প্রথম পাতা
পালাবার পথ বন্ধ
মানবজমিন ডেস্ক
১১ মে ২০২২, বুধবারবিক্ষোভে উত্তাল শ্রীলঙ্কা, মন্ত্রীদের বাড়িতে আগুন, হামলা, বিমানবন্দরের পথ অবরোধ ছবি: ডেইলি মিরর, সিএনএন, রয়টার্স
শ্রীলঙ্কায় জ্বলছে মন্ত্রী-এমপিদের বাড়ি, বিমানবন্দর ঘেরাও বিক্ষোভকারীদের, সংঘর্ষে নিহত ৮, দেখামাত্র গুলির নির্দেশ
জ্বলছে শ্রীলঙ্কা। দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সদ্য পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসের বাড়ি জ্বলছে। জ্বলছে মন্ত্রী, এমপিদের বাড়ি। প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া ও মাহিন্দ রাজাপাকসের পৈতৃক বাড়িতে আগুন দিয়েছে জনতা। রাজাপাকসেরা ও এমপিরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সেজন্য বিমানবন্দর ঘেরাও করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। ফলে তাদের জন্য এখন দেশ ছেড়ে পালানোর পথও বন্ধ। ওদিকে সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছে সরকার। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদেরকে কারফিউয়ের সময় দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যারা সরকারি সম্পত্তি বা কোনো ব্যক্তির ক্ষতি করার চেষ্টা করবে তাদেরকে গুলি করতে হবে।
শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে হামলার উস্কানি দেয়ার অভিযোগে মাহিন্দ রাজাপাকসের গ্রেপ্তার দাবি করেছে বিরোধীরা। এরই মধ্যে সহিংসতায় কমপক্ষে ৮টি তাজা প্রাণ ঝরে গেছে।
অসহায় দেশবাসী দীর্ঘদিন সরকারি অব্যবস্থার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছিলেন। এরই মধ্যে সোমবার বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মাহিন্দ রাজাপাকসের সমর্থকরা সহিংস হামলা চালায়। এ থেকেই ভয়াবহ সহিংসতা শুরু হয় সেখানে। শান্তিপ্রিয় বিক্ষোভকারীরা সহিংস হয়ে ওঠে। হামলা-পাল্টা হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে আটজন।
এর আগে মাহিন্দ রাজাপাকসে টুইটারে জানান, প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসের কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তার এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে গেছে মন্ত্রিপরিষদ। ফলে বর্তমানে দেশ চালাচ্ছেন তারই ছোট ভাই, প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে। জনগণ তাদের ওপর হামলার জবাবে শাসক দলের এমপিদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিতে শুরু করেছে। পার্টি অফিসগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিবিসি জানিয়েছে, ক্ষুব্ধ জনতা পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসে এবং সরকারদলীয় কয়েকজন এমপি’র বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। মঙ্গলবার হাজার হাজার বিক্ষোভকারী মাহিন্দ রাজাপাকসের সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রিজের প্রধান গেট ভাঙার চেষ্টা করে। তখন রাজাপাকসেকে বাঁচাতে ভারী অস্ত্রসজ্জিত সেনা মোতায়েন করা হয়। ওই সেনারাই বাড়ির ভেতরের সবাইকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা বাড়িতে আগুনও লাগিয়ে দেয়। বাড়িটিতে কমপক্ষে ১০টি পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। তবে মাহিন্দ রাজাপাকসে ও তার পরিবার নিরাপদে আছে। বিমানবন্দর ঘেরাও করার ফলে তাদের দেশ ছেড়ে পালানোর পথ বন্ধ। সর্বশেষ জানা গেছে, তারা অবস্থান করছেন ত্রিনকোমালি নৌঘাঁটিতে। সে খবর পেয়ে বিক্ষোভকারীরা সেখানেও পৌঁছে গেছে। ওই ঘাঁটির বাইরে বিক্ষোভ করছিল তারা।
বিক্ষোভকারীরা এখন প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর প্রতিবাদে সোমবার গভীর রাতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা সরকার সমর্থক এবং সরকারদলীয় এমপিদের লক্ষ্য করে হামলা চালাতে শুরু করেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাজাপাকসে ভাইদের পৈতৃক বাড়ি, বিভিন্ন মন্ত্রী এবং এমপিদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। যেসব মন্ত্রীদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তার মধ্যে আছেন মন্ত্রী সানাৎ নিশান্তাও। হাম্বানটোটায় রাজাপাকসে পরিবারের নিজস্ব একটি বাড়ি, যাকে জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল, সেটিও পুড়িয়ে দেন বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বাড়িগুলো ঘিরে আগুনের লেলিহান শিখা ঘিরে মানুষজন উল্লাস করছে। প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনের চারপাশের এলাকাতেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা কিংবা নেতারা যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে সে জন্য বিমানবন্দরে যাওয়া এবং আসার সড়কগুলোতে লাঠি এবং রড নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেছে আন্দোলনকারীরা। বিবিসি জানিয়েছে, স্বাভাবিক সময়ে ওই রাস্তাগুলোতে পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর যেমন উপস্থিতি দেখা যায়, এখন তাও দেখা যাচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে সোমবার দেয়া কারফিউর সময় বাড়ানো হয়েছে। জননিরাপত্তা অর্ডিন্যান্সের ১৬ ধারা মেনে যে কারফিউ দেয়া হয়েছিল তা মঙ্গলবার সকাল ৭টায় তুলে নেয়ার কথা ছিল। পরে তা বাড়িয়ে বুধবার সকাল ৭টা পর্যন্ত করা হয়েছে। কারফিউ চলাকালে কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবেন না। তবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বের হওয়া যাবে। শ্রীলঙ্কার পর্যটন বিভাগ বলেছে, বেড়াতে যাওয়া বিদেশিদের ট্র্যাভেল ডকুমেন্টকে তাদের কারফিউ পাস হিসেবে গণ্য করা হবে। চলাচলের সময় তাদেরকে পাসপোর্ট বা উড়োজাহাজের টিকিট দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশিদেরকে তাদের হোটেলের আশপাশে থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
মাহিন্দ রাজাপাকসেকে গ্রেপ্তার দাবি
সোমবার শান্তিপ্রিয় বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালানোর জন্য বিরোধী দলগুলো অভিযুক্ত করছে মাহিন্দ রাজাপাকসেকে। তামিল মূল দলের এমপি এম এ সুমান্থিরান বলেছেন, মাহিন্দ রাজাপাকসেকে অবশ্যই গ্রেপ্তার করতে হবে এবং তাকে আইনের অধীনে বিচার করতে হবে। একই রকম মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা এবং প্রধান বিরোধী দল সামাগি জনা বালাওয়েগায়ে’র নেতা রণজিৎ মাদ্দুমা বন্দরা। সিরিসেনা বলেছেন, সহিংসতাকে উৎসাহিত করার জন্য মাহিন্দকে অবশ্যই গ্রেপ্তার করা উচিত। শান্তিপ্রিয় বিক্ষোভকারীদের ওপর এই হামলার কোনো কারণ নেই।
প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করলে দায়িত্ব নেবে এসজেবি: সমাগি জনা বালাওয়েগ্যায়া (এসজেবি) দলের এমপিরা মঙ্গলবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, প্রেসিডেন্ট যদি তার পদত্যাগ করেন তাহলে দেশের দায়িত্ব নেবেন তারা। মিডিয়ার কাছে এই তথ্য দিয়েছেন দলটির এমপি হর্ষাণা রাজাকারুনা। তিনি বলেন, যদি প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেন, তাহলে সরকারের দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন তাদের বেশির ভাগ এমপি। এরই মধ্যে এ দলটি নিরপেক্ষ গ্রুপ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা একই টুইট বার্তায় বলেছেন, তার দল যেকোনো দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। তিনি বলেছেন, বর্তমান সংকট সমাধানে আমাদের নিরঙ্কুশ সমর্থন সব সময়ই আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এবং রাজস্ব বিভাগের সচিবের সঙ্গে চূড়ান্ত দফায় ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।