অনলাইন
সংঘর্ষের পর থমথমে ইডেন ক্যাম্পাস, আতঙ্কে হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা
হাসনাত মাহমুদ
(১ বছর আগে) ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, রবিবার, ১০:২৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৩১ অপরাহ্ন
গতকাল থেকেই উত্তপ্ত রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ইডেন কলেজ। সাম্প্রতিক সময়ে ইডেন কলেজ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিয়োগ বাণিজ্য ও নানা অপকর্মের বিষয়ে সাংবাদিকদের তথ্য দেয়ার অভিযোগে জান্নাতুল ফেরদৌস নামে এক ছাত্রলীগ নেত্রীকে হেনস্তা ও মারধর থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। এর প্রতিবাদে গতকাল রাতেই শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ক্যাম্পাসে মিছিল ও স্লোগান দেন। এ সময় তারা ইডেন ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার বহিষ্কারের দাবি তোলেন। পরে শনিবার গভীর রাতে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে আসেন কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য। রাত থেকেই ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলেন ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেত্রী।
আজ সকালে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় দুই সহ-সভাপতি বেনজির হোসেন নিশি ও তিলোত্তমা ভট্টাচার্যকে নিয়ে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে সকালে কলেজ ছাত্রলীগ কমিটির বড় একটি অংশ শীর্ষ দুই নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য নানা অপকর্মের অভিযোগ তুলে রিভা ও রাজিয়া সুলতানাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন ছাত্রলীগের ২৫ নেত্রী। এসময় তারা তদন্তের দায়িত্বে থাকা দুই কেন্দ্রীয় নেত্রীর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাদের দাবি তদন্তের দায়িত্বে থাকা দুই জনই কলেজ শাখা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে নানা ধরণের সুবিধা ভোগ করে থাকেন।
পরে শনিবার থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনা নিয়ে ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা বিকালে সংবাদ সম্মেলন করতে আসেন।
দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত তামান্না জেসমিন রিভাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কলেজ প্রশাসন এম্বুলেন্স আনলে রিভার বিদ্রোহীরা অ্যাম্বুলেন্সকে বাধা দেয়। তাদের দাবি রিভা আহত হয়নি। সহানুভূতি পাওয়ার জন্য সে এখন 'ভণিতা' করছে। পরে বিদ্রোহীদের তোপের মুখে তাকে এম্বুলেন্স ছাড়াই ক্যাম্পাস থেকে বের করা হয়। পাঁজাকোলা করে তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় তার আশেপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও শিক্ষক ঘিরে রেখেছিল। তাকে গেটের বাহিরে বের করার পর উল্লাসে ফেটে পড়ে রিভার বিদ্রোহীরা। এ সময় রিভার কয়েকজন অনুসারীকে হেনস্তা করে গেট থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে পুলিশি পাহারায় ক্যাম্পাস থেকে কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানাকেও সরিয়ে নেয় কলেজ প্রশাসন।
এ বিষয়ে বিদ্রোহী গ্রুপের নেতৃত্বদানকারী ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা পারভিন চৌধুরী বলেন, রিভা ও রাজিয়া সংবাদ সম্মেলন করতে এসেছেন। কিন্তু তাদের সেই সংবাদ সম্মেলনে হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগীদের কেউ ছিল না। পরে আমরা সেই সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের বসাতে গেলে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আমাদের তিনজন আহত হয়েছেন। তারা হলেন- শেখ সানজিদা, সুষ্মিতা ও স্বর্ণালি।
দুগ্রুপের সংঘর্ষের পর ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। এ সময় অনেক শিক্ষার্থীকে ব্যাগ লাগেজ নিয়ে হল ছাড়তেও দেখা যায়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসের প্রশাসন বলতে মূলত ছাত্রলীগের নেত্রীদের বোঝায়। তাদের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে আরো খারাপ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছি। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত হলে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।