ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শরীর ও মন

ত্বকের রোগ ক্ষেত্রবিশেষে ক্যানসারেরও লক্ষণ

ডা. এসএম বখতিয়ার কামাল
২ অক্টোবর ২০২২, রবিবার
mzamin

প্রতীকী ছবি

কিছু কিছু ত্বকের রোগ অবহেলায় মারাত্মক  সমস্যা হতে পারে।  এমনি এক ধরনের  ত্বকের রোগ হলো অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিকানস। এই রোগটি ক্যানসারের লক্ষণও হতে পারে। দেখা গেছে,  কিছু ক্ষেত্রে এটি বিনাইন, কয়েকটি ক্ষেত্রে ম্যালিগন্যান্ট। তাই  রোগটিকে জানা ও সতর্ক হওয়া  অতি প্রয়োজন। 

রোগের ধরন

 কালো আস্তরণ পড়ে যায় চামড়ার ওপর। দেহের অন্য অঙ্গের তুলনায় চামড়াটা বেশ পুরু হয়। বিশেষ করে ঘাড়,  স্তনের নিচে (ওজন ভারী মহিলাদের) এবং আর্মপিটে সাধারণত এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এই রোগটি বংশানুক্রমিক ভাবেও হতে পারে। অনেকেই মনে করেন, ত্বকে কালো আস্তরণ পড়ার উৎস মেলানিন। এই রোগের ক্ষেত্রে সেটা একেবারেই ঠিক নয়।

বিজ্ঞাপন
মেলানোসাইট প্রলিফারেশন বা মেলানোসাইট থেকে মেলানিন বেরিয়ে ত্বকে মিশেছে এর কোনোটাই নয়। অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিকানসের ক্ষেত্রে মেলানিনের পরিমাণে তারতম্য ঘটে না। এক্ষেত্রে এপিডার্মিস কয়েকগুণ বেশি পুরু হয়ে যায়। সেই জন্য ত্বকে ওই কালো আস্তরণ পড়ে। 

প্রকারভেদ 

বংশানুক্রমিক কারণে ত্বকে এই সমস্যা তৈরি হতে পারে। পরিবারে কারও না কারও থেকে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে রোগ ছড়াচ্ছে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে দেখা যায়, অস্বাভাবিক বেশি ওজনের ব্যক্তিদের এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে ত্বকে। সেক্ষেত্রে এটিকে বলা হয় সিউডো বা ছদ্ম অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিকানস। স্থূলকায় ব্যক্তিদের সাধারণত ঘাড়ের দু’দিকে বা দু’দিকের আর্মপিটে এটি হতে পারে। এটিকে বলা হয় বাইল্যাটারাল অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিকানস। আবার এক দিকেও হতে পারে। সাধারণত বেশি ওজনের মানুষদের চামড়া পুরু হওয়ায় আলো ঠিকমতো ত্বকের গভীরে প্রবেশ করতে পারে না। সে কারণেই কালো আস্তরণ তৈরি হয়। 

ক্যানসারের লক্ষণ 

কিডনি, ইউরিনারি ব্লাডার, বাইলডাক্ট, থাইরয়েড, ইসোফেগাস, ব্রঙ্কাস, রেকটামের ক্যানসারের একটি লক্ষণ হলো অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিকানস। সেক্ষেত্রে তখন এটি ম্যালিগন্যান্ট। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরাই এই লক্ষণ দেখে প্রাথমিক ভাবে ক্যানসার সন্দেহ করেন এবং সংশ্লিষ্ট অঙ্গের ক্যানসার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ  নিতে অনেক সময় রেফার করেন। এ ছাড়া এই ধরনের ম্যালিগন্যান্সি তৈরি হলে, হাতের তালুতেও কালো ছোপ তৈরি হয়। যাকে বলা হয় ট্রিপ পাম। সাধারণ অ্যাকানথোসিসের চেয়ে ম্যালিগন্যান্ট অ্যাকানথোসিসের বৈশিষ্ট্য খানিক আলাদা। ম্যালিগন্যান্ট হলে এটি খুব তাড়াতাড়ি ছড়ায় এবং শরীরের ভাঁজে আবদ্ধ থাকে না। সামনের দিকের ত্বকেও ছড়িয়ে পড়ে। থাইরয়েডের জন্য যাদের ওষুধ খেতে হয় বা পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা রয়েছে, তাদের এই চর্মরোগ দেখা যায়। হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় এই রোগগুলিতে। 

চিকিৎসা 

* বিভিন্ন ধরনের ময়শ্চারাইজার দেওয়া হয়। আবার ওজন ভারী ব্যক্তি যদি অনেকটা ওজন কমিয়ে ফেলতে পারেন, তবে এই আস্তরণও অনেক হালকা হয়ে যায় বলে মত চিকিৎসকদের। * এক্ষেত্রে ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার না করলেই ভালো। * ওজন বেশি, অ্যাকানথোসিস রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ইনসুলিন রিসেপ্টর টেস্ট করা হয়। অর্থাৎ এদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাদের জন্য ডায়াবেটিসের ওষুধ দেওয়া হয়, যা অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিকানসের ক্ষেত্রে ভালো কাজ দেয়। যে কোনো রোগের ক্ষেত্রেই সজাগ থাকা এবং সময়মতো পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। আর এ রোগটি হলে তো চিকিৎসা জরুরি।

 

 লেখক: চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ ও চিফ কনসালট্যান্ট, কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার।

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

   

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status