ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

অপহৃত ২ প্রবাসীর প্রতি মুহূর্তই কাটছিল মৃত্যু আতঙ্কে

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
১৯ আগস্ট ২০২২, শুক্রবার

সরাইল উপজেলার অরুয়াইল গ্রামের সৌদী প্রবাসী সোরহান ও শাকিল। সম্পর্কে তারা চাচা-ভাতিজা। প্রথমে মুঠোফোনে অপরিচিত মেয়ের সঙ্গে তাদের প্রেম। ইমোতে ভিডিও কলে মন দেয়া-নেয়া। ভালোবাসায় ব্যাকুল। এমনই ফাঁদে ফেলে তারা দু’জনকেই অপহরণ করে একটি চক্র। নির্জন কক্ষে আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন। মহিলার সঙ্গে নগ্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ। হত্যা করে লাশ গুমের হুমকি। মুঠোফোনে পরিবার ও স্বজনদের কাছে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি।

বিজ্ঞাপন
এমন বর্বরোচিত যন্ত্রণায় তাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছিল মৃত্যু আতঙ্কে। অবশেষে ৪০-৫০ ঘণ্টা পর সরাইল থানা পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার হয় ৩ নারীসহ অপহরণ ও প্রতারক চক্রের ৬ সদস্য। স্বস্তি ফিরে আসে অপহৃতদের স্বজনদের মাঝে। পুলিশ, অপহৃত ব্যক্তিদ্বয় ও স্বজনরা জানায়, অরুয়াইল গ্রামের কাঞ্চন মিয়ার ছেলে সৌদি প্রবাসী সোরহান মিয়াকে গত মঙ্গলবার মুঠোফোনে প্রলোভন দেখিয়ে বিশ্বরোড মোড়ে নিয়ে অপহরণ করে। গত সোমবার বিকাল ৫টার দিকে কালীকচ্ছ বাজার থেকে মো. রওশন আলীর ছেলে মো. শাকিল মিয়া (২৫)কে অপহরণ করে ওই চক্রটি। জেলা শহরের শেরপুর ও গৌতমপাড়া মুন্সিবাড়ি এলাকায় নির্জন কক্ষে তাদেরকে আটকে রেখে চালায় নির্যাতনের স্টিম রোলার। বেধড়ক মারধর করে। মাঝেমধ্যে হত্যা করে লাশ গুমের হমকিও দেয়। জোরপূর্বক নগ্ন করে মহিলাকে পাশে বসিয়ে ধারণ করে ছবি ও ভিডিও। একজন নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়েও নানা হুমকি-ধমকি দিয়েছে। নগ্ন ছবি পরিবার স্বজন ও নেটে ছেড়ে দেয়ার কথা বলে মোটা অংকের মুক্তিপণ চাইতে থাকেন। ভয়াবহ শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। তাদের কান্না ও চিৎকারের শব্দ মুঠোফোনে স্বজনদের একাধিকবার শুনিয়েছে। মারধর ও মৃত্যুর ভয়ে কাঁপছিল ওই দুই প্রবাসী। তারা ভাবছিলেন এক সময় হয়তো বা তাদের লাশই পাবেন স্বজনরা। বাধ্য হয়ে রাতেই অপহৃতদের স্বজনরা ৪ বারে বিকাশের মাধ্যমে ৭০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। অপহৃতদের স্বজনরা পুরো বিষয়টি সরাইল থানাকে অবহিত করেন। সেইসঙ্গে মুঠোফোনে নির্যাতন, মারধর ও আহাজারির শব্দ শোনানো হয়। মঙ্গলবার বিকালে তাদের মুঠোফোন রেখে ছেড়ে দেয় সোহরান ও শাকিলকে। তাদের দেয়া তথ্যমতে ওইদিন গভীর রাতে সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আসলাম হোসেন ও এসআই মো. নুরুল করিমের নেতৃত্বে অভিযানে মাঠে নামেন সরাইল থানার একদল পুলিশ। শেরপুর ও গৌতমপাড়ার মুন্সিবাড়িতে রাত ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। অভিযানকালে অপহরণ ও প্রতারক চক্রের অন্যতম হোতা শহরের ঘাটুরা এলাকার রেনু মুন্সির ছেলে আবদুল আহাদ (৩৪), আহাদ মিয়ার স্ত্রী ববিতা বেগম (৩০), মধ্যপাড়ার রবি বাবুর্চির ছেলে মো. সাজন (৩১), মজলিশপুরের কবির মিয়ার মেয়ে লিপি আক্তার (১৮), সাংবাদিক পরিচয়দানকারী (সহ সম্পাদক তিতাস বার্তা) ভাদুঘরের মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মো. মশিউর রহমান (৪৩) ও নাসিরনগরের চাতলপাড় এলাকার খায়রুল ইসলামের স্ত্রী মক্ষিরানী জহুরা বেগম (২২)কে গ্রেপ্তার করেন। তাদের কাছ থেকে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত ৯টি মোবাইল সেট ও মুক্তিপণের ৯৩৫০ টাকা উদ্ধার করেন। গত বুধবার বিকালে তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন, এটা বড় ধরনের একটি চক্র। এদের প্রত্যেকের বিরূদ্ধে সদর থানায় অর্ধ ডজনেরও অধিক মামলা রয়েছে। জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে কাজ করে সফল হতে পেরেছি। অপরাধী যত শক্তিশালীই হউক আমাদের কাছে ছাড় নেই। সরাইল থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status