শরীর ও মন
ভার্টিগো: হঠাৎ মাথা ঘোরানো/ভারসাম্যহীনতা
ডা. ম. মঈনুল হাফিজ
২৭ অক্টোবর ২০২২, বৃহস্পতিবারভার্টিগো কি? ভার্টিগো হলো- মাথা ঘোরানো, চোখের সামনে অন্ধকার ঘিরে আসা বা হঠাৎই শরীরের ভারসাম্যহীনতা। ভার্টিগোতে খুব মাথা ঘোরায়, মস্তিষ্কের পীড়া হয় এবং ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। এই ভারসাম্যহীনতার কারণে ব্যক্তির মন আনচান করে, বমি বমি লাগে, প্রচ- ক্লান্তি অনুভব করে আবার উঁচু জায়গায় বা স্থানে গেলে মাথা ঘোরায়। অনেক সময় কান, মস্তিষ্ক এবং সড়বায়ুতে সমস্যাও ভার্টিগো হতে পারে। ভার্টিগো যে কারও হতে পারে। জরিপে প্রকাশ সাধারণত ১৫% থেকে ৪০% মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় ভার্টিগো বা মাথা ঘোরানোর শিকার হয়ে থাকেন।
ভার্টিগোর কারণ
ভার্টিগোর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। ভার্টিগোর কারণ পেরিফেরাল বা কেন্দ্রীয় হয় তার উপর ভিত্তি করে সংজ্ঞায়িত করা যায়। ভার্টিগোর কেন্দ্রীয় কারণগুলো মস্তিষ্ক বা মেরুদণ্ডে উত্থিত হয়, যখন পেরিফেরিয়াল ভার্টিগো কানের অভ্যন্তরে কোনো সমস্যার কারণে হয়।
পেরিফেরিয়াল কারণসমূহ
অভ্যন্তরীণ কানের স্ট্রাকচারগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফুলে উঠতে পারে। অভ্যন্তরীণ কানের অভ্যন্তরে সাধারণত পাওয়া যায় ছোট স্ফটিক বা পাথরগুলো বাস্তুচ্যুত হতে পারে এবং অর্ধবৃত্তাকার খালের মধ্যে ছোট চুলের কোষগুলিকে জ্বালা করে, ফলে ভার্চু হতে পারে। এটি সৌম্য প্যারোক্সিজমাল পজিশনাল ভার্টিগো (বিপিপিভি) হিসেবে পরিচিত।
ভেস্টিবুলার নার্ভের সংক্রমণ মাথা ঘোরা বা ভার্চির কারণ হতে পারে।
অভ্যন্তরীণ কানের মধ্যে এন্ডোলিফ্যাটিক সিস্টেমের কারণে রোগ হয়, ভার্চিয়াও যার মধ্যে শ্রবণশক্তি হ্রাস এবং টিনিটাস (কানে বাজানো) অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই তরল জমার কারণ অজানা। অ্যাসাস্টিক নিউরোমাস, ভেস্টিবুলার নার্ভের টিউমারগুলিও এই তিনটি লক্ষণের সঙ্গে উপস্থিত হতে পারে।
কেন্দ্রীয় কারণসমূহ:
দমন বা আঘাতজনিত মস্তিষ্কের আঘাতের সঙ্গে ভার্চির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। স্ট্রোকের কারণে ভার্টিগো এবং সমন্বয় হ্রাস হতে পারে।
একাধিক সেক্লরোসিস মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের টিউমারগুলো ভেস্টিবুলার মাইগ্রেন নামে পরিচিত এক ধরনের মাইগ্রেন মাথাব্যথার কিছু রোগী লক্ষণ হিসাবে ভার্টিগো বিকাশ করতে পারে।
* Benign paroxysmal positional vertigo (BPPV) এর থেকে মাথা ঘোরানো: ব্যক্তি যখন ঘুমায় বা পক্ষ পরিবর্তন করে, এতে কানের শিরাতে ক্যালসিয়াম কার্বনেটের বর্জ্য জমা হয়ে যায়। এই সমস্যা বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। * মেনিয়ার্স মেনিয়ারের রোগটি কানের অভ্যন্তরের দিকে ঘটে। এটি শ্রবণশক্তিকে প্রভাবিত করে এবং অতিরিক্ত শব্দ শোনা যায়, যার কারণে মাথা ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। * ভেস্টিব্যলার মাইগ্রেনুভেস্টিব্যলার মাইগ্রেনের কারণ অতি সামান্য। মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, এইসব লক্ষণ অতি সামান্য এবং সবারই হয়ে থাকে। তারা একে-অপরের সঙ্গে সংযুক্ত এবং স্বাধীন হয়। এই রোগীদের শ্রবণ জাতীয় কোনো সমস্যা হয় না। প্রায়শই উজ্জ্বল আলো এবং জোরে কণ্ঠ সহ্য করতে পারে না।
* লেব্রিথিনাইটিস রোগে ভারসাম্য শিরা একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়। যা এক কানে বেশি শ্রবণ এবং অন্য কানে বধিরতা সৃষ্টি করে। লক্ষণসমূহ ভার্টিগো অনেক রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ বটে। সাধারণত যেসব লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়
* অস্থির বা ভারসাম্যহীন বোধ করা
* পাহাড়, টিলা বা উঁচু জায়গা বা স্থানে গেলে মাথা ঘোরায় বা ভয় পাওয়া
* শ্রবণ ক্ষমতার হ্রাস বা কমে যাওয়া।
* পড়ে যাওয়ার অনুভূতি।
* প্রচ- মাথাব্যথা।
* মাথা ঘোরা চিকিৎসা।
* সাধারণ ভার্টিগোতে চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। যাদের ভার্টিগো লক্ষণ রয়েছে, চিকিৎসকরা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কমাতে ওষুধের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক দেন।
* গতিজনিত অসুস্থতা এবং বমি বমি ভাব প্রতিরোধের জন্য চিকিৎসক অ্যান্ট-ইমিটিস্ক অথবা অ্যান্টি-হিস্টামাইন ইত্যাদি ওষুধ দেন।
* ভেসিটুলে প্যারোসেমিয়া এটি হাড়ের অভ্যন্তরে চাপের কারণে ঘটে। এটার চিকিৎসা স্পান্টেনিয়াস নয়াসিটমগ্স ওইদ হায়পরভেন্টলেশন এর দ্বারা করে। এই চিকিৎসা হাড়ের ভিতরে ভারসাম্য শিরার চাপ থেকে মুক্তি দেয়। * কানের সমস্যার কারণে হলে নাক, কান ও হেড নেক সার্জন এর চিকিৎসা করে থাকেন।
লেখক: নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ও হেড-নেক সার্জন
চেম্বার: ENT Care Center
রোড-৩৫, হাউজ-৩৮/এ (সানমার টাওয়ার-২, ল্যাব এইড’র পাশে),
লেভেল-১৩, গুলশান-২, ঢাকা-১২১২।
মোবাইল-০১৭২৭-০৪৬৭১৫ , ০১৭১১-৫৪২৮০০