প্রথম পাতা
বিমানবন্দর সড়কে দিনভর দুর্ভোগ
স্টাফ রিপোর্টার
৩ অক্টোবর ২০২২, সোমবারযানজটে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা। ছবিটি ফেসবুক থেকে নেয়া
ময়মনসিংহ থেকে ভোর ৫টায় বাসে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। সকাল ৮টায় টঙ্গী স্টেশন রোডের সামনে পৌঁছানোর পর তার বাস আর একগজও এগোয়নি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাস থেকে নেমে হাঁটা দেন। কাঁধে তার ব্যবসায়িক পণ্যের স্যাম্পলের ব্যাগ। ধীরে ধীরে হেঁটে ১১টায় খিলক্ষেত আসেন। সেখানে এসে ব্যাপক প্রতিযোগিতার পর একটি লোকাল বাসে উঠতে সক্ষম হন। রোববার সকালে যারা গাজীপুর, ময়মনসিংহ কিংবা উত্তরবঙ্গ থেকে উত্তরা হয়ে ঢাকায় ঢোকার চেষ্টা করেছেন তাদের এই দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। অপরদিকে সকালে যারা মহাখালী থেকে এয়ারপোর্ট রোড হয়ে উত্তরার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তাদের এয়ারপোর্ট রোডেই দুপুর পার হয়েছে। গতকাল দিনভর এয়ারপোর্টের চিত্র ছিল এ রকম। বিআরটি প্রকল্পের কারণে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় রাজধানীর এই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক।
বাড্ডা থেকে সকাল ৮টায় উত্তরায় অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী পিংকি। খিলক্ষেত আসার পর যানজটের কারণে আর এগোতে পারেননি। উপায়ন্তর না পেয়ে বাসায় ফেরার পথ ধরেন। পিংকি অভিযোগ করেন, এয়ারপোর্ট রোডে প্রায় প্রতিদিনই যানজটে পড়তে হয়। কখনই সময়মতো অফিসে পৌঁছানো যায় না। রোববারের যানজট গত কয়েক মাসের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সকাল ১১টার দিকে এয়ারপোর্ট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কর্দমাক্ত অবস্থায় বিমান যাত্রীরা এয়ারপোর্টে ঢুকছেন। কারও মাথায় ব্যাগ, কারও ঘাড়ে ট্রলি। হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট গোটানো। ফ্লাইট ধরার জন্য হন্যে হয়ে ছুটছেন। যানজটে তাদের গাড়ি আটকা। তাই উপায়ন্তর না পেয়ে গাড়ি ফেলেই এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে তারা ছুটছেন। অপরদিকে যারা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় অবতরণ করেছেন তারাও গাড়ির অভাবে এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে পারছেন না। এয়ারপোর্ট থেকে বনানী পর্যন্ত মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে গণপরিবহনের অপেক্ষায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর উত্তরা-বিমানবন্দর সড়কে গত কয়েকদিন ধরেই অসহনীয় যানজট। একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকা ও বেহাল রাস্তার কারণে এই যানজট বলে দাবি ট্রাফিক বিভাগের। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা জানান, বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে। কাজ করতে গিয়ে সড়কের বিভিন্ন অংশে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত ও খানাখন্দ। এরমধ্যে শনিবার রাতের বৃষ্টিতে সেসব গর্ত ও খানাখন্দে পানি জমেছে। এতে ঠিকমতো যানবাহন চলাচল করতে না পারায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন অংশে লেন সংকোচন হয়ে পড়ায় যান চলাচলে ধীরগতি তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে ‘চেরাগআলী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বিকল্প লেন তৈরি করেনি বিআরটি।
মূল সড়কের নিচ দিয়ে পুরো অংশে ঢালাই করেনি। বিআরটি প্রকল্পের কাজের কারণে সড়কের অনেক স্থানে গর্ত তৈরি হয়েছে। ওসব গর্তে চাকা পড়ে আরও বড় হয়েছে। পাশাপাশি সড়কের পাশের ড্রেনেজে ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। আপ্রাণ চেষ্টা করেও যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না পুলিশ। গতকাল দুপুর ১টার দিকে দেখা গেছে, পানির পাম্প দিয়ে সড়কের জলাবদ্ধতা দূর করার চেষ্টা করছে পুলিশ। বিমানবন্দরের আশপাশের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে এভাবেই যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছিল। উত্তরা থেকে মোহাম্মদপুর রুটে চলাচলকারী ভূঁইয়া পরিবহনের চালক মাসুম বলেন, রাস্তার অবস্থা এতই খারাপ যে ১ ঘণ্টার পথ যেতে ৩ ঘণ্টা লাগছে। আগে দিনে চারবার আপ-ডাউন করা যেতো। এখন দুই-তিনবার ট্রিপ দেয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। যাত্রীরাও বিরক্ত এই পথের।
এদিকে বৃষ্টির কারণে বিজয় সরণি থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত সড়কও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দুই ধারেই বড় বড় ড্রেন খনন করা হয়েছে। কিছু অংশে কাজ শেষ হলেও সড়কগুলো মেরামত করা হয়নি। ফলে প্রায়শই এই সড়কে দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে যানবাহন ও পথচারীরা। কাওরান বাজারের একজন ব্যবসায়ী বলেন, রাস্তায় গর্তের কারণে মাঝেমধ্যেই গর্তের মধ্যে মোটরসাইকেল পড়ে যায়। পথচারীরাও পিছলে পড়ছেন। মেট্রো রেলের কারণে এই সড়কটি বেশ কয়েকমাস ধরে চলাচলের উপযুক্ত না। তারপর অপরিকল্পিত খোঁড়খুঁড়ি ভোগান্তির সৃষ্টি করছে। ফুটপাথগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। হাঁটার মতো অবস্থা নেই এসব এলাকায়।