ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

সরাইল আওয়ামী লীগে ২৭ জনকে ‘না’

জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
১৫ মে ২০২২, রবিবার
mzamin

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল আওয়ামী লীগে জায়গা নেই ২৭ জনের। কোন কমিটি বা সাংগঠনিক কাজ, কোথাও সুযোগ দেয়া যাবে না তাদের। এরা সবাই সেখানকার জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা একেএম ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত। গত ৯ই মে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত প্রকাশ পেয়েছে। ওই সভার প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও  জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার এমন সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ইকবাল আজাদ হত্যা মামলায় যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে তারা কেউ আওয়ামী লীগের কোন পর্যায়ের কমিটিতে থাকতে পারবেন না এবং সাংগঠনিক কোন কর্মকা-েও তাদের ডাকা যাবে না। 
দলীয় বিরোধে সরাইল আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ কে এম ইকবাল আজাদ নৃশংস হত্যাকা-ের শিকার হন ২০১২ সালের ২১শে অক্টোবর। এ ঘটনায় সরাইল আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল হালিম, সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক উদ্দিন ঠাকুর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল জব্বার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ আলী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাফেজুল আসাদ সিজার, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইসমত আলীসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত ইকবাল আজাদের ছোট ভাই এ কে এম জাহাঙ্গীর আজাদ। 
পুলিশের তদন্তে ঘটনার সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি আখিতারা গ্রামের মো. সাদেক মিয়াসহ আরো ৭ জনের সম্পৃক্ততা বেরিয়ে আসে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় মোট ২৯ জনের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর চার্জশিট দেয় পুলিশ। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল হালিম ও সহ-সভাপতি মো. সাদেক মিয়া মারা যান।  চার্জশিটভুক্ত বাকি ২৭ আসামি কুট্টাপাড়া গ্রামের রফিক উদ্দিন ঠাকুর ও মাহফুজ আলী, সৈয়দটুলা গ্রামের আবদুল জব্বার, সিরাজ, নয়াহাটি গ্রামের ইসমত আলী, ইদ্রিস আলী, মোকাররম হোসেন সোহেল, বাবু, কুট্টাপাড়ার হারিছ, নয়াহাটির বকুল, লিমন, আবদুল্লাহ সৈয়দটুলার শরিফ, মিজান, রাসেল, নিজ সরাইলের ইমদাদ, নয়াহাটির হাবিব, ইনু মিয়া সৈয়দটুলার মুছা মিয়া, নয়াহাটির জনি মিয়া, নয়ন মিয়া, আখিতারা গ্রামের মো: সাদেক মিয়া, ঝিলুকদার পাড়ার আরব আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের অষ্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার মশিউর রহমান, সৈয়দটুলার মিষ্টার আলী, আড়িয়ল গ্রামের মো. কামরুল ইসলাম, পূর্ব কুট্টপাড়ার আল ইমরান। 
এদিকে এ কে এম ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় স্থির হয়ে আছে।

বিজ্ঞাপন
মামলার একজন সাক্ষী ও নিহত ইকবাল আজাদের ভাগ্নে এডভোকেট জয়নাল আবেদীন জানান-২০১৩ সালের ৫ই মার্চ ইকবাল আজাদ হত্যা মামলা চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়। ওই আদালতে ডাক্তারসহ মামলার ১৪ জন সাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তার স্বাক্ষী বাকী থাকা অবস্থায় মামলার ১৩৫ কার্য দিবস শেষ হয়ে যায়। সেকারণে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের নিয়ম অনুসারে মামলাটি আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতে ফেরত পাঠানো হয়। এরপর মামলাটি আবার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্যে ২০১৪ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে ক্রিমিনাল রিভিশন(নং-১৬২/২০১৪) করেন মামলার বাদী। এর প্রেক্ষিত হাইকোর্ট  দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দেয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ হাইকোর্টের চেম্বার জজ আদালতে আপিল করে। এরপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের আদেশটিকে স্টে (অবস্থান) করা হয়। আদেশে আরো বলা হয়, হাইকোর্টে পূর্ণাঙ্গ শুনানি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটি স্টে থাকবে। এখনো স্টে অবস্থাতেই আছে। 
এদিকে ইকবাল আজাদ হত্যা ঘটনার পরই সরাইল আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত করে জেলা আওয়ামী লীগ। বহিষ্কার করা হয় আসামিদের। কিন্তু সরাইল আওয়ামী লীগে সম্মেলনের তোড়জোড় শুরু হলে আসামিপক্ষ দলে আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠে বলে অভিযোগ করেন ইকবাল আজাদের সমর্থকরা। গত ২৫শে মার্চ শাহবাজপুর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দলবল নিয়ে যোগ দেন চার্জশিটভুক্ত ২নং আসামি রফিক উদ্দিন ঠাকুর। এতে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে বর্ধিত সভা প- হয়ে যায়। নামপ্রকাশে না করার অনুরোধে শাহবাজপুর আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, জেলা কমিটির সাংগঠনিক টিমের নেতা, উপজেলা আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং ইউনিয়নের নেতাদের বাইরে অনাহুত ছিলেন রফিক উদ্দিন ঠাকুর ও তার দলবল। আর সেকারণেই উত্তেজনা দেখা দেয়। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি খায়রুল হুদা চৌধুরী বাদল ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম কালন তাদেরকে নিমন্ত্রণ করে সেখানে নিয়ে যান। গত দু’আড়াই বছর আগে চুন্টা ইউনিয়নের সভাও প- হয়ে যায় তাদের কারণেই। 
সরাইল উপজেলার জন্যে জেলা আওয়ামী লীগের করা সাংগঠনিক টিমের প্রধান জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান বাবুল জানান- নানা কারণে ঝামেলার আশঙ্কা সৃষ্টি হওয়ায় শাহবাজপুরে বর্ধিত সভা করতে পারেননি তারা। ফলে ৯ ইউনিয়নে কোনটিতেই বর্ধিত সভা হয়নি এখনো। এখন নতুন করে কাজ শুরু করবেন বলে জানান।  
গত ৯ ই মে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সরাইল উপজেলার সাংগঠনিক এই পরিস্থিতি আলোচনার পর চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও  জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন- ইকবাল আজাদ হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামিরা দলীয় কোন কার্যক্রমে আসতে পারবে না। এটা কেন্দ্রের নির্দেশ।    
রফিক উদ্দিন ঠাকুর দলের পদ হারানোর পর গত উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জয়ী হন। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে প্রায় সবক’টি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দেন তিনি। রফিক উদ্দিন ঠাকুর ছাড়া চার্জশিটভুক্ত সাবেক আওয়ামী লীগ নেতারা এখন নানা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আঁতাত করে চলছেন। বিএনপি’র এক কেন্দ্রীয় নেত্রীর সাথেও তাদের যোগাযোগ থাকার কথা চাউর রয়েছে।  

 

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

মোবাইল হ্যান্ডসেট/ ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ এখন সংকটে

মৌলভীবাজারে জাতীয় পার্টির সম্মেলন সম্পন্ন / ‘আমরা আওয়ামী লীগে নেই, বিএনপিতেও নেই

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status