মানবাধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে - সুলতানা কামাল

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেছেন, মানবাধিকার রক্ষায় রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। একজন মানুষের অধিকার রক্ষায় যদি রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়ে থাকে, তাহলে সেই ব্যর্থতার দায়ভার রাষ্ট্র পরিচালনা যারা করেন তাদেরকে নিতে হবে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা হত্যা ও আদিবাসী ভূমি দখলের প্রতিবাদে যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, এএলআরডি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন, কাপেং ফাউন্ডেশন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, স্বদেশ, সামস, হেগ ও নাগরিক সমাজ। গত ১৯ই আগস্ট মুন্ডা জাতিগোষ্ঠীর নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা দুষ্কৃতকারীদের হামলায় আহত হন। পরদিন তিনি মারা যান। সুলতানা কামাল বলেন, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে মুন্ডাদের পরিবারগুলোকে ঘিরে ধরে এ আক্রমণ করা হয়েছে। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দিলেও তারা আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ায়নি। 

সাতক্ষীরার মুন্ডা সমপ্রদায় শুধু নয়, এ হামলার ঘটনার সঙ্গে দেশের যেকোনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বসবাসকারী এলাকার মিল রয়েছে উল্লেখ করেন তিনি বলেন, যেখানে আদিবাসীরা বাস করে, সেখানে গেলেই একই কাহিনি শুনতে পাই। তাদের সহায়-সম্পত্তি ও জমি দখল করা হচ্ছে। সেটার জন্য হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন করা হচ্ছে এবং এগুলোর কোনো বিচার হচ্ছে না।

আমরা এ ধরনের ঘটনাগুলোর বিচার চাই, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। একই সঙ্গে মানুষের যে ক্ষতি হয়েছে, সে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। মূল বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, ১৯ আগস্ট শ্যামনগরের ধুমঘাট অন্তখালী মুন্ডাপল্লিতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ভূমিগ্রাসী চক্র স্থানীয় ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের জড়ো করে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মুন্ডাপাড়ার সব পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তাদের হামলায় মুন্ডা জনগোষ্ঠীর ১২ জন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা পরের দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে মারা যান। তিনি বলেন, জাতীয় পর্যায়ের কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মিলে ২৯ আগস্ট ওই ঘটনাস্থলে যান। তারা স্থানীয় মানুষ ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে স্থানীয় থানা-পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকা জানতে পেরেছেন। ঘটনার সময় বিভিন্নভাবে স্থানীয় থানায় খবর দেয়া হলেও পুলিশ সেখানে পৌঁছায় অনেক দেরিতে। পুলিশ এখনো মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

 এ ঘটনার মূল হোতা রাশিদুল ও এবাদুলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগ করেন নিহত নরেন্দ্রনাথ মুন্ডার ছেলের স্ত্রী রিনা মুন্ডাও। তিনি বলেন, তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে হুমকি দেয়া হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে ৯ দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা হত্যার মূল আসামিদের গ্রেপ্তার ও তদন্ত করে বিচার, তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, মুন্ডাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের জমি ফেরত দেয়া, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সব দখল হওয়া জমি উদ্ধার, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করা। এছাড়া সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ভূমি কমিশন ও সংখ্যালঘু কমিশন গঠন এবং জেলা প্রশাসকের বিনা অনুমতিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বে-দখল হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের দাবিও করা হয়। কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, মুন্ডাদের অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলন-সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আশিক-ই-এলাহী প্রমুখ।