শরীর ও মন
আপনার শিশু অতি দুরন্ত বা অস্থির হলে
ডা. সৈয়দা নাফিসা ইসলাম
৮ নভেম্বর ২০২২, মঙ্গলবারশিশুর দুরন্তপনা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু কখনো কখনো এই দুরন্তপনা স্বাভাবিকের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এসব শিশু অনেক সময় আবার বইপত্র, খেলনা, ঘরের জিনিস সব কিছু ভেঙে ফেলে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বাড়িতে বেড়াতে এলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, আবার তাদের বাড়িতে গেলেও একই অবস্থা। শিশু মহলেও এই অতি দুরন্ত শিশুটি ত্রাসের সৃষ্টি করে। অনেক বাবা-মা এই দুরন্তপনার ব্যাপারটি লক্ষ্য করতে চান না। তাদের কাছে এটা যেন শিশুর স্বাভাবিক ব্যবহারের অংশ। কিন্তু আসলে তা নয়। অতি দুরন্ত শিশু যখন স্কুলে যায়, তখন স্কুল থেকেও চিঠি আসে অভিভাবকের কাছে যে, তার সন্তান দুরন্ত, অমনোযোগী এবং অন্য শিশুদের এতে সমস্যা হচ্ছে। এই দুরন্তপনা এক বিশেষ ধরনের মনোরোগ।
অতি দূরন্ত শিশু কাদের হয়-
স্কুলে পড়া শিশুদের। তুলনামূলকভাবে ছেলে শিশুদের বেশী হয় তবে;
কারণ-
সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি , তবে বিভিন্ন সংশ্লিষ্টতাকে যোগ সূত্র হিসেবে ধরা হয়। যেমন- অতিরিক্ত মানসিক চাপ, শ্রেণী কক্ষে বৈরী পরিবেশ, শিশুর শিখতে সমস্যা, খুব বেশি অপরিণত শিশুর জন্ম, মস্তিষ্কের আঘাত, ইনফেকশন, ইত্যাদি।
অমনোযোগিতার লক্ষণ:
# কোনো কিছু পুঙ্খানুপুঙ্খ জানার বিষয়ে আগ্রহ কম বা পারে না।
# পড়ালেখা এবং খেলায় মনোযোগ ধরে রাখতে ব্যর্থ।
# এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে সহসা স্থানান্তরিত হয়।
# টিভি চ্যানেল মিনিটে মিনিটে পরিবর্তন করতে চায়
# কথা শুনতে একদম অনাগ্রহ।
# উপদেশ ভুলে যায়।
# স্কুলের কাজ অগোছালো এবং অযত্ন ও ভুলে ভরা।
# সহসাই অন্যত্র তাড়িত হয়।
# যে কাজগুলোয় মনোনিবেশ দরকার সে কাজগুলো করতে ব্যর্থ হয়
# সব সময় ছোটখাটো জিনিস হারাতেই থাকে।
অস্থিরতার লক্ষণ:
# সব সময় চিৎকার আস্ফালন।
# সব সময় হাত-পা চলছে
ও ক্লাসরুমের সিট ছেড়ে উঠে পড়ছে বার বার
# অযথা দৌড়াদৌড়িতে লিপ্ত অথবা অকারণ সিঁড়ি বেয়ে উঠছে কিংবা নামছে।
# বড় বেশি কথা বলতে থাকে।
# কোনাে কিছুতেই সন্তুষ্ট নয়, সব সময় এটার বায়না, ওটার জন্য বায়না।
# আপনাকে ক্লান্ত করে কিন্তু সে ক্লান্ত হয় না
# রাতে বার বার ঘুম ভেড়ে যায়।
অতি আবেগের লক্ষণ:
# সে বিপদ কোনটি তা বোঝে না।
# প্রশ্নের আগেই উত্তর দিয়ে দেয়।
# তার পালা আসার জন্য অপেক্ষার পক্ষপাতি সে নয়।
# শৃঙ্খলাকে ভেঙে ফেলে
# চিন্তা-ভাবনা ছাড়া কাজ করে।
# অল্পতেই মনোযোগ শেষ।
# নিষেধ নামক শব্দটি তার পছনন্দ নয়।
কি করতে হবে এই রোগ হলে-
এসব লক্ষণ যদি আপনার বাচ্চার মধ্যে দেখা যায় তবে সন্দেহ করতে আরম্ভ তরুন এবং শিশু ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা করুন। কোনো সিটি স্ক্যান বা কোনো পরীক্ষায় কিছু পাওয়া যাবে না। বাচ্চার আইকিউ কম হবে না।
বাবা-মা’র করণীয়
# ধৈর্য্য ধরতে হবে।
# ছোট ছোট ভালো কাজের প্রশংসা করতে হবে।
# বকা বা মারা যাবে না।
# নিয়মমাফিক জীবনযাপন করাতে হবে।
# বেশিক্ষণ বসে থাকার কাজ দেওয়া যাবে না।
# টিভি দেখা কমাতে হবে।
# খুব শান্ত পরিবেশে পড়াতে হবে।
# অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
পরিশেষে-
# এডিএইচডি পুরোপুরি ভালো হবে না। তবে তারা পরিবেশের সঙ্গে কেমন করে খাপ খাওয়াতে হবে তা শিখবে। তারা স্কুলে ভাল না করলেও কর্মক্ষেত্রে করতে পারে ভালো। সুতরাং হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
# যেসব ক্যারিয়ার এডিএইচডি বাচ্চাদের জন্য ভালো তা হলো- যুক্তিনির্ভর, আইটি’র কাজ, খেলাধুলার জগৎ, সম্পাদনা ও ব্যবসাবাণিজ্য।
# যদি এডিএইচডি’র বাচ্চার চিকিৎসা না হয় তবে সে তার স্কুলে খারাপ করতে পারে। আত্মমর্যাদাহীন হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত হতে পারে।
লেখক: কনসালট্যান্ট, শিশু বিভাগ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চেম্বার: (১) ডা. নাফিসা’স চাইল্ড কেয়ার শাহ্ মখদুম, রাজশাহী। (২) আমানা হাসপাতাল, ঝাউতলী মোড়, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী। মোবাইল-০১৯৮৪-১৪৯০৪৯