ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

বাধার পর বাধা পেরিয়ে আলোচনায় সোহ্‌রাব উদ্দিন

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে
১৫ মে ২০২২, রবিবার
mzamin

এডভোকেট মো. সোহ্‌রাব উদ্দিন। কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ছিলেন পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগের টিকিটে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তার মেয়াদকালের পাঁচ বছরে (২০১৪-২০১৮) এই আসনের দুই উপজেলা পাকুন্দিয়া ও কটিয়াদীর রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ নানা ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নয়ন-অগ্রগতি হয়। দৃশ্যমান তেমন বড় কোনো অভিযোগও ছিল না এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে। এরপরও ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হন তিনি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভ করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক আইজিপি, রাষ্ট্রদূত ও সচিব নূর মোহাম্মদ। স্বভাবতই রাজনৈতিকভাবে ব্যাকফুটে চলে যান সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মো. সোহ্‌রাব উদ্দিন। কিন্তু হঠাৎ করেই বদলে গেছে দৃশ্যপট।

বিজ্ঞাপন
গত বছরের ২২শে জুলাই এডভোকেট মো. সোহ্‌রাব উদ্দিনকে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয় জেলা। এরপর থেকে গত প্রায় ১১ মাস ধরে সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের অনুসারীরা হয়ে ওঠেছেন তার প্রধান প্রতিপক্ষ। দলীয় কর্মসূচি আহ্বান করায় আহ্বায়ক সোহ্‌রাবের বাড়িতে হামলার ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। হামলা-মামলা তার অনুসারীদের এখন নিত্যসঙ্গী। কিন্তু লক্ষ্যে অবিচল এডভোকেট সোহ্‌রাব। একের পর এক বাধা পেরিয়ে পাকুন্দিয়ার রাজনীতির প্রধান চরিত্র এখন তিনি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত বছরের ২২শে জুলাই জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মো. সোহ্‌রাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক নির্বাচিত করে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণায় ক্ষিপ্ত হন বর্তমান সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ সমর্থক নেতাকর্মীরা। তারা আহ্বায়ক এডভোকেট মো. সোহ্‌রাব উদ্দিনের অব্যাহতি চেয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। শুরুতেই আহ্বায়ক এডভোকেট মো. সোহ্‌রাব উদ্দিনের সমর্থক নেতাকর্মীরা জড়ায় মামলার (নং-৯, তারিখ- ২৫/৭/২০২১) জালে। এরপরও গত বছরের ৯ই সেপ্টেম্বর সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মো. সোহ্‌রাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা আওয়ামী লীগ। এতে বুরুদিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহাবুবুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. সামছুদ্দোহা এবং জেলা যুবলীগের সদস্য, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক ভিপি মো. ফরিদ উদ্দিন এই তিনজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং বাকি ৬৩ জনকে সদস্য করা হয়। কমিটির অনুমোদনপত্রে বলা হয়, বিশেষ প্রয়োজনে আহ্বায়ক কমিটি নতুন সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে। এ কমিটি অনুমোদনের মধ্যদিয়ে সর্বশেষ ২০০০ সালের ১৮ই আগস্টে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হওয়ার দীর্ঘ প্রায় ২১ বছর পর নতুন আহ্বায়ক কমিটি পায় পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। কিন্তু আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনীতির মাঠ। পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের দরগাবাজার এলাকায় ১৬ই অক্টোবর এডভোকেট মো. সোহ্‌রাব উদ্দিনের বাড়িতে আহ্বান করা প্রথম সভার আগেরদিন সন্ধ্যায় তার বাড়িতে হামলা হয়। ঘটে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। এমপি পক্ষের এমন হামলা-বাধার মুখেই ১৬ই অক্টোবর আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ ও সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মো. সোহ্‌রাব উদ্দিন সমর্থক নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেদিন এমপি পক্ষের বাধা পেরিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এডভোকেট মো. সোহ্‌রাব উদ্দিন। এরপর ২১শে ফেব্রুয়ারি এবং ২৬শে মার্চ এ দু’টি জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদনেও দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই আহ্বায়ক সোহ্‌রাব দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর মাঝে গত ২১শে ফেব্রুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে ১০ নেতা পদত্যাগ করেন। গত ১৬ই এপ্রিল উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং পদত্যাগকারীদের স্থলে কো-অপ্ট করে ১০ জনকে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এবার ওয়ার্ড সম্মেলন আয়োজন নিয়ে পুনরায় আলোচনায় উঠে এসেছেন এডভোকেট মো. সোহ্‌রাব উদ্দিন। সম্মেলন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ১৬ই এপ্রিল প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের লক্ষ্যে পাকুন্দিয়া উপজেলার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ বই বিতরণ করা হয়। এরপর উপজেলার ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রথম ইউনিট হিসেবে গত ৫ই মে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এডভোকেট মো. সোহ্‌রাব উদ্দিনের নিজ ওয়ার্ড পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এ ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের সম্মেলন শেষে গত শুক্রবার হোসেন্দী ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের সম্মেলন আহ্বান করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগ হোসেন্দী আদর্শ ডিগ্রি কলেজ খেলার মাঠকে সম্মেলনস্থল হিসেবে ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা চালায়। কিন্তু সেখানে এমপি নূর মোহাম্মদ অনুসারী ও পদত্যাগী নেতা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনু একই সময়ে একটি ফুটবল খেলার ঘোষণা দেন। ফলে প্রশাসন থেকে দু’পক্ষকেই কর্মসূচি আয়োজনে নিষেধ করা হয়। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের ভেন্যু পরিবর্তন করে কুমারপুর চৌরাস্তা মোড়ের একটিভ মডেল একাডেমি নামের একটি কিন্ডারগার্টেনে স্থানান্তর করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেখানে সম্মেলন আয়োজন করতে গিয়ে প্রথমেই পুলিশের বাধার মুখে পড়েন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। গত শুক্রবার বিকাল ৩টায় সম্মেলন শুরুর আগেই পুলিশ সেখানকার একটি বাড়িতে হানা দিয়ে সম্মেলনের জন্য আনা চেয়ার নিয়ে যায়। এ নিয়ে পুলিশ ও নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এ উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যেই সম্মেলনস্থলে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মো. সোহ্‌রাব উদ্দিন হাজির হন। সম্মেলন আয়োজন প্রস্তুতির একপর্যায়ে হোসেন্দী বাজারের দিক থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিরোধী একটি পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সম্মেলনস্থলের দিকে অগ্রসর হলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের বাধা দেয়। এ সময় পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. সারোয়ার জাহানের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে উভয়পক্ষ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এডভোকেট মো. সোহ্‌রাব উদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক ভিপি ফরিদ উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন নেতা সম্মেলনস্থলে অবস্থান নেন এবং রাত হলেও তারা সম্মেলন আয়োজন করবেন বলে মাইকে ঘোষণা দেন। অন্যদিকে কুমারপুর চৌরাস্তাকে ঘিরে চারিদিকের সড়কে পুলিশ অবস্থান নিয়ে নেতাকর্মী এমনকি সাধারণ পথচারীদের চলাফেরা বন্ধ করে দেয়। এ সময় থেমে থেমে তিন দিক থেকে এবং সম্মেলনস্থলের সামনের ফসলের মাঠ এলাকা থেকে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল আমিন হোসাইন ও পাকুন্দিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানিয়া আক্তার ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন এবং একপর্যায়ে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ এবং কোনো ধরনের অস্ত্র ছাড়া সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবে এমন শর্তে সম্মেলন আয়োজনের অনুমতি দেন এবং ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ প্রত্যাহার করে নেন। আড়াইঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শেষে পুলিশ প্রত্যাহারের পর উচ্ছ্বসিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সম্মেলনস্থলে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় তাদের স্লোগানে স্লোগানে সম্মেলনস্থল মুখর হয়ে ওঠে। পরে সন্ধ্যা ৬টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুছ আলী রঙ্গুর সভাপতিত্বে হোসেন্দী ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এডভোকেট মো. সোহ্‌রাব উদ্দিন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদের নির্দেশে পুলিশ সম্মেলন বানচাল করতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর নির্বিচারে গুলি-টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। কিন্তু তারা জানে না, কোনোভাবেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখা যাবে না। অন্যদিকে বিকালে হোসেন্দী বাজারে ইউনিয়ন যুবলীগের ব্যানারে কর্মিসভা করেন এমপি অনুসারীরা। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রেনু। তিনি বলেন, এই আহ্বায়ক কমিটি আমরা কেউ মানি না। আজ থেকে সোহ্‌রাব সাহেবের একটা জায়গায়ও কোনো প্রোগ্রাম করতে দেয়া যাবে না।

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status