জেন্টিনা কাতারে এসেছে। আশা করা হয়েছিল তারা র্যাংকিংয়ে ৫১তম অবস্থানে থাকা সৌদি আরবের সঙ্গে ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করবে। কিন্তু বিশ্বকাপের ইতিহাসে আরেকটি বড় ‘শক’ তৈরি হলো।
‘ডোন্ট ক্রাই ফর মি, আর্জেন্টিনা’ এমন এক শিরোনামে এএফপি লিখেছে, ব্রাজিলে বসে বিশ্বকাপ দেখার সঙ্গে তুলনা করার খুব কম অভিজ্ঞতাই আছে। সেখানে সীমান্তরেখায় ফুটবলের প্রতি অতিমাত্রায় নেশা। জাতীয় টিমের গর্বে ফেটে পড়ে তারা। চিরশত্রু আর্জেন্টিনা যখন পরাজিত হয়, তখনো একই অবস্থা। মঙ্গলবার যখন আর্জেন্টিনা পরাজিত হয়, তখন এসব দৃশ্য মঞ্চস্থ হয়েছে ব্রাজিলে। তারা ঘৃণাকে বেছে নিয়েছেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আপসেট ঘটিয়ে দেয়ার পর তারা প্রচারণা শুরু করেছে। বিশেষ করে র্যাংকিংয়ে ৫১তম অবস্থানে থাকা সৌদি আরবের কাছে তাদের পরাজয় সবচেয়ে খুঁচিয়ে খাচ্ছে ফেভারিটের তকমা লাগানো মেসিবাহিনীকে। সঙ্গে সঙ্গে ব্রাজিলে উন্মাদনা শুরু হয়ে গেছে। ২০২১ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে যখন আর্জেন্টিনার কাছে ব্রাজিল পরাজিত হয়, তখন থেকেই তাদের এই প্রচারণা শুরু। এ সময় থেকেই ব্রাজিলে আর্জেন্টিনা হয়ে ওঠে টুইটারে টপ ট্রেন্ড। বেশির ভাগই তারা উপহাস, মস্করা করছে আর্জেন্টিনার ভক্তদের। একজন তো টুইটারে লিখেছেন, তিনটি জিনিস আছে- যা ব্রাজিলিয়ানকে আনন্দ দিতে পারে। ১. বারবিকিউ। ২. ছুটি কাটানো। ৩. আর্জেন্টাইনদের কান্না।
আরেকজন টুইট করেছেন নিজের ছবি। হলুদ-সবুজ জার্সি দুলিয়ে তাতে লিখেছেন-‘ডোন্ট ক্রাই ফর মি, আর্জেন্টিনা’। কিছু ব্রাজিলিয়ান আর্জেন্টিনার পতাকাকে বদলে দিয়েছেন। তারা আর্জেন্টিনার পতাকার কেন্দ্রে থাকা সূর্যকে হলুদ এক কান্নারত ইমোজি দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। এমনতরো নানা রকম নেতিবাচক মন্তব্যে সয়লাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
আরব নিউজ লিখেছে, অবর্ণনীয় বিষয়কে কীভাবে বর্ণনা করা যায়?
এমন প্রশ্ন তুলেই তারা লিখেছে, সৌদি ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ম্যাচ। অন্যভাবে বলা যায়, সৌদি আরবের সবচেয়ে চমৎকার ক্রীড়া অর্জন। মঙ্গলবার কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে যে ঘটনা ঘটে গেছে, তা এ দুটির কোনটি দিয়েই বর্ণনা করার মতো নয়। তবে কি একটি আরব জাতির এ যাবৎকালের সবচেয়ে মহান পারফরমেন্স? সম্ভবত এটা বলা যায়। সৌদি আরব যখন আর্জেন্টিনা এবং লিওনেল মেসিকে বিধ্বস্ত করে দিলো, তখন এসব বর্ণনা অপর্যাপ্ত হয়ে ওঠে। টেলিভিশনে ফুটবলপ-িতরা কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তারা নিজেদের ধরে রাখতে পারলেন না। শুধু বলে যেতে লাগলেন ‘হিস্টোরিক’, ‘সেনসেশনাল’, ‘ইমপসিবল’। কিন্তু সারা জীবনের এই পারফরমেন্সকে বর্ণনা করা যায় এভাবে: সাহসিকতা।
সরকারি পত্রিকা সৌদি গেজেটের শিরোনাম- ‘সৌদি এরাবিয়া স্ক্রিপ্ট হিস্টোরি, স্টানিং আর্জেন্টিনা ২-১’। অর্থাৎ আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে ইতিহাস রচনা করলো সৌদি আরব। কিন্তু প্রথমার্ধে অফসাইডের জন্য বাতিল হয়ে যাওয়া তিনটি গোলের জন্য অনুশোচনা করবে আর্জেন্টিনা।
খালিজ টাইমসের শিরোনাম- সৌদি এরাবিয়া স্টান আর্জেন্টিনা ২-১ ইন এ মেজর টুর্নামেন্ট আপসেট। এতে বলা হয়, বিশ্বকাপের আপসেট ঘটানো ইতিহাসের মধ্যে অন্যতম গ্রেট ঘটনা এটি। লুসাইল স্টেডিয়ামে ফেভারিট আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়েছে সৌদি আরব।