দেশ বিদেশ
কোন্দল কমলেও প্রাণ নেই চট্টগ্রামের জাপায়
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, সোমবারকাগজে কলমে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। তবে সে হিসেবে সাংগঠনিক অবস্থান নেই তাদের। বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও স্থবির দলটির কার্যক্রম। এখানে আছে ৩টি শাখা কমিটি। এরমধ্যে মহানগর কমিটি মাঝে মধ্যে দলীয় কর্মসূচি পালন করলেও বাকি দু’টি শাখার কার্যক্রম শুধু কমিটি গঠনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এ ছাড়া দলের শীর্ষ পদে থাকা চট্টগ্রামের দুই নেতার কারণে অনেকটা দ্বিধাবিভক্ত নেতাকর্মীরা। তবে সম্প্রতি এক নেতার মৃত্যুর পর গ্রুপিং অনেকটা কমে গেলেও বাড়েনি সাংগঠনিক কাজের গতি। চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টির সবচেয়ে বড় ইউনিট মহানগর কমিটি। ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির সভাপতি শিল্পপতি সোলাইমান আলম শেঠ, সেক্রেটারি এয়াকুব হোসেন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় আছে ১১২ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি।
দুই গ্রুপের নেতৃত্বে ছিল দু’টি আলাদা কমিটি। এরমধ্যে মোরশেদ দম্পতি গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন দলের বর্তমান সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু। মূলত এই ২ জনের কারণে গ্রুপিংয়ে জর্জরিত ছিল নেতাকর্মীরা। গত বছরের অক্টোবর মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে জিয়াউদ্দিন বাবলুর মৃত্যু হলে কোণঠাসা হয়ে পড়ে গ্রুপটি। সর্বশেষ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া ঋণ খেলাপির অভিযোগে গত আগস্ট মাসে মোরশেদ মুরাদ ও স্ত্রী মেহজাবিনের বিরুদ্ধে আদালত গেপ্তারি পরোয়ানা দিলে আত্মগোপনে চলে যান তারা। মূলত এরমধ্য দিয়ে গ্রুপটি ভেঙে যায়। এখন তাদের অনুসারীরা ভিড়ে গেছেন সোলাইমান শেঠ গ্রুপে। অন্য অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও মিলেছেন শেঠের সঙ্গে। তবে দলের মহানগর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত নগরের চকবাজার এলাকায় অবস্থিত শেঠের মালিকানাধীন ভবনের একটি ফ্লোরে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে যেন সীমাবদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রম। সর্বশেষ গত ১২ই সেপ্টেম্বর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে তারা। সংগঠনের দক্ষিণ জেলা কমিটির অবস্থাও একই। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে দু’টি গ্রুপ আলাদাভাবে কাজ করতো। এদের এক গ্রুপে নেতৃত্ব দিতেন সাবেক পৌর মেয়র ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল আলম মাস্টার।
আরেক গ্রুপের নেতৃত্ব দিতেন জেলা কমিটির আহ্বায়ক নুরুচ্ছাফা সরকার। তবে সম্প্রতি শামসুল আলম মাস্টারের মুত্যুর পর তার গ্রুপটিও নেতৃত্বশূন্য হয়ে যায়। এখন তাদের অনেকে যোগ দিয়েছেন নুরুচ্ছাফা সরকারের গ্রুপে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটি মূলত একটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি। ২০১৯ সালের ২৩শে নভেম্বর সাবেক এমপি নজরুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও শফিক উল আলমকে সদস্য সচিব করে এই কমিটি গঠন করা হয়। তবে এতদিন পরে এসেও সম্মেলনের আয়োজন করতে পারেননি তারা। ২৩ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটি দিয়েই চলছে সংগঠনের কার্যক্রম। মূলত এই জেলা কমিটির আওতাধীন হাটহাজারী থেকে নির্বাচিত এমপি ও দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের আয়ত্বে এই কমিটি। ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চট্টগ্রামে আসলে তাকে সঙ্গ দেয়া ও মাঝে মধ্যে মিলাদ দোয়ার আয়োজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এই ইউনিটের কার্যক্রম। তবে গত শনিবার বিকালে এই কমিটির ব্যানারে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে দলের প্রয়াত মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুর স্মরণসভা ও মেজবানের আয়োজন করা হয়। এটিই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির করা সবচেয়ে বড় আয়োজন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আহ্বায়ক নুরুচ্ছাফা সরকার দলীয় কার্যক্রম নিয়ে মানবজমিনকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি জোট ও প্রধান বিরোধী দলে আছি। এরপরও আমরা সুবিধা করতে পারছি না। নেতাকর্মীরা কাজ করতে চান না।
আবার কয়েকজন নেতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে গ্রুপিং লেগে ছিল। তবে এখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আমরা এখন দল গোছানোর চেষ্টা করছি। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর সভাপতি সোলাইমান আলম শেঠ বলেন, এতদিন গ্রুপিং ছাড়াও কিছু সমস্যায় আমরা অবশ্যই ছিলাম। বিশেষ করে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা এখানে কোন্দল জিইয়ে রেখেছিলেন। এখনো একজন এখানে গ্রুপিং করছেন। তবে এখন সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছি। দল আগের চেয়ে এখন শক্তিশালী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের কাঁধে ভর দিয়ে কয়েকবার ক্ষমতায় গিয়েছে। কিন্তু তারা আমাদের মূল্যায়ন করেননি। নেতাকর্মীদের মনে এখন তাদের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষোভ। তাই আমাদের চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবার এককভাবে নির্বাচন করার চিন্তা করছেন। আমরাও সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩টিসহ চট্টগ্রামের মোট ১৯টি আসনে দল প্রার্থী দিবে। আমি নিজেও চট্টগ্রাম শহর বা খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচন করবো।