অনলাইন
গোলটেবিল বৈঠকে
পোল্ট্রি শিল্প রক্ষায় প্রান্তিক কৃষকদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়াসহ ছয় দফা সুপারিশ
স্টাফ রিপোর্টার:
(২ বছর আগে) ৩১ আগস্ট ২০২২, বুধবার, ৬:১৯ অপরাহ্ন
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ড্রাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এর ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পোল্ট্রি শিল্পে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। দেশে পোল্টি শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৬০ লাখ শ্রমিক জড়িত। তাই এই শিল্প রক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রান্তিক খামারী ও কৃষকদের সহজে ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা, আপদকালীন প্রণোদনা দেয়া, মধ্যসত্ত্বভোগীদের প্রভাব বন্ধ করা, কৃষকদের আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেয়া, খামারিদের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রান্তিক খামারীদের বীমার আওতায় আনা জরুরি।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘পোল্ট্রিটেক বাংলাদেশ: ডাচ বাংলাদেশ জ্ঞান বিতরণ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এই সুপারিশসমূহ উঠে আসে। পোল্ট্রি টেক বাংলাদেশ, ব্রিডার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (বিএবি) ও ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ যৌথভাবে এই বৈঠকের আয়োজন করে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নেদারল্যান্ড ভিত্তিক কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লারিভ ইন্টারন্যাশনাল এর পরিচালক ম্যাথিস ব্রিনেন ও দেশের কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনারস এর পরিচালক জাহিদুল আমিন।
এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নওরিশ পোল্ট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেড এর পরিচালক শামসুল আরেফিন, আফতাব বহুমূখী ফার্ম এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান, ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, স্পেকট্রা হেক্সা ফিডস লিমিটেডের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আহসানুজ্জামান প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের পোল্ট্রি জিনেটিসিস্ট ড, বিবেক রায়।
এতে বিভিন্ন পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সদস্যরা সহ প্রায় ৪৫ জনেরও অধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।
আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান বলেন, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসব- অনুষ্ঠানের কারণে বাংলাদেশে প্রোটিন গ্রহণের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। মানুষের কি পরিমাণ প্রোটিন চাহিদা আছে সেটা ভালভাবে বোঝার জন্য একটি ভোক্তা বেসলাইন স্টাডি জরুরি।
মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের দেশের বাজারগুলোতে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই। তাই বাজারে জীবিত মুরগি বিক্রি বন্ধে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এই পদক্ষেপ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে। তিনি যোগ করেন, বাজারে মধ্যসত্ত্বভোগীদের প্রভাব বেশি। এই কারণে মূল উৎপাদনকারীরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। ফলে ক্রেতারাও কম দামে মাছ-মুরগী কিনতে পাচ্ছেন না। বাজারে মধ্যসত্ত্বভোগীদের প্রভাব কমলে খুচরা বাজারে পোল্ট্রি পণ্যের দামও কমে আসবে।
মো আহসানুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের কৃষকদের জন্য অর্থের প্রবেশগম্যতা আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই এই শিল্পের প্রসারে অর্থের যোগান এবং সহজে ঋণ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। এর পাশাপাশি তাদেরকে বীমার আওতায় আনা ও আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ জরুরি।
এসিআই গোদরেজ এগ্রোভেট প্রাইভেট লিমিটেডের সহযোগী ভাইস প্রেসিডেন্ট, মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা আশা করছি ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প ২০২২ এর তুলনায় ৩০০% বৃদ্ধি পাবে। তাই, আমাদের উচিত নিরাপদ খাবারের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার দিকে বেশি মনোনিবেশ করা।
প্রসঙ্গত, পোল্ট্রিটেক বাংলাদেশ (PoultryTechBangladesh) পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ এর আওতায় একটি কর্মসূচি, যা বাংলাদেশের এই সম্ভাবনাময় খাতকে শক্তিশালী করতে একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ল্যারিভ ইন্টারন্যাশনাল এবং লাইটক্যাসল পার্টনারস-এই দুই কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান অংশীদারের ভিত্তিতে নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে গত কয়েক-বছর যাবৎ পোল্ট্রি শিল্পের প্রকল্প পরিচালনা ও বাস্তবায়নে কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই শিল্প গ্রামীণ পর্যায়ে বিপুল সংখ্যক নারীসহ অনেক মানুষের কর্সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ পোল্ট্রি খামার রয়েছে।