শেষের পাতা
ছোট হচ্ছে মধ্যবিত্তের বাজার তালিকা
সুদীপ অধিকারী
১৬ আগস্ট ২০২২, মঙ্গলবারআনোয়ারুল ইসলাম। শনিবার সকালে ধানমণ্ডি রায়ের বাজারে দাঁড়িয়ে কী যেন হিসাব মেলাচ্ছেন। মাঝে মাঝে নিজেই নিজের সঙ্গে কথা বলছেন। বাজারের ফর্দ হাতে নিয়ে বার বার মানিব্যাগের টাকা গুনছেন। কাছে যেতেই আনোয়ারুল বলেন, ‘বাজারের সব কিছুতেই আগুন। বাসা থেকে হিসাব
করে আসলাম একরকম। এসে দেখি অন্যরকম। মাসকাবারি বাজার করবো। কিন্তু মাছ, মাংস, চাল, তেল, ডাল, সবজি এমন কিছু নেই যার দাম বৃদ্ধি পায়নি। তাই বাজারের লিস্ট থেকে কিছু কাটছাঁট করছি।’
এমনই একজন লিয়াকত আলী।
রিকশাচালক সোহরাব মিয়াও নিত্যদিন ওই একই বাজারে বাজার করতে যান। তিনি জানান, ‘তেলের দাম বাড়ে, গ্যাসের দাম বাড়ে, সারের দাম বাড়ে। যার প্রভাব প্রত্যক্ষ ও পরক্ষোভাবে আমাদের ওপর আসে। কিন্তু আমরা যারা নিম্ন আয়ের মানুষ, তাদের আয় তো আর বাড়ে না। সব চাপ আমাদের ওপরে। সারা রাত রিকশা চালিয়ে যা পেয়েছি, তা থেকে গ্যারেজ ভাড়া, জমার টাকা দিয়েছি। বাকি যা আছে তাই দিয়েই কোনো মতো বাজার সারবো। যতদিন পারি এভাবে খাপ খায়িয়ে থাকবো। না পারলে সব ছেড়ে দেশে চলে যাবো।’
রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে সবজির দোকানিদের সঙ্গে দর কষাকষি করছিলেন তানভির আহমেদ নামে গণমাধ্যমকর্মী। কোনো দোকানে একটু কম পাওয়া যায় মূলতো সেটাই যাচাই করছিলেন তিনি। তানভির বলেন, ভাই আমরা দেশের মানুষের সমস্যার কথা তুলে ধরি। কিন্তু আমাদের সমস্যার কথা কেউ শোনে না। তিনি বলেন, ঘরে ছোট বাচ্চা। যতবার দুধ, সেরেল্যাক, ডায়পার কিনতে যাই, ততবারই দোকানিদের ভাষ্য দাম আগের চেয়ে বাড়তি। মাছ-মাংসের কথাতো বাদই দিলাম। রুই মাছ ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকার নিচে নেই। বাজার ভরা ইলিশ মাছ। কিন্তু কেনার সাধ্য খুব কম মানুষেরই আছে। সবজির দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। আগে ১শ’ টাকার তেল (অকটেন/পেট্রোল) কিনে ২-৩দিন বাইক চালাতাম। এখন ১ লিটার তেলের দামই ১৩৫ টাকা। এখনো বেতন হয়নি। গাড়িতে তেল নেই। তাই পায়ে হেঁটেই বাজারে আসছি। তানভিরের কথা শুনে এগিয়ে এসে ক্ষোভ ঝাড়লেন জাহিদ হাসান নামে এক ব্যাংক কর্মচারী। তিনি বলেন, করোনায় চাকরি চলে যায়। এখন সদ্য একটি ব্যাংকে ঢুকেছি। এখানো থার্ড পার্টির আন্ডারে। বেতন কম। এখন আয় আর ব্যয়ের হিসাব মেলাতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে। শুধু বাজার নয় সব জায়গাতেই বিশৃঙ্খল অবস্থা। তিনি বলেন, ঢাকার বেশির ভাগ গণপরিবহন গ্যাসে চললেও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তারাও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে।
শান্তিনগর বাজারে পুরো একদিন ঘুরেও বাজার করতে না পেরে দ্বিতীয় দফা শনিবার আবারো বাজার করতে যান ষাটোর্ধ্ব পঙ্কজ সাহা। পেশায় তিনি দর্জি। বাড়তি দ্রব্যমূল্য নিয়ে তিনি বলেন, এমনিতেই বাজার যে চড়া, তারপর শুক্রবার হয়েছে বড় লোকের বাজার। ওই দিন সব পণ্যের মূল্য দুইগুণ। সারা বাজার ঘুরেও কালকে সাধ্যমতো মাছ কিনতে পারিনি। তাই আজকে এসেছি। দেখি লাগাম পাই কিনা। টাকায় না হলে আজও আর মাছ খাওয়া হবে না। এরপর আবার ওষুধ কেনাও আছে। সংসার চালানো এখন প্রতিদিনই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানি না এরকম আর কতদিন পারবো।