বাংলারজমিন
ফসিয়ারের সংসার চলবে কীভাবে?
মাগুরা প্রতিনিধি
১৬ আগস্ট ২০২২, মঙ্গলবারনাম ফসিয়ার। বয়স ৪৫ বছর। পেশায় একজন রিকশাচালক। দারিদ্র্যের কষাঘাতে সংগ্রাম চালিয়ে চলছে তার সংসার। ২ মেয়ে ১ ছেলেকে নিয়ে ১৫শ’ টাকা বাসা ভাড়া দিয়ে ফসিয়ার থাকেন শহরের একটি ছোট্ট বাড়িতে। ১ মেয়েকে দিয়েছেন বিয়ে। অন্যরা পড়ছে প্রাথমিক স্কুলে। রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন আয় তার ৫০০-৬০০ টাকা।
ফসিয়ার জানান, বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের চরম দামবৃদ্ধিতে সংসার চালাতে পারছি না। প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে ঘর ভাড়াই দিতে পারছি না তারপরে চাল, ডাল, তেল দামবৃদ্ধিতে বাজারে যেতে পারছি না। ২ সপ্তাহ আগে মোটা চাল কিনতাম ৪৫-৪৮ টাকায়, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ টাকায়।
বিজ্ঞাপন
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে মাগুরার বাজারে চাল, ডাল, তেল, মুরগিসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে ডিমের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে হালিতে বেড়েছে ১০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এক হালি ডিম ছিল ৪৫ টাকা এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধি পাওয়াতে আমাদের পরিবহন খরচ বেড়েছে তাই দাম বেড়েছে।
এদিকে, মাগুরার পুরাতন বাজার সরজমিন ঘরে দেখা গেছে, সবজি ছাড়া সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে অনেক। বর্তমানে প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৮৫ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৯০ টাকা, ডাল মসুর (মোটা) ১৩০, ডাল মসুর দেশি ১৬০, মুগ ডাল কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে মুগ ডাল বিক্রি হয়ে হয়েছে ১৬০-৭০ টাকা, আটা প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা, ময়দা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়, পিয়াজ প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, রসুন প্রতি কেজি ৭৫-৮০ টাকা। শুধু অপরিবর্তিত রয়েছে সব ধরনের মসলার দাম।
অন্যদিকে, চালের বাজারে লেগেছে আগুন। চাল বিক্রিতে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন দামে বিক্রি করছেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে বেড়েছে ৬-৮ টাকা। অনেক ব্যবসায়ীর গোডাউনে চাল মজুত থাকলেও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহারে প্রতিদিনই হরহামেশা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। বর্তমানে প্রতি কেজি ২৮ বালাম চাল ৫৪-৬০, মিনিকেট মানভেদে ৬৫-৭৫ টাকা, বাসমতি ৭৫-৮৫ টাকা, স্বর্ণা মোটা চাল ৪৮-৫২ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, সপ্তাহের ব্যবধানে বয়লার মুরগি কেজিতে বেড়েছে ৬০ টাকা, যা আগে কেজিতে বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা, গরুর মাংস কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা, আগে বিক্রি হয়েছে ৬৮০ টাকা, কক মুরগি ২৬০, লেয়ার ২৬০, সোনালি মুরগি ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি বেড়েছে সবজির দাম। বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৫০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪৫-৫০ টাকা, কাকরোল প্রতি কেজি ৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেসরকারি কেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ফারুকুজ্জামান জানান, আমি শহরের একটি কেজি স্কুল পরিচালনা করি। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ফলে আমরা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছি। স্কুলে আয় নেই, ব্যয় আছে। এ রকম চলতে থাকলে আগামীদিনে স্কুল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। একাধিক খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে আমাদের মালামাল আমদানি করতে পরিবহন খরচ বেড়েছে অনেকগুণ। ফলে আমরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছি। সরকার যদি তেলের দাম কমিয়ে আনে তবে দাম কিছুটা কমতে পারে। আগামী দিনগুলোতে যদি তেলের দাম এ রকম থাকে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে তারা জানান।