শিক্ষাঙ্গন
ঝড়ের রাতে বগুড়া থেকে ঢাকায় আসতে বাধ্য হলেন বাবা-মা
ছাত্রলীগ না করায় ঢাবি শিক্ষার্থীকে হলছাড়া করার হুমকি
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার
(১ বছর আগে) ২৫ অক্টোবর ২০২২, মঙ্গলবার, ৮:৩৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১০:২০ পূর্বাহ্ন
ছাত্রলীগের রাজনীতি না করে বামপন্থি সংগঠন করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থীকে মধ্যরাতে ৩ ঘণ্টা ধরে জেরা ও হল থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের ২ নেতার বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সামির সাদিক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত আহমদ আশরাফ জিয়া হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। তিনি হল শাখা সভাপতি মো. আজহারুল ইসলামের অনুসারী। আরেক অভিযুক্ত রিজভী হল ছাত্রলীগের পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক।
হেনস্তার পাশাপাশি ছেলে নিষিদ্ধ সংগঠন করে, না এলে পিটিয়ে পুলিশে দেয়া হবে- মধ্যরাতে ওই শিক্ষার্থীর বাবাকে ফোনে এমন ভয় দেখিয়ে ক্যাম্পাসে এসে ছেলেকে নিয়ে যেতে বলার অভিযোগও উঠেছে অভিযুক্ত এই ২ নেতার বিরুদ্ধে।
সোমবার দিবাগত রাত ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে। হঠাৎ ছেলে সম্পর্কে এ খবর শুনে ভয় পেয়ে যান তার অভিভাবকরা। ঘূর্ণিঝড়ের ভয় উপেক্ষা করে ভোরেই বগুড়া থেকে রওনা দিয়ে ওই শিক্ষার্থীর বাবা ও মা ক্যাম্পাসে চলে আসেন। ক্যাম্পাসে এসে বাবার চিন্তিত চেহারা ও মায়ের কান্না দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন ওই শিক্ষার্থীও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য তৈরি সবক’টি হল এক যুগ ধরে ছাত্রলীগের দখলে। ভিন্ন মতের কেউ হলে থাকতে গেলে তাকে নির্যাতন করার খবর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
ভুক্তভোগী সামির সাদিক বলেন, প্রথম বর্ষ থেকেই আমি হলে থাকি।
তবে অভিযোগটি অস্বীকার আহম্মদ উল্লাহ বলেন, ঘটনার সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। সামিরের পরিবারকে আমি ঘটনাটি জানাইনি। রুমে অন্য যারা ছিল, হয়তো তারাই জানিয়েছে। আমরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এ জন্য আমাদের নামে পরিকল্পিতভাবে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। সামিরের কাছে ছাত্র ফেডারেশনের বই দেখে বিষয়টি জানতে চেয়েছি। তার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, দুর্ব্যবহার কিংবা হলছাড়ার হুমকি দেয়ার প্রশ্নই আসে না।
সামিরের বাবা এমতাসুর রহমানর বলেন, পৌনে ১টার দিকে আহম্মদ উল্লাহ নামেই একজন পরিচয় দিয়ে আমাকে কল করেছিল। কল করে বলেছে, আপনার ছেলে নিষিদ্ধ সংগঠন করে। তার কাছে বই পাওয়া গেছে। হলের রাজনৈতিক বড় ভাইরা জানতে পারলে তাকে মেরে পুলিশে দেবে। দ্রুত ক্যাম্পাসে এসে তাকে নিয়ে যান। এ বিষয়ে আরেক অভিযুক্ত রিজভীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সামির ও ছাত্র ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষকে অবগত করেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রাধ্যক্ষ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে সামিরের হলে থাকা নিয়ে কোনো ধরনের অসুবিধা হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন বলে মানবজমিনকে জানিয়েছেন ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমান হোসেন।
এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বিল্লাল হোসেন বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত আছি। লিখিত অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখবো।