ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

বেহুদা প্যাঁচাল

রাজনীতিতে ডিবেট প্রতিযোগিতা হলে কেমন হয়?

শামীমুল হক
৩ নভেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার
mzamin

সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে করা মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বইয়ে যায়। মির্জা ফখরুল নাকি টাকার উপর ঘুমান। অপরদিকে ফখরুলও কম যান না। তিনিও পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে এর উত্তর দেন। বলেন, ব্যক্তি আক্রমণ করবেন না। আমি জানি আপনাদের কোথায় কী আছে। সব ফাঁস করলে মুখ দেখাতে পারবেন না। এ দুজনের টাকা নিয়ে মন্তব্য- পাল্টা মন্তব্য সুখকর কিনা সেটাও এক প্রশ্ন। জনগণ রাজনীতির এমন রং তামাশা দেখতে ইচ্ছুক নয়। তবে দুজনকে একসঙ্গে টাকা বিষয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দিলে কেমন হয়? প্রত্যেকে তখন নিজের পক্ষে সাফাই গাইবেন।

বিজ্ঞাপন
গাইতে গাইতে একে অন্যকে ঘায়েল করবেন। আবার নিজে যে অর্থের মালিক নয় সেটা বোঝাতে কতো যে উদাহরণ টানবেন তার ইয়ত্তা নেই। একে অন্যকে খোঁচা দিয়ে কথা বলবেন। শুনতে বেশ ভালোই লাগবে। যুক্তি-পাল্টা যুক্তিতে আসর জমে উঠবে। তাদের এ তর্ক-বিতর্কে থাকবেন বিচারক। তাদের নাম্বারের ভিত্তিতে জয়ী ঘোষণা করা হবে। তবে এ বিতর্কে জনগণই বিচারক। তারা কিন্তু প্রতিদিনই নাম্বার দিচ্ছেন। এ নাম্বার একদিন পাহাড় সমান হবে। তারপর কী হবে জনগণই জানে।


ধর্মঘটেই বন্দি বিএনপি’র গণসমাবেশ। এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না বিএনপি। আর বাস মালিকরা আপ্রাণ চেষ্টা করছে গণসমাবেশ ভণ্ডুল করতে। তারপরও সমাবেশ সফল হচ্ছে। একই সঙ্গে সফল হচ্ছে ধর্মঘটও। উভয়েই যদি সফল হবে তাহলে ব্যর্থ কে? প্রশ্ন থেকে যায় একসঙ্গে তো দুই গ্রুপ সফল হতে পারে না। তাহলে সত্যিকার অর্থে সফল হয়েছে কে? বিএনপি নাকি বাস মালিকরা? উত্তর সবারই জানা। তারপরও বলি, এই ধর্মঘট যেহেতু গণসমাবেশ ভণ্ডুল করতে পারছে না সেহেতু তাদের ধর্মঘট সফল হলেও উদ্দেশ্য ব্যর্থ। তাহলে ব্যর্থ এ ধর্মঘট ডেকে ফায়দা কি? ফায়দা নিশ্চয় আছে। এটা তারাই ভালো করে বলতে পারবে। কিন্তু এ ব্যর্থতা কিসের ইঙ্গিত দেয়?  ওদিকে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে করা মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বইয়ে যায়। মির্জা ফখরুল নাকি টাকার উপর ঘুমান। অপরদিকে ফখরুলও কম যান না। তিনিও পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে এর উত্তর দেন। বলেন, ব্যক্তি আক্রমণ করবেন না। আমি জানি আপনাদের কোথায় কী আছে। সব ফাঁস করলে মুখ দেখাতে পারবেন না। এ দুজনের টাকা নিয়ে মন্তব্য- পাল্টা মন্তব্য সুখকর কিনা সেটাও এক প্রশ্ন।

 জনগণ রাজনীতির এমন রং তামাশা দেখতে ইচ্ছুক নয়। তবে দুজনকে একসঙ্গে টাকা বিষয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দিলে কেমন হয়? প্রত্যেকে তখন নিজের পক্ষে সাফাই গাইবেন। গাইতে গাইতে একে অন্যকে ঘায়েল করবেন। আবার নিজে যে অর্থের মালিক নয় সেটা বোঝাতে কতো যে উদাহরণ টানবেন তার ইয়ত্তা নেই। একে অন্যকে খোঁচা দিয়ে কথা বলবেন। শুনতে বেশ ভালোই লাগবে। যুক্তি-পাল্টা যুক্তিতে আসর জমে উঠবে। তাদের এ তর্ক-বিতর্কে থাকবেন বিচারক। তাদের নাম্বারের ভিত্তিতে জয়ী ঘোষণা করা হবে। তবে এ বিতর্কে জনগণই বিচারক। তারা কিন্তু প্রতিদিনই নাম্বার দিচ্ছেন। এ নাম্বার একদিন পাহাড় সমান হবে। তারপর কী হবে জনগণই জানে।  এ যখন অবস্থা সংসদে মঙ্গলবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে এক পসলা পাল্টাপাল্টি হয়ে গেল। প্রশ্নোত্তর-পর্বে সম্পূরক প্রশ্নে বিএনপি’র সংসদীয় দলের নেতা মো. হারুনুর রশীদ অভিযোগ করেন, এই খাতে হরিলুট চলছে। বিষয়টি নিয়ে একদিন সংসদে সাধারণ আলোচনা হওয়া দরকার। জবাবে সাধারণ আলোচনার পক্ষে একমত প্রকাশ করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। 

তিনি বলেন, জোট সরকারের আমলে দিনে ১৭ ঘণ্টা দেশ অন্ধকারে ছিল। বিদ্যুৎ চাওয়ায় গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। ওদিকে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কোম্পানিকে ৮৬ হাজার কোটি টাকা দেয়ার সত্যতা জানতে চেয়েছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। মো. হারুনুর রশীদ বলেন, প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের প্রশ্নোত্তরে অন্তত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কথা ৫০ বার বলেছেন। প্রসঙ্গ ছাড়াই তিনি এটা বলেছেন। দয়া করে আপনি জানাবেন, বিএনপি আমলে বিদ্যুতের দাম কতো ছিল, গ্যাসের দাম কতো ছিল? দায় মুক্তি কেন এখনো বহাল রেখেছেন। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেক্টরে লুটপাট চলছে, ভয়ানক অরাজকতা চলছে। একদিন সময় দিন, সংসদে আলোচনা হোক। আমরা আলোচনা করবো। হারুন বলেন, ভূতের মুখে রাম নাম মানায় না। আমি স্পষ্ট জানতে চাচ্ছি, বিএনপি সরকার যে গ্যাসের চুক্তি করেছিল এমন কোনো চুক্তির প্রমাণ আপনার কাছে আছে কিনা? থাকলে সেটা এই সংসদে উত্থাপন করবেন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সমালোচনা করে হারুনুর রশীদ বলেন, বিএনপি আমলে চালের দাম কতো ছিল? একটি ডিমের দাম কতো ছিল? দুধের কেজি কতো ছিল? এই উত্তরগুলো সংসদে দেন।

 

 

 শুধু দায়ী করলে হবে না। মানুষ হাহাকার করছে। তারা বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। জ্বালানি উপদেষ্টা বলেছেন, দিনের বেলায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না। এটা কী হচ্ছে?  প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সংসদ সদস্য অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। সত্য কথা অনেকে সহজভাবে নিতে পারেন না। আমিও চাই সংসদে একদিন সময় দেয়া হোক। জ্বালানি নিয়ে আলোচনা হোক। নাইকো মামলা নিয়ে যে পরিমাণ তথ্য আমাদের হাতে আছে, তাদের নেতা তারেক জিয়ার বন্ধু যে পরিমাণ সাক্ষাৎকার এফবিআই’র কাছে দিয়েছেন তার রেকর্ড আমরা তুলে ধরতে চাই। সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্টে যে পরিমাণ চুরি হয়েছে, সেই তথ্য প্রমাণও আমাদের হাতে আছে। আমরা সেগুলো এই সংসদের স্কিনে দেখাতে চাই। খাম্বা কোম্পানি তৈরির পর লুটপাটের হিসাবও আমাদের কাছে আছে। নির্বাচন সামনে আসছে, প্রস্তুত থাকুন সবকিছু আমরা দেশবাসীকে দেখাবো। উনি বিদ্যুতের দামের কথা বলেন। অন্ধকারে থাকার যে সংকট, সেই কষ্টের কথা বলেন।  বিতর্কে অংশ নিয়ে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা লোডশেডিংয়ের মধ্যে আছি। আশা করেছিলাম এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা জানালেন, আগামীতে দিনের বেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হতে পারে। জানি না কি পরিস্থিতি তৈরি হবে। পত্র-পত্রিকায় দেখলাম বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেসরকারি কোম্পানি রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কোম্পানিকে ৮৬ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। আবার সঞ্চালন লাইনের অভাবে তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নেয়া যাচ্ছে না।

 আসলে পরিস্থিতি কী তা জানানোর অনুরোধ জানান তিনি। জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, বেসরকারি কোম্পানিকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ কতো দেয়া হয়েছে তা জানার জন্য চিঠি দিতে হবে। জ্বালানি উপদেষ্টা পরিস্থিতি খারাপ হলে দিনের বেলা বিদ্যুৎ বন্ধের কথা বলেছেন। কিন্তু সেই অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। আমরা ভালোর দিকে যাচ্ছি। সঞ্চালন লাইনের কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা জ্বালানির। সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন বিএনপি’র রুমিন ফারহানাও। তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশের ব্যয় হচ্ছে সোয়া এক লাখ কোটি টাকা। আর একই ধরনের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভারতের ব্যয় হচ্ছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। পাকিস্তান আমলে ভূমি অধিগ্রহণ সত্ত্বেও কেন চারগুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে? কাতারসহ অন্য দেশ থেকে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও স্পট মার্কেট থেকে কেন জ্বালানি কেনা হচ্ছে তা জানতে চান তিনি।  সংসদে তর্ক যুদ্ধেও দুই দলের অবস্থান দুই মেরুতে। কথা শুনে মনে হয় প্রত্যেকেই ধোয়া তুলশি পাতা।

 কিন্তু বাস্তবের অবস্থা কেউই কোনোদিন অনুধাবন করেননি। জনগণকে রেখেছেন অন্ধকারে। এই জনগণ অন্ধকারে আছেন এখনো। সত্যিই বলতে কী একটি প্রবাদ আছে, তুমি অধম তাই বলে কী আমি উত্তম হইবো না? বর্তমান সময়ে কোনো কথা বললে ক্ষমতাসীনরা চলে যান বিগত আমলে। বিএনপি আমলে কী হয়েছে? তারা কতো বিদ্যুৎ দিয়েছে। তারা কতোটুকু মানুষকে সুখী রাখতে পেরেছে? তাদের আমলে খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ কতো হয়েছে? তাদের আমলে দুর্নীতি কেমন হয়েছে? এসবের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। ক্ষমতাসীনরা যেন ধরেই নিয়েছেন বিএনপি আমলের এসব কথা বললে তাদের আমলের করা সব কাজ মানুষ ভুলে যাবে। কিংবা তুলনা করে তারা দেখাতে চান বিএনপি’র চেয়ে তারা জনগণকে ভালো রেখেছেন। এটা দেখাতে গিয়েই পুরনো কথা টেনে আনেন। একবারও বুঝতে চান না মানুষ অতীত থেকে বর্তমানকে নিয়ে ভাবে বেশি। অতীতে খারাপ হয়েছে বলেই বর্তমানে খারাপ হতে হবে এমনটা তো নয়। দেশের মানুষ অতীত নিয়ে কথা শুনতে চায় না। তারা বর্তমানেরটা বুঝে নিতে চায়। 

এ বিষয়টি ক্ষমতাসীনরা কান পাতলেই শুনতে পাবেন। বুঝতে পারবেন। রাজনৈতিক কৌশল না খুঁজে জনগণকে শান্তিতে বসবাস করার নিশ্চয়তাটুকু দেয়া হউক। কার কতো টাকা আছে সেটাও জনগণ জানতে চান না। কে কতো পয়সাওয়ালা এটা নিয়ে জনগণের ভাবনা নেই। তাদের ভাবনা তারা দু’বেলা মোটা ভাত খেতে পারছে কিনা, মোটা কাপড় পরতে পারছে কিনা? এটা হলেই তারা খুশি। তারা রাজ সিংহাসনের স্বপ্ন দেখে না। তবে রাজ সিংহাসনে কে বসবে সেটা তারা নির্ধারণ করতে চায়। কারণ রাজনীতিবিদরাই বলেন, জনগণই ক্ষমতার মালিক। এমন কথা শুনে তারা আনন্দিত হন। উদ্বেলিত হন। খুশিতে গদগদ হন। কিন্তু যখন দেখেন এটা শুধু কথার কথা তখন তারা চুপসে যান। কিছু বলতেও পারেন না, করতেও পারেন না। কারণ তারা ক্ষমতাহীন।

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status