ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

বিবিসি’র রিপোর্ট

আমাকে হয়তো ভিক্ষা করতে হবে

মানবজমিন ডেস্ক
১৫ আগস্ট ২০২২, সোমবার
mzamin

মাত্র এক সপ্তাহ হলো বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির অন্যতম বাংলাদেশ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করেছে শতকরা কমপক্ষে ৫০ ভাগ। তেলের মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধকে। এর প্রতিবাদে হাজারো মানুষ রাজপথে বিক্ষোভ করেছেন, যখন দক্ষিণ এশিয়ার আরেকটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশে আর্থিক সংকট ক্রমেই বাড়ছে। অনলাইন বিবিসিতে “বাংলাদেশ  ফুয়েল প্রাইসেস: ‘আই মাইট স্টার্ট বেগিং ইন দ্য স্ট্রিট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন সাংবাদিক রজিনি বিদ্যানাথান। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। পেট্রোলের দাম ৮৬ টাকা থেকে লিটারে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৩০ টাকা। ডিজেল এবং কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়েছে শতকরা ৪২.৫ ভাগ।  ট্রাকে সবজি পরিবহন করেন মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম। তিনি ট্রাকে পেট্রোল ভরার জন্য লাইনে অপেক্ষায় ছিলেন। বলেছেন, তার ভয় হচ্ছে, শিগগিরই তাকে ভিক্ষায় নামতে হতে পারে।

বিজ্ঞাপন
৯ বছর ধরে তিনি ট্রাকে সবজি পরিবহন করেন। কিন্তু হঠাৎ এত দাম বৃদ্ধিতে মোহাম্মদ নূরুল ইসলামকে মৌলিক চাহিদা মেটাতে লড়াই করতে হচ্ছে। তার বাড়ি দিনাজপুরে। ৩৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম তার নিজের জেলা থেকে টাটকা সবজি রাজধানী ঢাকা এনে নামিয়ে দেন।  তার আছে ছোট ছোট দুটি সন্তান ও পিতামাতা। তাদেরকে দেখাশোনা করতে হয়। তিনি বলেছেন, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির কারণে তার মালিক তাকে পূর্ণ বেতন দিতে সক্ষম হচ্ছেন না। তার ভাষায়- যখন বাজারে যাই, পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত খাবার কিনতে পারি না। যদি জ্বালানির মূল্য এভাবে বাড়তেই থাকে, তাহলে পিতামাতার দেখাশোনা করা অথবা সন্তানদেরকে স্কুলে পাঠানো আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। যদি এই কাজ হারাই, তাহলে আমাকে রাস্তায় ভিক্ষা করতে হবে।  কমপক্ষে ১৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষের এ দেশে একই রকম পরিস্থিতিতে পড়েছেন অগণিত মানুষ। অন্য অনেক দেশের মতোই ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রান্তসীমায় পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিবিসিকে বলেছেন, আমরা জানি মূল্যবৃদ্ধি একটি বড় বিষয়। কিন্তু বিদেশে যখন মূল্যবৃদ্ধি হয়, তখন আমরা কি করতে পারি?  সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, অতীতে মূল্যবৃদ্ধি এড়াতে ভর্তুকি দিয়ে এসেছে তার প্রশাসন। কিন্তু এখন দাম বৃদ্ধি অনিবার্য হয়ে উঠেছে। তিনি আরও বলেন, যদি বৈশ্বিকভাবে দাম কমে আসে, তাহলে আমরা এই মূল্য সামঞ্জস্য করার চেষ্টা করবো।  গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধির খবর প্রকাশের পর দেশজুড়ে পেট্রোল স্টেশনগুলোতে বিক্ষোভ করেন হাজারো মানুষ। মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবিতে শ্রীলঙ্কায় যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে এ দৃশ্য। বাংলাদেশে এই প্রতিবাদ বিক্ষিপ্ত হলেও, ক্ষোভ ও অসন্তোষ বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসলেও নসরুল হামিদ বিশ্বাস করেন শ্রীলঙ্কার পরিণতি এড়াতে পারবে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের পর দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় দেশ হিসেবে জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফের কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। কিন্তু মোসাম্মৎ জাকিয়া সুলতানা তার অসুস্থ সন্তানকে চিকিৎসার জন্য বাসভাড়া দিতে পারেন না। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এ জন্য তিনি শুধু অত্যাবশ্যক এমন কাজের জন্য বাইরে বের হচ্ছেন। হাসপাতালে যাওয়ার পথে তিনি বাস থেকে বিবিসি’র সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তার টিনেজ মেয়েটি ছিল পাশে। তিনি বলেছেন, খাদ্যের যে মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে এরই মধ্যে, তা তাকে বড় রকম আঘাত করেছে।  জাকিয়া সুলতানা বলেন, শুধু বাসভাড়াই বাড়েনি। বাজারে সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। এখন পরিবারের খরচ চালাতে আমাকে কঠিন এক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। বেড়েছে রিকশা ও অন্য পরিবহনের ভাড়াও। এ জন্য ঘরের বাইরে বের হওয়া কঠিন।   দিনাজপুরের আরও প্রত্যন্ত অঞ্চলের খবর একই রকম। ফুলবাড়ীতে ধানের ক্ষেতে কাজ করেন শিউলি হাজদা। যে ধান তিনি উৎপাদন করেন, তা কেনার সামর্থ্য তার নেই বললেই চলে। তার ভাষায়, সম্প্রতি আকস্মিকভাবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে কৃষিকাজ অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। আমরা যে মজুরি পাই তা দিয়ে জীবন চলে না। সব কিছুর দাম বেশি। সন্তানদেরকে খাওয়ানোর মতো পর্যাপ্ত রেশন কিনতে পারি না আমরা।  বাংলাদেশে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শিউলি হাজদাদের মতো মানুষের উপার্জন অর্থহীন হয়ে গেছে। শিউলি বলেন, সরকার যদি শিগগিরই জ্বালানির দাম না কমায় তাহলে আমাদেরকে অনাহারে মরতে হবে।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status