বাংলারজমিন
চরাঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিশুরা
সদরপুর (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
১৪ মে ২০২৫, বুধবারঅবজ্ঞা অবহেলা আর চরম উদাসীনতার কারণে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরাঞ্চলের কোমলমতি শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরজমিন উপজেলার চরাঞ্চলের বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন, স'ানীয় অভিভাবক এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির অনভিজ্ঞতার কারণে দায়িত্ব পালনে অবজ্ঞা, নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ানোর প্রবণতার কারণে শিশুদের শিক্ষাদানে অবহেলা এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা দপ্তরের চরাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো নিয়মিত মনিটরিং-এর ব্যাপারে চরম উদাসীনতার কারণে উপজেলার চরাঞ্চল বলে পরিচিত চর মানাইর, চর নাছিরপুর ও দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের শত শত কোমলমতি শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে সদরপুর উপজেলার চরাঞ্চলে এই আইন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সদরপুর উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, চর মানাইরে ১২টি চর নাছিরপুরে ১১টি ও দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নে ১০টিসহ ৩ ইউনিয়নে মোট ৩৩টি প্রথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। চরাঞ্চলের এই বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা জনগণের দৌরগড়ায় পৌঁছে দেয়ার প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হলেও নজরদারির অভাবে উপজেলার চরাঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নেশাখোরদের আস্তানায় পরিণত হচ্ছে।
অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, চরাঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস'া নাজুক হওয়ার পেছনে রয়েছে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা। উপজেলার দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া, চর নাছিরপুর ও চর মানাইর ইউনিয়নগুলো পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর তীর ঘেঁষে অবসি'ত হওয়ায় এলাকাগুলো অত্যন্ত দুর্গম এলাকা হিসেবে পরিচিত। এই এলাকার মানুষ কৃষিকাজ, মাছধরা ও দিনজুররের ওপর নির্ভরশীল। নদী ভাঙনের ফলে অনেক স্কুল বিধ্বস্ত হওয়া ছাড়াও নদীগর্ভে চলে যায়। ফলে অনেক স্কুল পুনঃনির্মাণ করাসহ স'ানান্তরিত করতে হয়। তাছাড়া চরাঞ্চলের রাস'াঘাট না থাকায় অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় মাইলের পর মাইল শুধু বালু চর। আবার ওই এলাকার বেশির ভাগ পরিবার অসচ্ছলতার কারণে ছেলে-মেয়েদেরকে বিদ্যালয়ে পড়াশোনার চাইতে ক্ষেত-খামারে কাজ করাতেই আগ্রহী হচ্ছেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনিভজ্ঞতার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। ফলে ক্রমেই কমছে শিক্ষার্থীদের উপসি'তি। এলাকার সচেতন মহল মনে করছেন চরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এলাকাভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ, দরিদ্র পরিবারের বাবা-মাকে তার সন্তানদের বিদ্যালয়মুখী করতে উৎসাহিত করা এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অধিদপ্তরের চরাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো নিয়মিত মনিটরিং করলে হয়তোবা চরাঞ্চলের কোমলমতি শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেয়া সম্ভব।