শরীর ও মন
বেশি বয়সে ব্যথা হলে
ডা. মো. বখতিয়ার
২৯ অক্টোবর ২০২২, শনিবারবয়স বৃদ্ধি পেলে হাড়ের সন্ধিস্থলে বা গিটে ও মাংসপেশিতে যে ব্যথা হয়ে থাকে বা অনুভূত হয় তাকেই সাধারণত বাতের ব্যথা বলা হয়। এই রোগটির প্রাদুর্ভাব শীতকালে বেড়ে যায় আবার গরমকালে সহনীয় বা ব্যথা কমে যায়। তবে বাত ব্যথা শুধু শীতকালেই হয়- এই ধারণা ঠিক নয়। বাত-ব্যথা সব সময় ও সব বয়সী লোকদেরও বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তবে বয়স্ক ব্যক্তিরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বাতের ব্যথা কোনো রোগ নয়, এটা বিভিন্ন রোগের উপসর্গ বা লক্ষণ মাত্র । সাধারণত বাত-ব্যথার রোগীদের ঠাণ্ডায় বা ঠাণ্ডা লাগলে ব্যথার তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। শীতে বাত- ব্যথায় কাতর রোগীরা নিজেই ব্যথার জায়গায় গরমভাপ দিলে এবং কুসুম গরম পানিতে গোসল করলে অনেকটা আরাম বোধ করেন। জরিপে প্রকাশ দেশে পঞ্চাশোর্ধ বয়সী জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৬৫ ভাগ লোক ব্যথাজনিত সমস্যায় ভোগেন। এই ব্যথায় চল্লিশোর্ধ মহিলা ও পঞ্চাশোর্ধ পুরুষ বয়সজনিত শরীরের জয়েন্টের সমস্যা বা সন্ধিস্থলের ব্যথায় কাতর থাকেন। সাধারণত যেসব সন্ধিস্থল শরীরের ওজন বহন করে এবং বেশি ব্যবহৃত হয় যেমন ঘাড়, কোমর, কাঁধ বা সোল্ডার জয়েন্ট এবং হাঁটু ইত্যাদি স্থানে ব্যথা বেশি হয়।
বাত-ব্যথার অনেক কারণের মধ্যে রয়েছে মেরুদণ্ডের মাংসপেশি, লিগামেন্ট মচকানো বা আংশিক ছিঁড়ে যাওয়া, দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিক্স সমস্যা ও কশেরুকার অবস্থানের পরিবর্তন।
বাত-ব্যথা হতে থাকলে ধীরে ধীরে রোগী তার দেহের হাড়ের জোড়ার কর্মক্ষমতা বা নড়াচড়ার ক্ষমতা হারায় এবং জোড়া সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে রোগী পঙ্গুত্ব বরণ করতে পারে। অনেক সময় দীর্ঘদিন রোগে ভোগে শরীরের মাংস পেশিগুলোও শুকিয়ে গিয়ে সমস্যা হতে পারে।
বাতের ব্যথা নিয়ে কষ্ট ভোগ না করে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে এবং প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পরিত্রাণ পেতে হলে
* অত্যধিক ব্যথা হলে কমপক্ষে সাতদিন বিশ্রাম নিন।
* ব্যথার স্থানে গরম না ঠাণ্ডা ভাপ দিবেন তা জেনে নিন এবং ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভাপ দিতে হবে।
* বিছানায় শোয়া ও উঠার সময় যেকোনো একদিকে কাত হয়ে হাতের উপর ভর দিয়ে শোবেন ও উঠবেন।
* মেরুদ- ও ঘাড় নিচু করে কোনো কাজ করবেন না।
* নিচু জিনিস যেমন- পিড়া, মোড়া বা ফ্লোরে না বসে চেয়ারে পিঠ সাপোর্ট দিয়ে মেরুদ- সোজা করে বসবেন।
* ফোম বা জাজিমে না শুয়ে, উঁচু শক্ত সমান বিছানায় ঘুমান
* মাথায় বা হাতে ভারী ওজন বা বোঝা বহন করবেন না।
* চিকিৎসকের নির্দেশমতো ব্যায়াম নিয়মিত করবেন, ব্যথা বেড়ে গেলে ব্যায়াম বন্ধ রাখবেন।
* শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন, পেট ভরে বেশি খাবেন না, অল্প পরিমাণে বার বার খাবেন।
* লাল মাংস বা চার পা বিশিষ্ট পশুর মাংস, দোকানের কেনা মিষ্টি, ডাল ও ডালজাতীয় খাবার, ঘি, ডালডা, চর্বি, ফাস্টফুড ও বাহিরের খাবার কম খাবেন।
* শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
* অযথা বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো প্রকার মালিশ করবেন না।
* টানা বা অনেক্ষণ একই স্থানে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকবেন না।
* শোবার বেলায় সম্ভব হলে পাতলা নরম বালিশ ব্যবহার করুন।
* হাইহিল জুতা বাদ দিয়ে নরম জুতা ব্যবহার করবেন।
* ব্যথা তীব্র হলে উঁচু কমোডে বসে টয়লেট করুন।
* চলাফেরায় ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন ও রাস্তা এড়িয়ে চলবেন।
* নিয়মিত সমতল জায়গায় চলাফেরা করুণ। কমপক্ষে এক থেকে দুই ঘণ্টা হাঁটুন।
লেখক: জনস্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, খাজা বদরুদদোজা মডার্ন হাসপাতাল, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।