শেষের পাতা
ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথে ভোটের হাওয়া
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২২ সেপ্টেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবারপ্রবাসী শহর সিলেটের ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথে বইতে শুরু করেছে ভোটের হাওয়া। উপজেলা ও পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীরা এখন মাঠে। চলছে হিসাব-নিকাশও। ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ নিয়ে সিলেট-২ আসন। জাতীয় নির্বাচনে গত দুই টার্ম আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র প্রার্থীরা নিজ নিজ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করতে পারেননি। ফলে উভয় দলের প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে যান। জোট-ভোটের হিসাবে শরিক দলই পায় অগ্রাধিকার। এবারের উপজেলা ও পৌর নির্বাচনকে ঘিরে ভিন্ন আমেজ এ দুই জনপদে। এবারের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীরা নির্বাচনে থাকলেও ধানের শীষ নিয়ে কেউ দাঁড়াবেন না। তবে- স্বতন্ত্র ব্যানারে দু’টি নির্বাচনেই বিএনপি নেতারা মাঠে লড়াইয়ে থাকবেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন; সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরী, জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ভিপি, ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান নাজলু, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুর রহমান সোহেল। জগলু চৌধুরী গতবার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিলেন। বিদ্রোহী হওয়ার কারণে এবার নৌকা পাওয়া তার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হতে পারে। অন্যদিকে- জেলা যুবলীগ সভাপতি শামীম আহমদ ভিপি পরিচ্ছন্ন এক নেতা। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান শামীম আহমদ দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ সিলেট সফরে সিলেট সার্কিট হাউসে বক্তৃতাকালে নজর কাড়েন সবার। এ কারণে তিনিও দলীয় প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। এছাড়া- ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান নাজলুও লবিং চালাচ্ছেন। এই তিনজন থেকে যে কারো ভাগ্যে এবার নৌকার টিকিট জুটতে পারে বলে দলের নেতারা মনে করেন। তারা জানিয়েছেন- গতবার নৌকার প্রার্থী শক্তিশালী না হওয়ার কারণে স্বতন্ত্র ব্যানারে থাকা বিএনপি নেতা ময়নুল হক চৌধুরী জয়লাভ করেছিলেন। এবার সেই ভুল আর করতে চায় না আওয়ামী লীগ।
এ কারণে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীর নাম দলীয় মনোয়ন বোর্ডে প্রেরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এ নির্বাচনে এবারো ধানের শীষ নিয়ে কেউ প্রার্থী হবেন না। তবে- গোয়ালাবাজার ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি কামরুল ইসলাম ও উপজেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি আলহাজ আব্দুল হেকিম প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি চালাচ্ছেন। তাদের পক্ষে বিএনপি নেতারাও ভোটে মাঠে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। খেলাফত মজলিস থেকে প্রার্থী হতে পারেন সৈয়দুর রহমান। এদিকে- এবার প্রথমবারের মতো বিশ্বনাথ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে ভোটারের মধ্যে আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। তফসিল ঘোষণার পরপরই সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন। তবে- বিশ্বনাথ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মুখোমুখি থাকবেন স্বতন্ত্র ব্যানারে থাকা বিএনপি’র প্রার্থী। এখন পর্যন্ত প্রথম পৌর পিতা হতে আওয়ামী লীগের কয়েকজন মাঠে নেমেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন- বিশ্বনাথ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ছয়ফুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আজিজ সুমন, যুক্তরাজ্য যুবলীগের সহ সভাপতি মোহাম্মদ আলী মজনু, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাফ হোসেন, পৌর আহ্বায়ক আব্দুল জলিল জালাল।
এছাড়া বিএনপি থেকে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে নামতে পারেন উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি জালাল উদ্দিন চেয়ারম্যান, উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক গৌছ খান, কলচেষ্টার বিএনপি নেতা মিসবাহ উদ্দিন। খেলাফত মজলিস থেকে প্রার্থী হতে পারেন উপজেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ। প্রার্থী তালিকা ও হিসাব- নিকাশে নানা সমীকরণ চলছে ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথে। দু’টি নির্বাচনেই স্বতন্ত্র ব্যানারে বিএনপি’র শক্তিশালী প্রার্থী থাকবেন। ইলিয়াস পরিবার থেকেও কৌশলে প্রার্থীদের সমর্থন ও সহযোগিতা করা হবে বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন। এ কারণে দু’টিতে জয়ী হতে যোগ্য প্রার্থী দেওয়া হবে। আর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একক প্রার্থী দেওয়া হলেও বিদ্রোহী থামানো কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে। দু’টি নির্বাচনেই নৌকা না পেলে অনেক প্রার্থীই মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে জমে উঠার অপেক্ষায় রয়েছে ওসমানীনগর উপজেলা ও বিশ্বনাথের পৌরসভা নির্বাচন।