টি-২০ বিশ্বকাপ
অজিরা টাইগার ক্রিকেটের সঙ্গে চেনে রুই মাছও
১১ নভেম্বর ২০২২, শুক্রবারশেষ কবে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় টেস্ট সিরিজ খেলেছে অস্ট্রেলিয়াতে! মনে করতে হলে অনেক স্মৃতি ঘাটতে হবে। সাহায্য নিতে হতে পারে গুগুল সার্চ ইঞ্জিনেরও। উত্তর হচ্ছে ২০০৩ এ, মানে ১৯ বছর আগে। হ্যাঁ, এটাই অমোঘ সত্য। আর ওয়ানডে সিরিজ কবে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসতে পারে। সেটিও ১৪ বছর আগে ২০০৮-এ। আর টি-টোয়েন্টিতে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ এখনো খেলেইনি। তবে দুটি বিশ্বকাপের সুবাদে এখানে অজি অঞ্চলে কিছু ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে টাইগারদের। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর ৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুবাদে এখানেও সুযোগ হয়েছে প্রথমবার ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে খেলার।
অবশ্য তাদের এই বিষয়টা ভাবা উচিত। আমরা তো আর এখন ছোট দল নই!’ ২০১৫ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। সেই থেকে অস্ট্রেলিয়ানরা বাংলাদেশকে চেনে আলাদা ভাবেই। আগের মতো আর বাংলাদেশ কোথায় সেই পরিচয় দিতে এখনকার প্রবাসীদের কষ্ট করতে হয় না। চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেখা গেছে অনেক অজি শিশু-কিশোর এমনকি তরুণ-তরুণী, বয়স্করাও বাংলাদেশের সমর্থন করছে মাঠে। হোবার্টে অস্ট্রেলিয়ার চার শিশু ক্রিকেটার তো বাংলাদেশের জার্সি পরে পতাকা নিয়েও মাঠে হাজির হয়েছিল। যা দেখে বাংলাদেশিরা দারুণ আপ্লুত। এ নিয়ে আজিজুন নাহার মলি বলেন, ‘আমরা যখন অস্ট্রেলিয়াতে আসি ১৩ বছর আগে তখন বাংলাদেশকে চেনাতে খুব কষ্ট হতো। এখনকার অস্ট্রেলিয়ানরা আমাদের দেশ কোথায় তা জানতে চাইলে বলতে হতো ভারতের পাশে। কিন্তু এখন আর সেটির প্রয়োজন হয় না। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে আমাদের বাংলাদেশ কোথায় সেটি বোঝাতে কষ্ট করতে হয় না। আমরা কিন্তু আমাদের বুচারশপের নাম রেখেছি বাংলা বাজার। আর এই রেস্টুরেন্টের নাম কারি এক্সপ্রেস রেখেছি সেই সঙ্গে সাইন বোর্ডেও বড় করে বাংলাদেশের নাম লেখা আছে। যুক্তরাজ্য ও দুবাইয়ে এমনটা হলেও অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশ নাম ব্যবহার করেছি।
আমাদের ইচ্ছা ছিল শুরু থেকেই অজিদের আমরা আমাদেরকে চেনাবো। এখন তারাতো বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে রুই মাছ আর চটপটিও চেনে। অজিরা এখন এসে রুই মাছ খেতে চায়।’ অন্যদিকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া কেন বাংলাদেশকে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলতে আমন্ত্রণ জানায় না তা নিয়েও বিস্মিত মলি। তিনি বলেন, ‘দেখেন সেই ৭ বছর আগে অস্ট্রেলিয়াতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেছে বাংলাদেশ। আর এবার এলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে। কিন্তু অন্য অনেক দেশই তো অস্ট্রেলিয়াতে সিরিজ খেলতে আসে বছর বছর। তাহলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া কেন আমাদের আমন্ত্রণ জানায় না! আমরা তো এখন অনেক ভালো ক্রিকেট খেলি। টাইগাররা তো আগের মতো ছোট দল না। আমার খুব রাগ হয় এটা ভাবতে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার উচিত বাংলাদেশকে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলার আমন্ত্রণ জানানো।’ অ্যাডিলেডে বাংলাদেশ দল চলতি বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ হেরেছে। কিন্তু লিটন দাস, তাসকিন আহমেদরা দারুণ ভাবে মন জয় করে নিয়েছে সবার। তাদের দারুণ পারফরম্যান্সের কারণে মাঠেও অস্ট্রেলিয়াসহ অন্য দেশের নাগরিকরা বাংলাদেশকেই সাপোর্ট করেছে বলে জানান মলি।
তিনি বলেন, ‘আমরা এবার মাঠে গিয়ে অবাক হয়েছি, ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে অজিরাই না এখানে থাকা ইতালি ও অন্য দেশের নাগরিকরা বাংলাদেশের সমর্থন করেছে। দল জিততে না পারলেও তারা তাসকিন ও লিটনের খেলা দেখে মুগ্ধ, আমরা ওদের নিয়ে গর্বিত। পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে আম্পায়ারদের কাণ্ড ও বাজে ব্যাটিং না হলে আমরা কিন্তু সেমিফাইনাল খেলতে পারতাম। তবে আশা করি একদিন পারবো আমরা বিশ্বকাপ জিততে। আর আশায় থাকবো বাংলাদেশ যেন অস্ট্রেলিয়াতে সিরিজ খেলতে আসে!’ তবে অস্ট্রেলিয়াতে থাকা বাংলাদেশিদের সেই আশা সহসাই পূরণ হচ্ছে না। তাদের অপেক্ষা করতে হবে ২০২৭ পর্যন্ত!