শরীর ও মন
গর্ভাবস্থায় পায়ুপথের রোগ ও করণীয়
অধ্যাপক ডা. এসএমএ এরফান
১৪ অক্টোবর ২০২২, শুক্রবারগর্ভাবস্থায় অনেক মায়েদের পায়ুপথের সমস্যা হয়ে থাকে। সমস্যাগুলো অনেক সময় জটিল হয় কিন্তু সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে মা ও শিশু উভয়ই ঝুঁকিমুক্ত ও সুস্থ থাকতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় মায়ের পায়ুপথের সমস্যা সাধারণের তুলনায় বেশি হয় কেন?
জরায়ুতে স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা বড় হতে থাকলে পাশের অঙ্গগুলো (কোলোন, রেকটাম ও পায়ুপথের বাকি অংশগুলো আছে) সেগুলোর ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া আছে কিছু হরমোনাল সমস্যা। এই সময় দুটি মহিলা হরমোন এসট্রোজেনো প্রজেস্ট্রেরনের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এ দু’টো বিষয় মিলে সাধারণত পায়ুপথের সমস্যাগুলো তৈরি হয়। এর মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যাটি অন্যতম। কারণ ইসট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরনের প্রভাবে কোলনের নড়াচড়া কমে যায়। আবার প্রেগনেন্সির শেষের দিকে বাচ্চার মাথা এবং শরীর কোলন ও রেকটামের উপর চাপ দেয়। স্বাভাবিকভাবে সেখানে একটা বাধা তৈরি হয়। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য নিশ্চিতভাবে বেড়ে যায়।
চিকিৎসা:
গর্ভাবস্থায় প্রথম পরামর্শ হবে রোগী যেন তার মল ত্যাগের অভ্যাস (বাউয়েল হেবিট) স্বাভাবিক রাখেন। এই সময় স্বাভাবিক প্রবণতা হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া। এই কোষ্ঠকাঠিন্য না হওয়ার জন্য খাবার দাবার ও ওষুধ দিয়ে অন্ত্রকে স্বাভাবিক রাখতে হবে। তা হলে সেখানে চাপটা কম পড়বে। পাইলস হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও কমে যাবে। গর্ভাবস্থায় মায়ের রক্ত ঝরলে সেখান থেকে শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এই অবস্থায় মাকে অবশ্যই একজন কোলোরেক্টাল সার্জনের পরামর্শ নিতে হবে। প্রথমে যদি কোনো ওষুধপত্রের মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে নিয়ন্ত্রণ করবেন। এসব পাইলসের একটা সুবিধা হলো, অনেকগুলো সন্তান প্রসবের পর চলে যায়। আর যদি খুব বেশি রক্তপাত হয়, ওষুধপত্রের মাধ্যমে ভালো না হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে অস্ত্রোপচার করে নিতে হবে। আর এখন অস্ত্রোপচারগুলো অনেক নিরাপদ রক্তপাতের তুলনায়। কারণ এখন আমরা অপারেশন করছি লেজারের সাহায্যে যেখানে কোনো কাটা-ছেঁড়া নেই, রক্তপাত নেই, পায়ুপথের ক্ষত বা ব্যথা নেই। আর যাদের আগে থেকে পাইলস রয়েছে সেক্ষেত্রে উত্তম হলো গর্ভধারণের আগে অপারেশন লাগলে অপারেশন করিয়ে নেয়া। গর্ভাবস্থায় পাইলস হলে প্রচুর পরিমাণ রক্তক্ষরণ হতে পারে। এখানে থ্রোম্বোসিস, গ্যাঙগ্রিন হতে পারে। রক্তক্ষরণ হলে সেটা মা এবং শিশু উভয়ের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
গর্ভবতী মায়ের খাবার:
সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য হয় আঁশ জাতীয় খাবার না খাওয়ার কারণে। তাই আঁশ জাতীয় খাবার খেতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো প্রেগনেন্সির সময় এমনিতেই খাওয়া যায় না। বমি বমি ভাব, এসিডিটি খুব বেশি হয়। তাই খাবারে মল নরম না হলে ওষুধ খেতে হবে। এ সময় পানি বেশি খেতে হবে। অর্থাৎ মা ও শিশুকে সুস্থ রাখতে হলে পায়ুপথের অথবা অন্ত্রের কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই একজন কলোরেক্টাল সার্জনের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসা নিতে হবে। অপারেশনজনিত চিকিৎসাকে অনেকেই ভয় পান কিন্তু এসব এখন অনেক রোগীবান্ধব। আর সব সময় মনে রাখতে হবে চিকিৎসার চাইতে রোগ অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।
লেখক: পথিকৃৎ কলোরেক্টাল সার্জন, বাংলাদেশ।
চেম্বার: পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি. (শ্যামলী শাখা), মিরপুর রোড, মোহাম্মদপুর (কিডনি হাসপাতালের বিপরীতে)।
হেল্পলাইন: ০১৮৬৫৫৫৫৫১১, ০১৮৬৫৫৫৫৫০০ ফেসবুক: Prof.Dr.SMA Erfan.