ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শিক্ষাঙ্গন

জানুয়ারির এক তারিখেই নতুন বই পাবে শিক্ষার্থীরা : দীপু মনি

স্টাফ রিপোর্টার
২৯ অক্টোবর ২০২২, শনিবার
mzamin

জানুয়ারির এক তারিখেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি।  তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকার এই কাজে বদ্ধ পরিকর। শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে কাজী বশির মিলনায়তনে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) ৪১ তম সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন। এদিন বার্ষিক সাধারণ সভা ও আয়োজিত বইমেলা উদ্বোধন করেন ডা. দীপু মনি। তিনি বই মেলার দুটি স্টল ঘুরে দেখেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ছোটন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহসভাপতি কায়সার-ই-আলম, শ্যামল পাল, মির্জা আলী আশরাফ কাশেম, ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান, মাজহারুল ইসলাম ও সাবেক সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন। প্রকাশনা শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভাবনা তুলে ধরেন শ্যামল পাল।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের যা কিছু ভাল তা আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য তুলে রাখি। সন্তানদের শিক্ষার বিষয়টি যেখানে জড়িত সেখানে কোন কিছুর সঙ্গে আপোষ করার কোন প্রশ্নই উঠে না। নতুন বছরে বই আমাদের লাগবেই।

বিজ্ঞাপন
এবং তা এক তারিখেই লাগবে। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা আমাদেরকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। আশ্বাস দিয়েও যদি তারা কথা না রাখেন তবে বাধ্য হয়েই আমাদেরকে ব্যবস্থা নিতে হবে।


দীপু মনি বলেন, পুস্তক প্রকাশনার কাজ ব্যবসা এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে এই শিল্পের মানুষ জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ নির্মাণের কাজটিও করছে। দেশে বইয়ের ছাপা, বইয়ের বিষয়, প্রচ্ছদ এখন আন্তর্জাতিক মানের। মানুষ যত বেশি ডিভাইসে আসক্ত হোক না কেন একটা ভাল বই পড়ার আনন্দ কোন কিছু থেকে পাওয়া সম্ভব নয়।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ্যভ্যাস তৈরির উদ্যোগের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠ্য অভ্যাস তৈরি করতে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিলাম। মাত্র ৩০০ বিদ্যালয়ে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। আমরা এখন ৩৩ হাজার বিদ্যালয়ে এই কার্যক্রম নিয়ে যেতে চাই। আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিজিটালি কানেক্টেড করার চেষ্টা করছি। যেন একটি জায়গা থেকে তাদেরতে নিয়মিত দেখা ও মনিটর করা যায়। কোন বিদ্যালয়ের পাঠাগার যেন আলমারির মধ্যে বই আটকে ধূলাবালির কক্ষে পরিণত না হয় এ বিষয়েও তিনি সতর্ক করেন।

পুস্তক শিল্প সমিতির উদ্যেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে বই পোকা মানুষ। এখনো কাজের চাপে বই পড়ার সুযোগ না পেলেও একটা যদি প্রতিদিন না ধরতে পারি তাহলে মনে হয় আমার দিনটি ঠিক হল না। আমার সঙ্গে সব সময় বই থাকে। আপনারা যেমন বইয়ের মানুষ আমি মনে করি সবাই একই পরিবারের মানুষ।

দীপু মনি বলেন, বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এটি সারা বিশ্বের কাছে বিষ্ময়কর। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি, আমাদের সামাজিক উন্নতি আমাদের মানব উন্নয়ন সূচক সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়েছে। একইভাবে আমাদের জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ তৈরির যে প্রচেষ্টা সেখানেও আমরা উন্নতি করেছি। আমরা যখন ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি তখনও আমরা বই থেকে দূরে যাওয়ার কথা বলছি না। ঠিক তেমনি প্রকাশনা শিল্প গত কয়েক বছরে উন্নত হয়েছে, আধুনিক হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, আমরা একটি কষ্টের সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। করোনার সময় সারা বিশ্ব থমকে ছিল। করোনার পরবর্তী সময়ে আমরা মানবিক দৃশ্য দেখবো বলে আমরা আশা করেছিলাম। কিন্তু এই চিত্র পালটিয়ে দানবীয় পরিস্থিতি দেখছি। সারাবিশ্বে¦ জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া। মানুষের আয় রোজগার কমে যাচ্ছে। সারাবিশ্ব একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপের মত উন্নত দেশ আর্থিক সংকটের মধ্যে আছে। বিশ্বে যুদ্ধের যে দামামা বাজছে এর মধ্যে আমাদের টিকে থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন বলেন, আমরা দুঃখের কথা বলার জন্য আমরা কারও কাছে যেতে পারি না। আমাদের কিছু পুস্তক প্রকাশনা আছে। যারা ডোনেশনের মাধ্যমে এই শিল্পকে ধ্বংস করতে চায়। আমরা আপনার সহায়তায় এসব প্রকাশনীকে কালো তালিকাভুক্ত করতে চাই। সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, কাগজের সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এখনো ৫০ ভাগ কাগজ শুল্কমূক্ত আমদানী না করলে ১ জানুয়ারি বই উৎসবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি। 
এখনো স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় চাইনিজ মেলামাইনের প্লেট উপহার দেওয়া হয়। অথচ আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি  এসব প্রতিযোগীতায় বই উপহার দেওয়ার দাবি জানান সহ-সভাপতি মাজাহারুল ইসলাম।
বাপুসের উপদেষ্টা ওসমান গণি বলেন, সমিতির ২৬ হাজার সদস্য শুধু পুস্তক ব্যবসায়ী নয়, তারা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে কাজ করে। এনসিটিবি কখনোই মন্ত্রী মহোদয়কে সঠিক কথা বলেন না। এই শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তারা কোন প্রণোদনা পাননি। কোন সহযোগিতা পাননি। করোনায় তারা অনেক কষ্ট করেছে। আমরা সরকারের পক্ষের শক্তি। আমরা বই নিয়ে রাজনীতি করে এই সরকারের পক্ষে কাজ করছি। প্রত্যেক স্কুলে পাঠাগার যেন সচল থাকে এ আহবান জানান তিনি। বই মুদ্রণের জন্য ট্যাক্স ফ্রি কাগজ চেয়েছেন পুস্তক প্রকাশকরা।

পুস্তক বাধাই কমিটির সভাপতি মাহবুবুল আলম মল্লিক বলেন, মহামারীতে এই শিল্প অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখন ঘুরে দাড়াতে সরকারের সহযোগীতা প্রয়োজন।

এসময় তারা ১৩ সুপারিশ মালা তুলে ধরে। এরমধ্যে প্রকাশনাশিল্পকে আরও গতিশীল করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মত বিনিময়, পাঠ্য মাধ্যমকে জনগণের জন্য সহজলভ্য করা, এনসিটিটিবি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটিগুলোতে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও এসময় তারা ১৩ সুপারিশ মালা তুলে ধরে। এরমধ্যে প্রকাশনাশিল্পকে আরও গতিশীল করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মত বিনিময়, পাঠ্য মাধ্যমকে জনগণের জন্য সহজলভ্য করা, এনসিটিটিবি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটিগুলোতে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি থেকে কমপক্ষে ২ জন সদস্য অন্তর্ভুক্তকরণ। বিদেশি লেখার বঙ্গানুবাদ এবং বাছাইকৃত দেশি লেখার ইংরেজি অনুবাদের ক্ষেত্রকে উৎসাহ, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থগার গড়ে তোলা উল্লেখযোগ্য। বার্ষিক এ সাধারণ সভায় সমিতির পরিচালক ও ৬৪ জেলা ও উপজেলার পুস্তক ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষাঙ্গন থেকে আরও পড়ুন

   

শিক্ষাঙ্গন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status