ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

বিক্রমাসিংহে নতুন প্রধানমন্ত্রী

রাজাপাকসের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মানবজমিন ডেস্ক
১৩ মে ২০২২, শুক্রবার

কঠিন এক সময়ে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) দলের নেতা রণিল বিক্রমাসিংহে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করান প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে। রণিল বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দেয়ার বিরোধিতা করেছে দেশটির ধর্মীয় নেতারা। ওদিকে সদ্য বিদায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে, তার ছেলে নামাল রাজাপাকসে ও সহযোগীদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রাজধানী কলম্বোর এক আদালত। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডেইলি মিরর ও অন্যান্য বার্তা সংস্থা। এর আগে বুধবার সন্ধ্যায়  প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন রণিল বিক্রমাসিংহে। সেই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয় শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন রণিল। সোমবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে পদত্যাগ করলে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন অনিবার্য হয়ে পড়ে। তবে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তা নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে রাজনৈতিক দলগুলো। এই অচলাবস্থা ভাঙার চেষ্টা করেন প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া।

বিজ্ঞাপন
কিন্তু রণিল বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের বিরোধিতা করেছেন শ্রীলঙ্কার ধর্মীয় নেতারা। এ বিষয়ে কলম্বোর আর্চবিশপ কার্ডিনাল ম্যালকম রণজিৎ বলেছেন, পার্লামেন্টে বিক্রমাসিংহের কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। নিজের দলের একমাত্র এমপি তিনি। তাই তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হলে তা হবে বেআইনি। তিনি আরও বলেন, মহানায়েক  থেরা’রা চাইছেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হোক। তাদের সেই অনুরোধ শোনা উচিত প্রেসিডেন্টের। ভেনের‌্যাবল ওমালপে সোবিতা থেরো বলেছেন, জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়ার অধিকার নেই প্রেসিডেন্টের। জনগণ কখনো এই ধরনের প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাশা করে না। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী (রণিল বিক্রমাসিংহে) জনগণের সঙ্গে এর আগে প্রতারণা করেছেন। তিনি লেজেগোবরে করে ফেলেছিলেন। এবার প্রেসিডেন্টও মনে হচ্ছে একই পথে যাচ্ছেন। ভেনের‌্যাবল থেরো বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা যাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার কথা বলেছেন তাকেই মেনে নেয়া উচিত প্রেসিডেন্টের। বিরোধীদলীয় নেতার মাধ্যমে একজন নির্দলীয় ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী করা উচিত। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে তার আলোচনা করা উচিত। ওদিকে প্রেমাদাসা নিজেই এই দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রস্তুত বলে দাবি করেছিলেন। 
ওদিকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে, তার ছেলে নামাল রাজাপাকসে ও ১৫ জন ঘনিষ্ঠ মিত্রের বিরুদ্ধে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। বৃহস্পতিবার রাজধানী কলম্বোর একটি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশকে, সোমবারের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ হামলার তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে দেশটিতে ভয়াবহ এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাতে কমপক্ষে ৯ জন নিহত হন। বিভিন্ন শহরে ভয়াবহ ধ্বংসলীলা দেখা যায়। আদালতের একজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির দাবিতে আদালতে একটি আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট সেই দাবি অগ্রাহ্য করেছেন। কারণ, এখন পর্যন্ত যে কাউকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা আছে পুলিশের। ওদিকে পদত্যাগ করার আগে নিজের ছেলে নামাল রাজাপাকসে ও তার স্ত্রীকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছেন রাজাপাকসে। তিনি বুঝতে পারছিলেন বিপদ ঘনিয়ে এসেছে। তাই পুত্র ও পুত্রবধূকে বাঁচাতে তিনি আগেভাগেই সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে দেন। তারপর পদত্যাগ করেন। 
তার আগে রাজাপাকসে ও তার ঘনিষ্ঠ প্রায় তিন হাজার সমর্থক রাজধানীতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে আক্রমণ চালান। এর ফলে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়ে পড়ে সহিংস। প্রধানমন্ত্রীর অনুগত দাঙ্গাকারীরা তার বাসভবন থেকে বেরিয়ে আসে। এই হামলায় কমপক্ষে ২২৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ছিলেন বৌদ্ধ ভিক্ষু ও ক্যাথোলিক পুরোহিতও। হামলার পর দেশজুড়ে প্রতিশোধমূলক হামলা ছড়িয়ে পড়ে। রাজাপাকসের অনুগতদের কয়েক ডজন বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পরিস্থিতি যখন বেসামাল হয়ে ওঠে তখন পদত্যাগ করেন রাজাপাকসে। তার বাড়িতে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। এ সময় তাকে উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। তাও ঘরের  পেছনের দরজা দিয়ে বের করে নেয়া হয় তাকে। খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, তাকে রাখা হয়েছে ত্রিনকোমালি নৌ ঘাঁটিতে। সে খবর ছড়িয়ে পড়লে সেখানেও প্রতিবাদ জানাতে থাকে জনতা। এ অবস্থায় সেখান থেকেও তাকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে গুজব আছে। তবে মাহিন্দ রাজাপাকসে আসলে এখন কোথায় আছেন তা স্পষ্ট নয়। 
উল্লেখ্য, রণিল বিক্রমাসিংহে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির নেতা। ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি এই দলটি পরিচালনা করছিলেন। এর আগে তিনি ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৪, ২০০১ থেকে ২০০৪, ২০১৫ থেকে ২০১৮ এবং ২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তার জন্ম সম্পদশালী একটি রাজনৈতিক পরিবারে। ইউনিভার্সিটি অব সিলন থেকে সম্পন্ন করেছেন গ্রাজুয়েশন। ১৯৭২ সালে সিলন ল’ কলেজ থেকে এডভোকেট হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করেন। ১৯৭০’র দশকের মাঝামাঝি সক্রিয় রাজনীতি শুরু করেন। এবার শ্রীলঙ্কা যখন অর্থনৈতিক সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে, তখন তিনি দেশের দায়িত্ব কাঁধে নিলেন। সারা দেশে এক অস্থিরতা বিরাজ করছে। সরকারিভাবে দেশকে বিদেশি দাতাদের কাছে দেউলিয়া বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে হাত দিয়েছে সরকার। তাও প্রায় শেষের পথে। এমন কঠিন সময়ে দেশকে কতটুকু সামনে এগিয়ে নিতে পারবেন তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।

 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status