প্রথম পাতা
এনটিআরসিএ’র উদাসীনতায় ৪০০০ চাকরি প্রত্যাশী বিপাকে
পিয়াস সরকার
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, সোমবারচাকরিতে প্রবেশের সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা। আছে সকল যোগ্যতা। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)’র উদাসীনতায় চাকরিতে যোগ দেয়া হচ্ছে না তাদের। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশে দেরি হওয়ায় অনেকের বয়স ৩৫ পেরিয়ে গেছে। তিন বছর ধরে অপেক্ষায় তারা। দাবি তুলেছেন অক্টোবরেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের। এই দাবি না মানা হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। এনটিআরসিএ গোটা দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে প্রতি বছর শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ, যোগ্যদের মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণ এবং শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে থাকে। কিন্তু পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও ১৬তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের অপেক্ষা ফুরোচ্ছে না। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও প্রকাশই হয়নি গণবিজ্ঞপ্তি।
এরপর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয় এই বছরের ১৭ই অক্টোবর। ভাইভায় দীর্ঘ সময় লাগা ও মাত্র সাত দিনের ভাইভা বাকি থাকায় ১৬তমরা তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। চাকরিপ্রত্যাশীরা বলছেন, প্রিলিমিনারি পরীক্ষা থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ পর্যন্ত পদে পদে বাধার শিকার হয়েছেন তারা। প্রায় চার হাজার প্রার্থীর বয়স ৩৫ অতিক্রান্ত হওয়ায় চাকরিতে আবেদনের সুযোগ হারিয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো প্রার্থীর বয়স ৩৫ পেরিয়ে যাচ্ছে। তারা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বঞ্চিত হচ্ছেন চাকরি থেকে। তারা বলছেন, এভাবে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ দেরি করে প্রার্থীদের বঞ্চিত করা অমানবিক ও নির্যাতনের শামিল। আবার তারা অভিযোগ করেন, বারবার ইনডেক্সধারীরা নতুন প্রার্থীদের সঙ্গে আবেদন করার সুযোগ মেলায় বেশির ভাগ পদ তারাই দখল করে নিচ্ছেন। অনেকেই পরবর্তীতে যোগদান করেন না। ফলে এই আসনগুলো ফাঁকাই রয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে তারা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করায় পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠানেও দেখা দিচ্ছে শূন্যতা। ফলে যোগদান করলে পূর্বের প্রতিষ্ঠান এবং যোগদান না করলে পরবর্তী প্রতিষ্ঠান শিক্ষক শূন্যতার মুখে পড়ছে। তাই ১-১৬তম সকল প্রার্থীর দাবি ইনডেক্সদের আলাদা করে নতুন প্রার্থীদের সম্পূর্ণ নতুন গণবিজ্ঞপ্তি দেয়া। তাহলে, সকলেই উপকৃত হবে। শিক্ষার পাঠদানেও কোনো ক্ষতি হবে না।
নিয়োগপ্রত্যাশী এম এ আলম বলেন, বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। ৩য় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রায় ৩৪ হাজার ৭৩ জন সুপারিশ পায়। তৃতীয় চক্রে ১৫ হাজার পদে কোনো আবেদনই পড়েনি। আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি, এই ১৫ হাজারের মধ্যে আট হাজার নারী কোটা আর বাকিগুলো হাওরাঞ্চলের এবং নন-এমপিও পদ। তিনি আরও বলেন, ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য আমরা বারবার এনটিআরসিএ’তে স্মারকলিপি জমা দেই ও সাক্ষাৎ করি এবং সর্বশেষ অক্টোবরে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আশ্বাস দেয়া হয়। আমরা এর দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। কারণ, এর আগেও বেশ কয়েকবার আশ্বাস দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি প্রতিষ্ঠানটি। রাশেদ অর্নব নামে এক নিয়োগপ্রত্যাশী বলেন, শিক্ষকতা পেশায় খুবই আগ্রহ আমার। ১৬তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণ হয়েছি কিন্তু গণবিজ্ঞপ্তি দেরি হওয়ায় বয়স ৩৫ অতিক্রম করেছে। শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার আশার প্রদীপ নিভু নিভু করছে। কি দোষ আমার ও আমার মতো প্রার্থীদের। যাদের প্রতিনিয়ত বয়স ৩৫ বছর অতিক্রম করছে। সর্বোচ্চ পরিমাণ ব্যাকডেটসহ অক্টোবরেই গণবিজ্ঞপ্তি চাই ও দিতেই হবে। নইলে আমার মতো প্রায় চার হাজার প্রার্থীর দুর্দশার অন্ত থাকবে না। এর দায়ভার কে নিবে? ইমরান নামে এক চাকরিপ্রত্যাশী দাবি তুলে বলেন, ১-১৬তম সকল নিবন্ধনধারীর গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী প্রার্থীদের একটাই দাবি কর্তৃপক্ষ যেন তাদের দেয়া আশ্বাস পূরণ করে অক্টোবরেই গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।
আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমরা নিজের চোখের সামনে আমাদের ভবিষ্যৎ হারিয়ে ফেলছি। এ ভাবে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের বেকার করে রাখাটা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, অক্টোবরে বিজ্ঞপ্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেটার বাস্তবায়ন চাই আমরা। এদিকে এনটিআরসিএ সূত্রে জানা যায়, শিগগিরই তারা ৭০ হাজার শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে যাচ্ছে। বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় একসঙ্গে এত বেশি শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি। আগামী অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। শূন্য পদগুলোর অনুমোদন ও গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুমতি চেয়ে সমপ্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে তারা। এর আগে প্রতিটি জেলার শূন্য পদের চাহিদা আসার পর তা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়। সর্বশেষ গত বছরের ৩০শে মার্চ ৫৪ হাজার ৩০৪টি শূন্য পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান বলেন, আমরা শূন্য পদের সংখ্যা পেয়েছি। গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য সব বিভাগে কাজ চলছে। এখানে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষা। এরপর আমরা শিগগিরই গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবো।