শেষের পাতা
আজ মহালয়া
পিতৃপক্ষ শেষে শুরু হলো দেবীপক্ষ
সুদীপ অধিকারী
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, রবিবারআশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর, ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা, প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা। ভোরে মহালয়ার ঘট স্থাপন, বিশেষ পূজা আর মন্দিরে মন্দিরে শঙ্খের ধ্বনি ও চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে আবাহন জানানো হয়েছে। পিতৃপক্ষ শেষে শুরু হলো দেবীপক্ষের। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় আয়োজন শারদীয় দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা শুরু হলো আজ। এদিনই দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। মূলত: মহালয়ার তিথির সময়কাল হলো অমাবস্যা। এই দিন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার রীতি প্রচলিত আছে। তর্পণ মন্ত্রে বলা হয়ে থাকে, ‘যে বান্ধবা অবান্ধবা বা, যে অন্য জন্মনি বান্ধবাঃ। তে তৃপ্তিং অখিলাং যান্ত, যে চ অস্মৎ তোয়-কাঙ্খিণঃ।’ অর্থাৎ বন্ধু ছিলেন কিংবা বন্ধু নন অথবা জন্মজন্মান্তরে বন্ধু ছিলেন তাঁদের জলের প্রত্যাশা তৃপ্তিলাভ করুক। মহাভারতে এই দিনটিকে পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং দেবীপক্ষের সূচনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মহালয় প্রসঙ্গে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বলা হয়েছে, যে ক্ষণে পরমাত্মায় অর্থাৎ পরব্রহ্মে লয় প্রাপ্তি ঘটে সেটিই হলো মহালয়। কেন না, পরমাত্মাই হলো পরব্রহ্ম। আর নিরাকার ব্রহ্মের আশ্রয়ই হলো মহালয়। তবে শ্রী শ্রী চণ্ডীতে মহালয় হচ্ছে পুজো বা উৎসবের আলয়। অর্থাৎ দেবীপক্ষ বা দুর্গাপূজার শুরুর ক্ষণ। আসছে ৩০শে সেপ্টেম্বর পঞ্চমী তিথীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে দেবী পূজার সূচনা হবে। মা কৈলাশ ছেড়ে তাঁর সন্তানদের নিয়ে আসবেন পিতৃলোকে। অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠায় মর্ত্যে আসবেন দেবী দুর্গা। ১লা অক্টোবর ষষ্ঠি তিথিতে অশ্বমেথ বৃক্ষের পূজার মাধ্যমে আবাহন করা হবে দেবী দুর্গার। ঢাক-ঢোল আর কাঁসার বাদ্যে দেবীর বোধন পূজার মধ্যদিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। এইদিনই হবে দেবীর বোধন পূজা। ২রা অক্টোবর সপ্তমী তিথিতে দেবীর নবপত্রিকা স্থাপন সপ্তম্যাদি কল্পারম্ভের মধ্যদিয়ে হবে মহা সপ্তমী পূজা। এই নব পত্রিকাই ‘কলাবউ’ নামে পরিচিত। নবপত্রিকাকে সিদ্ধিদাতা গণেশের পাশে অধিষ্ঠিত করা হবে। এই দিনই দেবীর মৃণ্ময়িতে প্রাণ সঞ্চার করা হয়। পরদিন ৩রা অক্টোবর মহা অষ্টমী তিথিতে সনাতনী নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ সকলে মিলে দেবীকে পুষ্পাঞ্জলি দেয়া হবে। এইদিনই হবে সন্ধীপূজা।
মাতৃরূপে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করে হবে ‘কুমারী পূজা’। শাস্ত্রমতে, এদিন পূজিত কুমারী কন্যার নামকরণ করা হয় ‘উমা’। ৪ঠা অক্টোবর নবমীতে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর মহা প্রসাদ বিতরণ করা হবে। সর্বশেষ ৫ই অক্টোবর দশমী তিথিতে দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিদায় জানানো হবে দেবী দুর্গাকে। পুরাণ মতে, ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর অমর হয়ে উঠেছিলেন। কোনো পুরুষ তাকে বধ করতে পারবে না। শুধুমাত্র কোনো এক নারীশক্তির কাছেই তার পরাজয় নিশ্চিত। বর পেয়ে স্বর্গ দখল নেয় অসুর রাজা মহিষাসুর। অসুরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল। তখন ত্রিশক্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের শক্তি দিয়ে ঘুম ভাঙানো হয় আদি শক্তি মহামায়ার। দেবতাদের অস্ত্রে সজ্জিত করা হয় দেবীকে। বাহন সিংহে চেপে দেবী যান অসুর বধে। রম্ভাসুর, তারকাসুর একে একে বধ করেন সকলকে।
মহিষাসুরকে বধের মধ্য দিয়ে ত্রীলোকের শান্তি ফিরিয়ে আনেন দেবী দুর্গা। দেবীর সেই মহিষাসুর বধের দৃশ্যই কল্পনা করে তখন থেকে মর্ত্য অর্থাৎ আমাদের মানবকূলে দেবী দুর্গার পূজা শুরু হয়। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, এবছর উমা’র আগমন গজে এবং ফিরে যাবেন নৌকায়। মায়ের গজে আগমনের ফলশ্রুতি হচ্ছে শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা। আর নৌকায় গমনের ফলশ্রুতি শস্যবৃদ্ধি এবং জলবৃদ্ধি। এ বছর দেশের অনেক স্থান বন্যা-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে, অনেক শস্যাদি নষ্ট হয়েছে। তারই একটা প্রভাব আসছে।