দেশ বিদেশ
জামায়াতের নিবন্ধন শুনানিতে প্রধান বিচারপতি
হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল এটিই প্রথম
স্টাফ রিপোর্টার
১৪ মে ২০২৫, বুধবার
রাজনৈতিক দল হিসেবে হাইকোর্টের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি এটিই প্রথম বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। মঙ্গলবার সকালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে পেতে করা আপিলের শুনানিতে এ কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আজ (বুধবার) ফের শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির। ইসি’র পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম। সকাল ১০টা ২ মিনিটের দিকে শুনানি শুরু করেন জামায়াতের আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক। তিনি জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেয়ার পক্ষে আপিল বিভাগে যুক্তি তুলে ধরেন। একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, এটিই তো প্রথম ঘটনা, যাতে একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে বাতিল হয়েছে। জবাবে আইনজীবী বলেন, হ্যাঁ, ইতিহাসে এটাই প্রথম আদালতের রায়ে একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। আদালতে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের ও এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল উপস্থিত ছিলেন। শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আদালতকে জানিয়েছি যখন থেকে হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন ইস্যুতে হাত দিয়েছে, তখন থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে আপিল বিভাগের রায়ের অপেক্ষায় ইসি। জামায়াতের প্রতীক নিয়ে ইসি আইনজীবী আদালতকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্টের প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের পর জামায়াতের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা বাদ দেয় ইসি। ফুল কোর্ট সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রতীকের তালিকা থেকে দাঁড়িপাল্লা বাদ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে ইসি’র আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এর সঙ্গে নিবন্ধনের বিষয়টি সম্পর্কিত নয়। নিবন্ধন ও প্রতীক দু’টি আলাদা বিষয়। এখন তারা (জামায়াত) অন্য কোনো প্রতীক বরাদ্দ চাইলে আইন অনুসারে তা বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে। এর আগে রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেয়া নিবন্ধন সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ রায় দিয়েছিলেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে দলটির নিবন্ধন দেয়া অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে অপর বিচারপতি নিবন্ধন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) করা দলটির আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির পক্ষে মত দেন। পরে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা বরাদ্দ না দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
চিঠিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের উপস্থিতিতে ১২ই ডিসেম্বর (২০১৬ সাল) ফুল কোর্ট সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, দাঁড়িপাল্লা ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে একমাত্র সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হবে। অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার না করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়। চিঠির শেষাংশে বলা হয়, এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক হিসেবে বা কোনো নির্বাচনে প্রার্থীর প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা বরাদ্দ প্রদান না করা এবং যদি বরাদ্দ করা হয়ে থাকে, তাহলে ওই বরাদ্দ বাতিল করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। ২০২৩ সালের ১৯শে নভেম্বর রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে দেয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে দলটির করা আপিল ও লিভ টু আপিল খারিজ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
আপিলকারীর পক্ষে সেদিন কোনো আইনজীবী না থাকায় আপিল বিভাগ ওই আদেশ (ডিসমিসড ফর ডিফল্ট) দেন। পরে দেরি মার্জনা করে আপিল ও লিভ টু আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে দলটির পক্ষ থেকে পৃথক আবেদন করা হয়। শুনানি নিয়ে গত বছরের ২২শে অক্টোবর আপিল বিভাগ আবেদন মঞ্জুর (রিস্টোর) করে আদেশ দেন। এরপর জামায়াতের আপিল ও লিভ টু আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। গত ৩রা ডিসেম্বর শুনানি শুরু হয়। এরপর আরও কয়েকদিন শুনানি হয়। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল শুনানি হয়।
২০০৯ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি।