দেশ বিদেশ
নারায়ণগঞ্জে ঈদগা দখল ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর ক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে
১৩ মে ২০২২, শুক্রবারএবার সরকারি জমিতে নির্মিত ঈদগা উচ্ছেদ করে মার্কেট ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন আলোচিত-সমালোচিত নারায়ণগঞ্জের আলীরটেক ইউনিয়নের সেই চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ওরফে ‘ঘি’ জাকির। এতে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে। ইউপি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ‘নৌকা’ প্রতীক ছাড়া নির্বাচন করলে আরও বেশি ভোট পেতেন- এমন বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হন জাকির হোসেন।
গত ১১ই নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই আওয়ামী লীগ ও নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে কারণ দর্শাতে নোটিশ দিয়েছিল। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার তিনি সরকারি জমিতে থাকা রাতের আঁধারে ঈদগাহ উচ্ছেদ করতে চারপাশে থাকা দেয়াল ও মিম্বর ভেঙে দিয়েছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, চেয়ারম্যান জাকির তার লোকজনের সহায়তায় ইউনিয়নের ডিক্রীরচরে সরকারি জমিতে গড়ে তোলা কেন্দ্রীয় ঈদগাহের চারপাশের দেয়াল গত শনিবার রাতের অন্ধকারে বুল ডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। সেখানে চেয়ারম্যানের অনুগত লোকদের জন্য মার্কেট ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এদিকে ঈদগাহের বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে ফেলায় আলীরটেকবাসী হতবাক। তাদের মাঝে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, বিগত ২ যুগ ধরে এই ঈদগাহে স্থানীয়রা এখানে ঈদের নামাজ আদায় করে আসছেন। ঈদগাহের উন্নয়নে সরকার থেকে ১০ লাখ টাকা অনুদানও দেয়া হয়। সেই অনুদানের টাকায় আগের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান ঈদগাহের চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল ও একটি মিম্বর তৈরি করেন। কিন্তু চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সেই ঈদগা মাঠ দখল করে মার্কেট নির্মাণের পাঁয়তারা করছেন।
ঈদগাহের চারপাশের দেয়াল ও মিম্বর ভেঙে ফেলা সম্পর্কে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে আলীরটেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, এটা তো ঈদগাহ না। এইটার ভেতর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। নাচ-গান হয়, খেলা-ধুলা হয়, আবার গরু-ছাগল, ভেড়া-বরকি, কুকুরও এর ভেতর বিচরণ করে। আবার মাঝে মাঝে নামাজও হয়। আবার কিছু পণ্য আছে এখানে এনে শুকানো হয়। আর এটা (ঈদগাহ) সরকার অনুমোদিত না, পঞ্চায়েতেরও না।
ঈদগাহের জমিটি সরকারি স্বীকার করে জাকির হোসেন আরও বলেন, অতীতে শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে আসা একটা অনুদানের টাকায় এখানে চারপাশে দেয়াল দেয়া হয়েছিল। সেটা স্কুলে না দিয়ে এখানে করছে। তিনি বলেন, আমাদের ইউনিয়নটায় গরিব মানুষের সংখ্যা বেশি। আমরা চাচ্ছি এখানে একটা মার্কেট ও কমিউনিটি সেন্টার করলে গ্রামের মানুষের কিছু আয়ের ব্যবস্থা হবে। আর আমাদের কবরস্থানের পাশে নতুন একটা ঈদগাহ করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঈদগাহের দেয়াল ভাঙার বিষয়টি আমার নলেজে আছে। তবে তিনি স্বীকার করেন ঈদগাহের জমিটি সরকারি। তাহলে আপনি কেন মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি না, গ্রামবাসী মার্কেট নির্মাণ করবে।
ওদিকে এলাকাবাসী জানায়, ঈদগাহে সবসময় নামাজ হয় না। সব ঈদগাহেই বছরে দুই ঈদের নামাজ হয়। আর বাকি সময় খালিই থাকে। তাই বলে কেউ সেটাকে দখল করে নিবে এটা হতে পারে না। যাতে এই ঈদগাও কেউ দখল করতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে সদর উপজেলার ইউএনও রিফাত বিন ফেরদৌস বলেন, সরকারি জমিতে থাকা ঈদগাহ চাইলেই কেউ অপসারণ বা অন্য কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবেন না। এজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন বা প্রকল্প থাকতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা আইন না জেনেই অনেক কিছু করার চেষ্টা করেন। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।