প্রথম পাতা
রাশিয়া থেকে অস্ত্র ক্রয়
বাংলাদেশকে নিরুৎসাহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র
মিজানুর রহমান
১৩ মে ২০২২, শুক্রবারবাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান সামরিক তথা নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদারে বদ্ধপরিকর যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটন সিরিজ আলোচনা চলছে। মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব সংলাপ, যাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সমরাস্ত্র ক্রয়ের গোপনীয়তা রক্ষার চুক্তি জিসোমিয়ার আপডেট ড্রাফট হস্তান্তর করা হয়। গত মাসে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ৮ম নিরাপত্তা সংলাপ, যেখানে জিসোমিয়া দ্রুত সই করা এবং ক্রয় সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। এদিকে ব্যাক টু ব্যাক দু’টি সংলাপের ধারাবাহিকতায় আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সংলাপ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ওই সংলাপে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র মিলিটারি টু মিলিটারি রিলেশনকে আরও জোরদার করার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই মনে করে বিদ্যমান বিশ্ব বাস্তবতায় দুই দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতা মজবুত করা জরুরি। উভয়ে প্রতিরক্ষা তথা নিরাপত্তাকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে জ্ঞান করে। সুনির্দিষ্টভাবে নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ফোরাম ‘নিরাপত্তা সংলাপ’-এর সাম্প্রতিক আলোচনার বিস্তারিত জানিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রিপোর্টে বলা হয়, উদ্বোধনী বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি বনি ডেনিস জেনকিনস কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তির সাল ২০২২-কে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘মাইলফলক’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
রোহিঙ্গা সংকট, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি: এদিকে বাংলাদেশের ঘাড়ে বোঝা হিসেবে আবির্ভূত রোহিঙ্গা সংকট, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করছে তা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সংলাপে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নিয়েও কথা হয়। রিপোর্ট বলছে, বৈঠকে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা’র স্বীকৃতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সংলাপে নেতৃত্ব দেয়া পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান না আসা পর্যন্ত মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেন। জবাবে মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতা মিয়ানমার জান্তার ওপর আরও কঠোর ব্যবস্থা আরোপের আশ্বাস দেন। গণহত্যার স্বীকৃতি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং এ সংকটের ভিকটিম বাংলাদেশের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বড় সমর্থন বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র সচিব। বৈঠকে প্রলম্বিত রোহিঙ্গা সংকটকে আঞ্চলিক তথা বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি চিহ্নিত করে উভয়ের তরফে এ সংকটের দ্রুত সমাধান কামনা করা হয়। বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তা ছাড়াও বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের মতো বাস্তব ও দীর্ঘমেয়াদি বিকল্প নিয়ে ভাবছে বলে জানানো হয়। সংলাপে মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে কল্পনা করেছে উল্লেখ করে ওয়াশিংটনের প্রতিনিধিরা স্বীকার করেন আন্তর্জাতিক আইন পরিবর্তন করে এমন কোনো চীনা প্রচেষ্টাকে বাধা দিবে আইপিএস। তবে বাংলাদেশ বলেছে, আইপিএস কারও প্রতিদ্বন্দ্বী না হলে এবং এটি অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিমূলক হলে এতে যোগদানে আপত্তি নেই বরং সহযোগী হবে ঢাকা। জবাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইন্দো-প্যাসিফিকের অর্থনৈতিক কাঠামো চূড়ান্ত হওয়া মাত্রই আগ্রহী দেশগুলোর সঙ্গে শেয়ার করা হবে।