ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

মোর ইসকায় কেউ চড়তে চায় না বাহে!

সাদুল্লাপুর (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
১৯ আগস্ট ২০২২, শুক্রবার
mzamin

মুই ৩৯ বছর ধরি ইসকা চালাম। আগে ইসকাত ব্যাটারি আছিলো না। একন সবাই ব্যাটারি ওলা ইসকাত চড়ে। ট্যাকার অভাবে ব্যাটারি নাগাতে পাম নাই। কষ্ট করে ইসকার প্যাটেল মারি কামাই করার চেষ্টা করম। কিন্তু মুই বুড়া আর প্যাটেল চালানোর কারণে মোর গাড়িত কেউ চড়তে চায় না বাহে। হামাক এ্যানা ব্যাটারি কেনার ব্যবস্থা করি দেও বাবা!  কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের শালাইপুর গ্রামের রিকশাচালক মনছুর আলী (৭৯)। যাত্রীর অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় বসে থাকতে তাকে দেখা যায় সাদুল্লাপুর শহরে।  একদম ছিন্নমূল পরিবারের মুনছুর আলী। স্ত্রী-ছেলে ও ৩ মেয়েসহ ৬ সদস্যের সংসার।

বিজ্ঞাপন
অন্ন-বস্ত্র যোগাতে ৩ চাকার রিকশাই সহায় সম্বল তার। দীর্ঘ ৩৯ বছর ধরে হাতে হ্যান্ডেল আর পায়ে প্যাডেল মেরে রিকশা চালিয়ে কোনমোত জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন। কয়েক বছর আগে তার রিকশা রেখে নামাজে গেলে চুরি হয়ে যায় সেটি। ফলে থমকে যায় জীবনযুদ্ধ। এরই মধ্যে গাইবান্ধার এক চিকিৎসক কিনে দেন একটি রিকশা। তবে সেটি কোনো ব্যাটারিচালিত নয়। তবুও জীবিকার তাগিদে পায়ে প্যাডেল মেরে যাত্রী বহনে অবিরত চালিয়ে আসছেন। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এই উপার্জনের টাকা দিয়ে ৩ মেয়েকে বিয়ে দেয়া হয়। ছেলেটিও বিয়ে করে আলাদা হয়েছে। জায়গা জমি বলতে কিছুই নেই তার। এখন স্ত্রীকে নিয়ে অন্যের ভূমিতে বসবাস। বৃদ্ধ বয়সেও নেই কোনো অবসর। সকাল হলেই রিকশা নিয়ে বের হতে হয় তাকে। যাত্রী নিয়ে ছোটেন নানা দিক। এর পাশাপাশি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে ভোলেননি কখনো। তাকে রিকশা নিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটে। তবে যাত্রী ওঠে কম। কারণ, বার্ধক্য আর প্যাডেল চালিত রিকশা। তাই যাত্রীরা উঠতে আনাগ্রহী। খুব মিনতি করে যাত্রী তুলে নেন এই বৃদ্ধ মনুছুর আলী। এভাবে দিন শেষে যেটুকু উপার্জন হয় তা দিয়ে কোনোমতে চলছে জীবিকা। যেন নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা তার। শেষ বয়সেও মুনছুর আলী তপ্ত রোদ আর শীত-বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে রোজগারের আশায় রিকশা নিয়ে ছুটে চলে। 

এই রিকশাচালক মনছুর আলী জানান, একদম ভূমিহীন ব্যক্তি তিনি। বয়সও  এখন বার্ধক্যে। ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে বসবাস। সীমিত আয় রোজগারে স্ত্রীকে নিয়ে কোনোভাবে বেঁচে আছেন। তিনি আরও বলেন, বুড়ো হওয়ার কারণে আমার রিকশায় কেউ উঠতে চায় না। তারপরও রিকশাটি যদি ব্যাটারিচার্জার চালিত হতো, তাহলে হয়তো কিছু যাত্রী পাওয়া যেতো। কিন্তু টাকার অভাবে গাড়িতে ব্যাটারি লাগাতে পারছি না।   স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মজনু মিয়া জানান, মুনছুর আলীর যে বয়সে  অবসর সময় কাটানোর কথা, সেখানে রিকশার প্যাডেল চালিয়ে অবিরাম ছুটে চলছেন রাস্তা-ঘাটে। ব্যাটারিবিহীন এ রিকশায় যাত্রী নিয়ে  চলতে কষ্ট হলেও তবুও জীবিকার তাগিদে ছুটছেন এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। পথচলা কঠিন হলেও পৃথিবীতে থেমে থাকার লড়াইয়ে থেমে নেই এই বৃদ্ধ। সাদুল্লাপুর উপজেলা নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) শাখার সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, এই বৃদ্ধ চাচাকে প্রায়ই রিকশা নিয়ে ঘুরতে দেখি। কিন্তু কোনো যাত্রী তার রিকশায় উঠতে চায় না। প্যাডেল চালিত রিকশা ও বয়স্ক বলে যাত্রীরা নারাজ। তবে তাকে সরকারি-বেসরকারিভাবে সহযোহিতা করা দরকার। সাদুল্লাপুর উপজেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ,স,ম সাজ্জাদ হোসেন পল্টন বলেন, বিভিন্ন রাস্তাঘাটে মুনছুর চাচার সঙ্গে দেখা হয়। জীবিকার সন্ধানে বার্ধক্য বয়সেও তাকে রিকশা চালাতে হচ্ছে। রিকশাটি ব্যাটারিচালিত হলে ভালো হতো।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক/ এবারো ভোগাতে পারে ১৩ কিলোমিটার

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status