শেষের পাতা
বৃটেনে ৪০ বছরে সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতি
মানবজমিন ডেস্ক
১৮ আগস্ট ২০২২, বৃহস্পতিবারবৃটেনে মুদ্রাস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। শুধু জুলাই মাসে ভোক্তাদের পণ্যমূল্য শতকরা ১০.১ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারির পর এই হার সর্বোচ্চ। জুন মাসে মুদ্রাস্ফীতির বার্ষিক হার ছিল শতকরা ৯.৪ ভাগ। এর ফলে বৃটেনে পরিবারগুলোর ওপর চাপ তীব্র হয়েছে। তারা ক্রমশ চাপিয়ে চলার চেষ্টা করছেন। বুধবার এই মুদ্রাস্ফীতির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের উদ্বেগ কমাতে এই মুদ্রাস্ফীতি কিছুই করবে না। ফলে পণ্যমূল্যের এই চাপ গেঁথে বসতে পারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
তাতে বেশির ভাগ অর্থনীতিবিদের মতো তিনিও প্রত্যাশা করেন, সেপ্টেম্বরে পরবর্তী মিটিংয়ে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড তার সুদের হার আরও ০.৫ ভাগ বৃদ্ধি করে শতকরা ২.২৫ ভাগ করবে। ওদিকে দুই বছরে বৃটিশ সরকারের বন্ডের দাম ২০২১ সালের জুনের পর বৃদ্ধে পেয়ে সর্বোচ্চ হয়েছে। ২০২১ সালের জুনে এই হার ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছিল। অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকসের বুধবারের তথ্য এটাই বলে যে, মৌসুমি নয় এমন ভিত্তিতে জুন থেকে জুলাইয়ে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ০.৬ ভাগ। বার্ষিক খুচরা মূল্যে মুদ্রাস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১২.৩ ভাগ। ১৯৮১ সালের মার্চের পর এই হার সর্বোচ্চ। শুধু যে বৃটেনে মুদ্রাস্ফীতি ঘটছে এমন নয়। বিশ্বের অন্য দেশগুলোতেও ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি। এর বিরুদ্ধে সবাই লড়াই করছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন ৪০ বছরের মধ্যে জুনে যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতি ছিল সর্বোচ্চ শতকরা ৯.১ ভাগ। তা কিছুটা কমে জুলাইয়ে দাঁড়ায় শতকরা ৮.৫ ভাগ। বৃটিশ অর্থমন্ত্রী নাদিম জাহাবি বলেন, মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে আনা তার শীর্ষ অগ্রাধিকারে রয়েছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মতে, ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসনই মুদ্রাস্ফীতির প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। এ কারণে ইউরোপে জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। এখন বৃটেনেও মুদ্রাস্ফীতি দীর্ঘস্থায়ী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ধীরগতিতে হলেও তা এ বছরের শেষের দিকে মন্দায় পৌঁছাতে পারে। তবে ডাটা থেকে ইঙ্গিত মিলছে যে, ভবিষ্যতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমে আসতে শুরু করবে। ১৯৭৭ সালের পর সবচেয়ে বেশি বর্ধিত মূল্য নির্ধারণ করেছে কারখানাগুলো। তা লাফিয়ে বেড়েছে শতকরা ১৭.১ ভাগ। অন্যদিকে বাষ্যিক ভিত্তিতে কোম্পানিগুলো যে মূল্য পরিশোধ করেছে তা জুনের রেকর্ড শতকরা ২৪.১ ভাগে উঠে যায়। কিন্তু তা সামান্য কমে বার্ষিক শতকরা ২২.৬ ভাগে দাঁড়ায়। মাস থেকে মাসে ‘ইনপুট মূল্য বৃদ্ধি’ হয়েছে শতকরা মাত্র ০.১ ভাগ। ২০২২ সালের পর এটাই সবচেয়ে ধীরগতির বৃদ্ধি। এর কারণ বিশ্বজুড়ে চাহিদা কমে যাওয়া। বৃটেনে বর্তমানে বার্ষিক গৃহস্থালির বিদ্যুৎ বিল দুই হাজার পাউন্ডের নিচে। এক বছর আগের তুলনায় তা দ্বিগুণ।
ধারণা করা হচ্ছে জানুয়ারিতে তা চার হাজার পাউন্ড ছাড়িয়ে যাবে। এমনটা মনে করে শিল্প বিষয়ক বিশ্লেষক সংস্থা কর্নওয়াল ইনসাইট। বৃটেনের লাখ লাখ বাড়ি বর্ধিত বিল দিতে হিমশিম খাবে। এরই মধ্যে সুপারমার্কেট থেকে রিপোর্ট করা হচ্ছে যে, ভোক্তারা সস্তার ব্র্যান্ডগুলোর দিকে ঝুঁকছেন। মঙ্গলবার প্রকাশিত ডাটা থেকে দেখা যায়, কর্মীদের উপার্জন কনজ্যুমার প্রাইস ইনডেক্স জুন পর্যন্ত তিন মাসে পতন হয়েছে শতকরা ৪.১ ভাগ। ২০০১ সালে এই রেকর্ড রাখা শুরু হয়। এরপর এটাই সর্বোচ্চ পতন। এই অবস্থার উত্তরণে কিভাবে সহায়তা করবেন? এমন প্রশ্নে চাপে রয়েছেন বৃটেনে প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে থাকা দুই প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস ও সাবেক চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক। ওদিকে বিরোধী লেবার পার্টি জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।