ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

ঢাবি ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ছিনতাই

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে জড়িত ব্যক্তি?

মরিয়ম চম্পা
৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, রবিবার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে কল্যাণপুরে নামার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি সহসাই গ্রেপ্তার করা হতে পারে। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য হতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র। ঘটনার সময় ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নেমে রিকশায় বাসায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে রিকশার গতিরোধ করেন এক মোটরসাইকেল আরোহী। মোটরসাইকেলে পুলিশ লেখা স্টিকার ছিল, নিজেকেও পুলিশের লোক হিসেবে পরিচয় দেন। এরপর ছাত্রীর ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকেন, তার ব্যাগে থাকা একটি টেডি-বেয়ারের মধ্যে (জন্মদিনের উপহার) মাদক এবং অবৈধ জিনিসপত্র রয়েছে। তাকে থানায় যেতে হবে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ওই ছাত্রীকে মোটরসাইকেলে তুলে দ্রুত চালিয়ে চলে যায় ওই ব্যক্তি। এরপর তুরাগ থানার দিয়াবাড়ীর নির্জন এলাকায় নিয়ে ছুরি ঠেকিয়ে ভয় দেখিয়ে ওই ছাত্রীর গলার স্বর্ণের চেইন ও কানের দুল ছিনিয়ে নেন। এ সময় তাকে শারীরিকভাবে নিপীড়ন করা হয়।

বিজ্ঞাপন
প্রথম দিকে শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোর সত্যতা নিয়ে নানামুখী প্রশ্ন দেখা দিলেও তদন্তে শিক্ষার্থীর অভিযোগের পুরোপুরি সত্যতা পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। 

ঘটনার দিন বাস থেকে নামার পর বিকাশের দোকানে যাওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীকে পুলিশ পরিচয়ে অনুসরণ করতে থাকে অভিযুক্ত ব্যক্তি। এ সময় তার সঙ্গে পুলিশের আইডি কার্ড, ওয়াকিটকি এবং পুলিশ লেখা মোটরসাইকেল ব্যবহারের সত্যতা মিলেছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজসহ একাধিক তথ্য সংগ্রহ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।    সূত্র জানায়, এ সময় দিয়াবাড়ী ঘটনাস্থলে স্থানীয় এক ব্যক্তি ওই পথে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। তরুণীর সঙ্গে এমন অস্বাভাবিক আচরণ দেখে তিনি এগিয়ে যান। এ সময় দ্রুত তরুণীর ব্যাগ ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালান অপহরণকারী। এরপর ওই ব্যক্তির সহায়তায় তুরাগ থানায় জানান। তুরাগ থানায় মামলা করেন ওই ছাত্রী। তদন্ত সূত্র জানায়, ঘটনার দিন জন্মদিন উপলক্ষে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উপহার দিয়েছেন বন্ধুরা। এর মধ্যে শাড়ি, চকলেট, টেডি-বেয়ার (পুতুল)সহ আরও অনেক উপহার ছিল। তার ব্যাগে থাকা সেই প্যাকেট দেখিয়ে পুলিশ পরিচয়ধারী ব্যক্তি জানতে চাইলে হতচকিত হয়ে যান শিক্ষার্থী। ব্যাগ খোলারও সুযোগ দেওয়া হয়নি তাকে। অপহরণের সঙ্গে জড়িতকে শনাক্ত করতে ৪-৫টি টিম কাজ করছে। পুলিশের ধারণা- পেশাদার কোনো অপরাধী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে তুলে নিতে পারে। কল্যাণপুর থেকে দিয়াবাড়ী ৮-১০ কিলোমিটার হলেও পথে ওই ছাত্রী কোনো চিৎকার-চেঁচামেচি করেননি। 

ওই ব্যক্তি বলছিলেন- ‘আরেকটু দূরেই থানা। সিসিটিভি ফুটেজে মোটরসাইকেলের অস্পষ্ট নম্বর দেখা গেছে। ওই ব্যক্তির বয়স ৩০-৪০-এর মধ্যে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ পরিচয়ে যে কৌশলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে কল্যাণপুরের মতো ব্যস্ত এলাকায় অপহরণ করা হয়েছে, এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। আসল পুলিশ নাকি পুলিশের পরিচয় ব্যবহার করা হয়েছে- তা বের করতে কাজ করছে একাধিক সংস্থা। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী তুরাগ থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলাটি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের পাশাপাশি তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ। আমরা ওই ব্যক্তিকে খুঁজছি। এরইমধ্যে আমরা ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। মোটরসাইকেলের নম্বর শনাক্তের চেষ্টা চলছে। শিগগির এর রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হবে। তদন্ত সূত্র জানায়, অপরাধীর চুলের কাট, শরীরের গড়ন, তার গতিবিধি এবং আচরণ দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি কোনো বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য হতে পারেন। কারণ একজন পুলিশ সদস্যের আচরণ ভঙ্গি এবং কাউকে মানসিকভাবে কীভাবে মুহূর্তেই দুর্বল করে দেয়া যায় তার সব কৌশলই জানা ছিল এই অপরাধীর। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।  পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি মোর্শেদ আলম মানবজমিনকে বলেন, ঢাবি’র শিক্ষার্থীর অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শুরু করেছে একাধিক বাহিনী। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করা হয়েছে। সহসাই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। ইতিমধ্যে অপরাধীর বিষয়ে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status