প্রথম পাতা
ডেসটিনির রফিকুলের ১২ হারুনের ৪ বছরের সাজা
স্টাফ রিপোর্টার
১৩ মে ২০২২, শুক্রবারগ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের দায়ে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনকে ১২ বছর এবং কোম্পানির প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদকে ৪ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম গতকাল এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো- অপারেটিভ সোসাইটির প্রায় ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের এ মামলায় ৪৬ আসামির সবার বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রফিকুল আমিনকে ১২ বছর কারাদণ্ড এবং ২০০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৩ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। হারুন-অর-রশীদকে ৪ বছর কারাদণ্ড এবং সাড়ে ৩ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। এক হাজার পৃষ্ঠার রায়ে বলা হয়, ডেসটিনির যেসব সম্পত্তি ও ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা ইতিমধ্যে অবরুদ্ধ করা হয়েছে, সেগুলো রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হলো।
আসামিদের কাছ থেকে আদায় করা জরিমানার টাকা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪৫ (বি) ধারা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ বাবদ ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সকল শেয়ারহোল্ডার এবং বিনিয়োগকারীদের সমান হারে ভাগ করে দিতে হবে। সেজন্য সরকারকে একটি কমিটি গঠন করে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে রায়ে। কমিটির চেয়ারম্যান হবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা, একজন উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক, একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট এবং সমবায় বিভাগের রেজিস্ট্রার। এই এমএলএম কোম্পানির এমডি রফিকুল আমীনকে এ আইনের সর্বোচ্চ সাজা ১২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হলেও গ্রুপের প্রেসিডেন্ট হারুনের সাজা কেন কম হলো, সেই ব্যাখ্যাও আদালত দিয়েছেন। বিচারক বলেন, হারুন-অর-রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুন-অর-রশিদ, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. দিদারুল আলম, জেসমিন আক্তার (মিলন), জিয়াউল হক মোল্লা ও সাইফুল ইসলাম রুবেল জামিনে আছেন। রফিকুল আমীন ও কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন কারাগারে রয়েছেন। রফিকুল আমীন প্রায় ১০ বছর ধরে কারাগারে আছেন।
দণ্ড পাওয়া অন্য আসামিরা মামলার শুরু থেকেই পলাতক। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে আছেন, ডেসটিনির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন, ফারাহ দীবা, সাঈদ-উর-রহমান, জমশেদ আরা চৌধুরী, ইরফান আহমেদ, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, শেখ তৈয়বুর রহমান, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসেন, মোসাদ্দেক আলী খান, আবদুল মান্নান, এসএম আহসানুল কবির, জুবায়ের হোসেন, আবুল কালাম আজাদ, মো. আকবর হোসেন সুমন, আজাদ রহমান, মো. সুমন আলী খান।
দণ্ড দেয়া হয়েছে শিরীন আকতার, রফিকুল ইসলাম সরকার, কাজী মো. ফজলুল করিম, মোল্লা আল আমীন, মো. মজিবুর রহমান, ড. এম হায়দারুজ্জামান, মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, মো. শফিউল ইসলাম, ওমর ফারুক, সিকদার কবিরুল ইসলাম, মো. ফিরোজ আলম, সুনীল বরণ কর্মকার, ফরিদ আকতার, আবদুর রহমান তপন, এস সহিদুজ্জামান চয়ন, সাকিবুজ্জামান খান, এসএম আহসানুল কবির, খন্দকার বেনজীর আহমেদ, এএইচএম আতাউর রহমান রেজা, একেএম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, মো. দেলোয়ার হোসেন, গোলাম কিবরিয়া মিল্টন, মো. আতিকুর রহমান ও মো. শফিকুল হককেও।
দুদকের উপ-পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ২০১২ সালের ৩১শে জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসিটিনির কর্তাব্যক্তিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রজেক্টের অর্থ আত্মসাতের দু’টি মামলা করেন।
তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৫ই মে দুদক আদালতে উভয় মামলার অভিযোগপত্র দেয়। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্লানটেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলার ১৯ জনকে আসামি করা হয়। হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমীন দুই মামলাতেই আসামি। অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ প্রজেক্টের নামে ডেসটিনি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিল ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে। ওই অর্থ আত্মসাতের ফলে সাড়ে ৮ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতির মুখে পড়েন। আর ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রজেক্টের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাত করা হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাড়ে ১৭ লাখ বিনিয়োগকারী। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেসটিনি গ্রুপের নামে ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কয়েকটি ছিল নামসর্বস্ব। আসামিরা প্রথমে প্রজেক্টের টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতেন, তারপর বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে তা স্থানান্তর করা হতো। দুদক ৩৪টি ব্যাংকে এ রকম ৭২২টি হিসাবের সন্ধান পায়, যেগুলো পরে জব্দ করা হয়। আত্মসাৎ করা চার হাজার ১১৯ কোটি টাকার মধ্যে ৯৬ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগও আনা হয় দুই মামলায়। এর মধ্যে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলাটির রায় হলো।