টি-২০ বিশ্বকাপ
মেলবোর্নের বিশালতায় কিশোয়ারের ‘বাংলার সৌরভ’
১৪ নভেম্বর ২০২২, সোমবারমেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড যেন ইতিহাসের খনি। এর বিশাল বুকে শুধু ক্রিকেটই নয় সাক্ষী হয়ে আছে অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল লীগ, রাগবি ইউনিয়ন, রাগবি লীগ, ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রীতি কত খেলা সাক্ষী তার হিসেব নেই। এখানের ক্লাবকর্মকতা জন লি বললেন- তুমি যেখানে আছো সেটি খেলার গুপ্তধন। এখানে ক্রিকেট, ফুটবলসহ কত খেলার যে হাসি-কান্নার গল্প আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। গতকাল এখানেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় পাকিস্তান-ইংল্যান্ড। দুপুর থেকেই স্টেডিয়ামের চারপাশে নামে ক্রিকেটপ্রেমীদের ঢল। বিশেষ করে পাকিস্তান সমর্থকদের স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে গোটা গ্যালারি। ফাইনাল ম্যাচ শুরুর আগে মাঠের মাঝে মঞ্চে কনসার্ট আর আতশবাজি দিয়ে আয়োজন হয় সমাপনী অনুষ্ঠান। সেখানে বাংলাদেশসহ সব দেশের পতাকা নিয়ে মাঠে হাজির হয়েছিলেন আইসিসির প্রতিনিধিরা। অন্যদিকে ম্যাচের আগের দিন থেকেই স্টেডয়ামের সামনে বসেছিল ক্রিকেট মেলা।
যদিও তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। এছাড়াও আইসিসির ছিল বাহারি আয়োজন। সেখানে কেউ গিটার বাজিয়ে গান গাইছেন আবার কেউ কেউ পুতুল সেজে বিনোদন দিচ্ছেন মাঠে আসা দর্শকদের। ক্রিকেট স্টেডিয়াম যেন এক আনন্দমেলা! অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশের খাবারকে জনপ্রিয় করে চলেছেন কিশোয়ার । তিনি অস্ট্রেলিয়ানদের চিনিয়েছেন চটপটি-ফুচকা। তার সুবাদেই এখন অস্ট্রেলিয়ার পাঁচতারকা অনেক হোটেলে পরিবেশিত হয় বাংলার ঐতিহ্যবাহী পান্তা-ইলিশ এমনকি আলু ভর্তাও। অস্ট্রেলিয়া মাস্টারশেফ প্রতিযোগিতায় তিনি পরিবেশন করেন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এই খাবার। সেই মাস্টারশেফ প্রতিযোগিতার ফাইনাল ডিশে কিশোয়ার চৌধুরী রান্না করেন ‘স্মোকড ওয়াটার রাইস, আলু ভর্তা ও সার্ডিন’। অর্থাৎ বাঙালির কাছে চিরচেনা পান্তা-ভাত, আলু ভর্তা আর সার্ডিন মাছ ভাজি। নিজের এই সাহসিকতা নিয়ে কিশোয়ার দৈনিক মানবজমিনকে বলেন, ‘আমরা বাসায় প্রায় সময় বাংলা খাবার রান্না করে খাই। তার মধ্যে পান্তা ইলিশও ছিল। সেদিন আমি কী রান্না করবো ভেবে চিন্তে করেনি। হঠাৎ করেই মনে হলো পান্তা ইলিশের কথা। মনে কোনো ভয় না রেখেই নেমে পড়লাম। বিচারকরা কিভাবে নেবেন সেটি চিন্তা করিনি। ভেবেছি দেশের একটা খাবারকে বিচারকদের মুখের স্বাদ বানাবো। হলো তাই!’ গতকাল তার খাবারের স্টলের বাঙালী খাবারের ঘ্রানে ভিড় করেছিল সবদেশের মানুষ।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের যাত্রা ১৮৫৩ সালে। এটি অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ইয়ারা পার্কে অবস্থিত। লক্ষাধিক আসনের দর্শক ধারণ ক্ষমতাবিশিষ্ট স্টেডিয়ামটি ১৯৫৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের প্রধান ভেন্যু হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৮৫৩ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব কর্তৃপক্ষ এলাকাটিকে ক্রিকেট খেলার উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম ব্যবহার করতে শুরু করে। উপরিভাগ ঘাস দিয়ে আবৃত ডিম্বাকৃতির মাঠে ১৮৭৭ সালে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ৪৫ রানে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। আর ১৯৭১ সালে এই মাঠে প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হয়। সে ম্যাচেও জয় তুলে নিয়েছিল অজিরা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মেলবোর্নে তাদের সর্বশেষ জয় ২০১৩ সালে বক্সিং ডেতে। টেস্ট ম্যাচে রেকর্ড ৯১ হাজার ১১২ জন দর্শক ছিলেন সেদিন।
১৯৯৯ সালের নারী বিশ্বকাপ ফুটবলে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দর্শক উপস্থিতির রেকর্ড গড়েছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার রোজ বোল স্টেডিয়ামে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচটি দেখতে ৯০ হাজার ১৮৫জন দর্শক মাঠে উপস্থিত ছিলেন। বিশাল এই স্টেডিয়াম কিন্তু সরকার নয়, ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। উইলিয়াম হেইন্স উক্ত ট্রাস্টের প্রথম সভাপতি ছিলেন। আন্তর্জাতিকভাবে এমসিজি ১৯৫৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক এবং ২০০৬ সালের কমনওয়েলথ গেমসের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছে। খোলা ও উন্মুক্ত স্টেডিয়াম এমসিজি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ক্রিকেট মাঠ হিসেবে পরিচিত।