ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

বাঙালির আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু: ড. মশিউর রহমান

স্টাফ রিপোর্টার

(১ বছর আগে) ১৫ আগস্ট ২০২২, সোমবার, ৮:৫১ অপরাহ্ন

mzamin

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘বাঙালির আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু। কিছুদিন আগে জাতির পিতার জন্মের একশ বছর পার করলাম। সেই ছবিটি যখন ভেসে আসে, তখন বারবার নিজের কাছে প্রশ্ন আসছিল বঙ্গবন্ধুর মতো কী এই শতবর্ষে আরেকটি লোক তৈরি হয়েছে? তার মতো স্মার্ট, তার মতো বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, দরাজ কণ্ঠ, পোশাকে-আশাকে, চলনে-বলনে, দৃঢ়তায় যেন ব্যতিক্রম ছিলেন তিনি। তার আগে পরে অনেক বাঙালি ছিলেন। কিন্তু দেশপ্রেম, দিনের পর দিন জেলে থাকা, নেতৃত্ব, ধৈর্য, ভালোবাসা-সবকিছুতেই তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমী গুণাবলীর অধিকারী এক মহানায়ক। নিজে সমাজকে দেখে, শুনে, আত্মস্থ করে যখন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেই সিদ্ধান্তে অবিচল থেকেছেন।’ সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি আয়োজিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে স্মারক বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।

ভিসি বলেন, ‘একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি যখন একে একে কাব্যগাঁথা রচনা করেছেন, মহাকাব্য বুনেছেন। একটি ছাত্রসংগঠন- ছাত্রলীগ সৃষ্টি, একটি দল আওয়ামী লীগ সৃষ্টি, একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ সৃষ্টি। অতঃপর ১৯৭৫ সালে এসে দ্বিতীয় বিপ্লব সৃষ্টি। যেটিকে আমরা শোষিতের গণতন্ত্র বলি। একটি মানুষের জীবনের একটি মাত্র কাজ করলে পৃথিবীর ইতিহাসে তার জায়গায় করে নেয়ার কথা।

বিজ্ঞাপন
একটি ছাত্রসংগঠন তৈরি করেই তিনি বিশ্বে অনন্য হতে পারতেন। একটি রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করে নিজেকে সারাজীবনের জন্য প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন। একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েও তিনি বিশ্বে নন্দিত নেতা হতে পারতেন। কিন্তু তিনি একই সময়ে সৃষ্টি করলেন ছাত্রসংগঠন, রাজনৈতিক দল, একটি জাতিরাষ্ট্র অতঃপর সমাজ পরিবর্তনের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ গড়ার দ্বিতীয় বিপ্লব-শোষিতের গণতন্ত্র। এভাবেই তিনি কারাবরণ করে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা অর্জন, একজন আদর্শ বাবা, আদর্শ স্বামী হিসেবে নিজেকে তৈরি করেছেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক - এঁদের সবাইকে তিনি পছন্দ করতেন। ধারণ করতেন।’

ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘কবি নজরুল, রবীন্দ্রনাথের সৃজনশীলতা বঙ্গবন্ধু ধারণ করেছেন। সবাইকে ধারণ করে একজন মানুষ মহাকাব্যের রচয়িতা হয়েছেন। অতঃপর ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে দৃপ্ত পায়ে হেঁটে রেসকোর্স ময়দানে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করে যখন বললেন ভাইয়েরা আমার। এই শব্দের মধ্যে যে বন্ধন, ঐক্যতা, তার মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ব। এর মধ্য দিয়ে কী অর্গানিক সলিডারিটি তিনি তৈরি করেছেন। তিনি ভাইয়েরা বলে আপন ভাইয়ের যে রক্তের বন্ধন সেটি তৈরি করলেন। বন্ধনে বন্ধনে আবদ্ধ করে সাড়ে সাত কোটি মানুষকে আহ্বান করলেন। তার নির্দেশনার বাইরে কোনো কিছুই ঘটেনি। অথচ তিনি তখন রাষ্ট্রশাসক ছিলেন না। তিনি জানতেন জনগণের হৃদয়ে আছেন, স্থান করে নিয়েছেন। তিনি যে ক্যারিশমেটিক লিডার ছিলেন তার প্রমাণ হচ্ছে তিনি ৭ই মার্চ এ ভাষণ দিয়েছেন। সেই ভাষণে তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী হননি। তিনি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বায়াফরার মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হতে চাননি।  তিনি একইসঙ্গে স্বাধীনতার জন্য মানুষকে প্রস্তুত করেছেন। আবার বিশ্বের কাছে বিচ্ছিন্নতাবাদী হননি। এটিই তো একজন ক্যারিশমেটিক লিডারের বৈশিষ্ট্য। সঠিক সময়ে তিনি ২৫শে মার্চের রাতে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। একজন নেতার ডাকে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিলেন। ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারালেন। অতঃপর এই রক্তঋণে জন্ম নিল স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র-বাংলাদেশ।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেন, ‘একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ রক্তাক্ত প্রান্তরে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে গেরিলা যোদ্ধাদের বিজয় নিশ্চিত করে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত মানুষকে নিয়ে দেশ পুনর্গঠনে হাত দিলেন।

প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগালেন। আজকে আমরা বাংলাদেশকে অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ বাংলাদেশই হতো। পৃথিবীর অনেক দেশ বাংলাদেশকে অনুসরণ করতো, এক ভিন্ন উচ্চতায় পৌঁছাতো দেশ। মানবিকতাকে বিবেচনায় নিয়ে বঙ্গবন্ধু যে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তা হচ্ছে দ্বিতীয় বিপ্লব। দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি পুঁজিবাদী বিশ্ব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যে নতুন অর্থনৈতিক কাঠামোর আত্মপ্রকাশ পৃথিবীতে ঘটতো, দক্ষিণ এশিয়ায় যে অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটতো সেটি হতো পৃথিবীর কাছে আগামী দিনের অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের প্রধান অবলম্বন।’

বিশিষ্ট এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, ‘কতটা অমানবিক, কতটা নারকীয়, অশুভ প্রেতাত্মা হলে বঙ্গবন্ধুর বুকে ট্রিগার চাপতে পারে। সেই ট্রিগারে শিশু পুত্র রাসেলকে হত্যা করতে পারে। কতটা নৃশংসভাবে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। তারা মনে করেছিল এর মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু বিস্মৃত হবেন। কিন্তু ঘাতকরা জানতো না পৃথিবীর বুকে ক্যারিশমেটিক লিডার জন্ম নিলে শুধুমাত্র তার ধারাবাহিকতা বা রুটিনাইজেশন অব ক্যারিশমা হয়। একজন ক্যারিশমেটিক লিডারের শারীরিক প্রস্থান ঘটলেও তার যাবতীয় আদর্শ টিকে থাকবে। ঘাতকরা জানতো না, বঙ্গবন্ধু আবার কোন রূপে ফিরে আসবে। বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা মানে শুধুমাত্র বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ায় ফিরে আসা নয়, বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা পৃথিবীব্যাপী আরও সুবিস্তৃত হওয়া। কেননা তিনি শোষিতের গণতন্ত্রের রূপকার এবং সেই রাষ্ট্রের স্রষ্টা যেটি মানবিক, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক। কিন্তু হত্যাকারীরা জানলো না বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসায় আত্মমর্যাদার পদ্মাসেতু তৈরি হবে, তাঁর ফিরে আসার মধ্য দিয়ে আগামী দিনে পৃথিবীর বুকে লাল-সবুজের পতাকায় এক ভিন্ন বাংলাদেশ তৈরি হবে। আর সেই বাংলাদেশ তৈরির কারিগর নতুন প্রজন্ম দেশমাতৃকাকে অসীম ভালোবেসে আত্মমর্যাদার বাঙালি আগামী দিনে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে- এ আমার গভীর বিশ্বাস।  আর ঘৃণা জানাবে ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের।’  অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ২৭ মিনিটের একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল (অব.)।   
 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

মোবাইল হ্যান্ডসেট/ ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ এখন সংকটে

মৌলভীবাজারে জাতীয় পার্টির সম্মেলন সম্পন্ন / ‘আমরা আওয়ামী লীগে নেই, বিএনপিতেও নেই

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status