শরীর ও মন
পেটের ব্যথা
যে রোগসমূহের উপসর্গ হতে পারে
ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
৩১ অক্টোবর ২০২২, সোমবারজীবনে পেটে ব্যথা হয় নাই এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সাধারণত খাবার-দাবারের অনিয়মের কারণে, গ্যাস্ট্রিকের কারণে পেটে যে ব্যথা হয় তা পেটের সাধারণ ব্যথা হিসেবে মনে করা হয় এবং এমনটি অনেকে মনে করে পেট ব্যথা নিয়েই সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন। আবার অনেকে দোকান থেকে পেট ব্যথার বিভিন্ন ওষুধ ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ (অপরের প্রেসক্রিপশন দেখে বা নিজে থেকে) খেয়ে থাকেন। এতে অনেক সময় পেট ব্যথা জটিল আকার ধারণ করে ও সঠিক চিকিৎসা না করলে পেট ব্যথা জটিল থেকে জটিলতর হয়ে থাকে । সাধারণত দৈন্দিন জীবনে নানা কারণে পেটে যে ব্যথা হয়ে থাকে তা শুরুতেই গুরুত্ব দিতে হবে। পেট ব্যথার কিছু উপসর্গ বা ধরন মারাত্মক কোনো কিছুর ইঙ্গিত দিতে পারে। পেট ব্যথা কি রোগ হতে পারে তার সাধারণ ধারণা তুলে ধরা হলো- ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) পেট ব্যথার সঙ্গে পেট ফাঁপা, গ্যাস ও মল ত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন দেখা দেয়, তা হলে তা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) হতে পারে। সাধারণত ‘গ্যাস্ট্রো এন্টারোলজিস্ট বা কলোরেক্টাল চিকিৎসকরা পেট ব্যথা রোগীদের যেসব সিনড্রোম দেখেন তার মধ্যে অন্যতম সর্বাধিক কমন হচ্ছে আইবিএস। আইবিএসে (কখনো কখনো স্প্যাস্টিক কোলন বলে) ভোগা লোকদের অত্যধিক সেনসিটিভ কোলন বা বড় অন্ত্র থাকে। আইবিএস ওজন হ্রাস বা মলদ্বারীয় রক্তপাতের কারণ হয় না- যদি হয়ে থাকে, তা হলে অন্য কিছু ঘটছে তা মনে করা হয়।
পেট ব্যথার সঙ্গে মলাশয়ের রক্তপাত ও ক্র্যাম্পিং
পেটব্যথা প্রায় ক্ষেত্রে ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ (আইবিডি) বা প্রদাহমূলক অন্ত্র রোগ নির্দেশ করে- যেখানে ডাইজেস্টিভ ট্র্যাকে দীর্ঘস্থায়ী ফোলা হয়, যাকে ক্রন’স ডিজিজ ও আলসারেটিভ কোলাইটিস বলে।
বুকজ্বালা
বেশি বেশি তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার পর যে ধরনের অনুভূতি অধিকতর কমন তা হচ্ছে বুক জ্বালা। অনেকেই মাসে অন্তত একবার এ ধরনের পেট ব্যথায় ভোগেন। এসিড রিফ্লাক্স হচ্ছে আংশিক হজম হওয়া তরল বা খাদ্যের রিগার্জিটেশন, যা পাকস্থলীর এসিডের সঙ্গে মিশেছে। এই এসিডিক মিশ্রণ খাদ্যনালি ও গলায় জ্বালা পোড়ার অনুভূতি সৃষ্টি করে। মাঝে মাঝে বুক জ্বালা দুশ্চিন্তার কিছু নয়, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী বুক জ্বালার (যা এসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাস্ট্রো এসোফাজিয়েল রিফ্লাক্স ডিজিজ নামে পরিচিত) চিকিৎসা করা না হলে ক্রনিক ডাইজেস্টিভ ডিসঅর্ডারে রূপ নিতে পারে বা হতে পারে।
নাভির চারপাশে ব্যথা বা গলস্টোন
যদি এই ব্যথার সঙ্গে কাঁধের পাশে নিস্তেজ ব্যথা হয় এবং চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর অবস্থা আরও খারাপ হয়, তা হলে এর জন্য গলস্টোন বা পিত্তপাথর দায়ী হতে পারে। সাধারণত নারী হলে এবং বয়স ৪০ এর বেশি হলে, তা হলে রোগী উচ্চ ঝুঁকিতে থাকতে পারে। এর কারণ হচ্ছে, ইস্ট্রোজেনের বৃদ্ধি (যা প্রেগন্যান্সির সময় সাধারণ) গলস্টোন সৃষ্টি করতে পারে।
আলসার
পেপটিক আলসারের লক্ষণ হলো পেটফাঁপা, ঢেঁকুর ওঠা, ক্ষুধামন্দা ও ওজন হ্রাস ইত্যাদি। পেপটিক আলসারে পাকস্থলীর স্তর বা ক্ষুদ্রান্তের শীর্ষের ওপর ক্ষত হয়। এর জন্য দু’টি বড় কালপ্রিটের যেকোনো একটি দায়ী হতে পারে: ১. হেলিকোব্যাক্টার পাইলরি (অথবা এইচ. পাইলরি), একটি ব্যাকটেরিয়া যা পাকস্থলীর মিউকাস কোটিংকে ড্যামেজ করে। এবং ২. নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগের (যেমন- অ্যাসপিরিন বা ইবুপ্রোফেন) অত্যধিক ব্যবহার। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি শনাক্ত হতে পারে।
তলপেটের বামপাশে হঠাৎ ব্যথা বা ডাইভারটিকিউলাইটিস
যদি এই ধরনের পেট ব্যথার সঙ্গে গ্যাস থাকে, তা হলে এটি ডাইভারটিকিউলাইটিসের ইঙ্গিত দিতে পারে। ডাইভারটিকিউলাইটিস হচ্ছে, বৃহদান্ত্রের ডাইভারটিকুলা নামক ক্ষুদ্র থলির প্রদাহ। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের মধ্যে এটি খুব কমন একটি গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ডিসঅর্ডার। অনেকেরই বয়স ৬০ এর মধ্যে এটি ডেভেলপ হয়ে থাকে । মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশ লোকের উপসর্গ দেখা দেয়, যার মধ্যে অত্যধিক পেটফাঁপা, পেটব্যথা, ক্র্যাম্পিং ও কোষ্ঠকাঠিন্য অন্তর্ভুক্ত। কোলনে গর্ত হওয়ার মতো এবং এটি প্রায় ক্ষেত্রে ডায়েটে ফাইবার ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে।
তলপেটের ডান পাশে প্রচণ্ড ব্যথা বা অ্যাপেনডিসাইটিস
এই জাতীয় ব্যথা অ্যাপেন্ডাইসিটিস হতে পারে (যদি নিম্ন মাত্রার জ্বর, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া থাকে)। সাধারণত অ্যাপেনডিসাইটিস থাকলে নড়াচড়া করলে, কাশি দিলে, হাঁচি দিলে, গভীর শ্বাস নিলে এবং তলপেটে চাপ পড়লে ব্যথা বেড়ে যায়। অ্যাপেন্ডিক্সে প্রদাহ হলে ও পুঁজ জমলে (প্রায় ক্ষেত্রে ইনফেকশনের কারণে) অ্যাপেনডিসাইটিস হয়ে থাকে। অনেক সময় অ্যাপেনডিসাইটিস এর মারাত্মক ব্যথার কারণে পেটে জরুরি অস্ত্রোপচার বা অপারেশন করতে হয়। মনে রাখতে হবে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যাওয়ার পূর্বেই অপসারণ করা প্রয়োজন।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ) কলোরেক্টাল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বার: ১৯ গ্রীন রোড, এ.কে. কমপ্লেক্স, লিফট-৪, ঢাকা। ফোন-০১৭১২৯৬৫০০৯