ঢাকা, ১৪ মে ২০২৫, বুধবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

দেশ বিদেশ

উপসাগরীয় অঞ্চলে ট্রাম্পের সফর শুরু টার্গেট বিনিয়োগ আকর্ষণ

মানবজমিন ডেস্ক
১৪ মে ২০২৫, বুধবার
mzamin

উপসাগরীয় অঞ্চলে চার দিনের সফরে মঙ্গলবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পৌঁছেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এবারের সফরে ট্রাম্প আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানোর ওপর জোর দিবেন বলে আশা করা হচ্ছে। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গাজা ইস্যু বেশি প্রাধান্য পাওয়ার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে  হোয়াইট হাউসে ফেরার পর এটাই ট্রাম্পের প্রথম আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রীয় সফর। প্রথম মেয়াদের পর বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে প্রথমেই সৌদি আরবকে বাছাই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যা অন্যান্য প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে বিরল। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়, শক্তিশালী মার্কিন ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বুধবার কাতার এবং বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাবেন ট্রাম্প। এর আগে রিয়াদে সৌদি-মার্কিন বিনিয়োগ ফোরামে যোগ দিয়েছেন তিনি। এবারের সফরে ইসরাইলে কোনো যাত্রাবিরতি দিবেন না রিপাবলিকান এই নেতা। যাতে ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ মিত্রের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উন্মুক্ত ফোরামে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের বাণিজ্যিক সম্পর্কে বেশ প্রশংসা করা হয়। সেখানে রিয়াদের বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ বলেন, যদিও আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি জ্বালানি নির্ভর। তবে আমাদের রাজ্যে বিনিয়োগ এবং ব্যবসায়িক সুযোগগুলো বহুগুণে প্রসারিত এবং বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্রাম্প সৌদিতে পা রাখার আগে বিনিয়োগমন্ত্রী বলেছিলেন, সৌদি ও যুক্তরাষ্ট্র যখন একত্রিত হয় তখন খুব ভালো কিছু ঘটে। পক্ষান্তরে যৌথ উদ্যোগ ছাড়া এমন দুর্দান্ত কিছু ঘটে না। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। তবে ট্রাম্পের প্রত্যাশা এর পরিমাণ বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১২১ লাখ ৫২০ হাজার কোটি টাকা) করা হবে। সৌদি-মার্কিন বিনিয়োগ ফোরামের অনুষ্ঠান শুরু হয় একটি ভিডিওর মাধ্যমে। যেখানে একটি বাজপাখি এবং ঈগলের উড়ে চলার দৃশ্য দেখানো হয়। এর মাধ্যমে দুই দেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানের সম্মুখ সারিতে ব্ল্যাকরক-এর নির্বাহী পরিচালক ল্যারি ফিঙ্ক, ব্ল্যাকস্টোনের নির্বাহী পরিচালক স্টিপেল এ. সোয়ার্জম্যান, মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এবং সৌদি আরবের বাণিজ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আল জাদান উপস্থিত ছিলেন। রিয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবতরণের পর এক ফোরাম প্যানেলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ফিঙ্ক বলেন, ২০ বছরে তিনি ৬৫ বারের বেশি সৌদি আরব ভ্রমণ করেছেন। তিনি যখন প্রথম সফর শুরু করেছিলেন তখন সৌদি আরব অনুসারী ছিল। কিন্তু এখন দেশটি চালকের আসনে বসতে যাচ্ছে। তেল ছাড়াও তারা তাদের ব্যবসা আরও বিস্তৃত করেছে। 

সৌদি যুবরাজের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক: সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ট্রাম্পের একটি প্রাথমিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওসহ বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়েছিলেন সৌদি যুবরাজ। তাকে দেখামাত্র দূর থেকেই হাত নাড়েন ট্রাম্প। এরপর কাছে এসে উভয় নেতাই করমর্দন করেন। ভিশন- ২০৩০ নামে একটি বড় সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে সৌদি আরবের আঞ্চলিক অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার ওপর জোর দেন বিন সালমান। যার মধ্যে রয়েছে ‘গিগা-প্রকল্প’। যেমন এনইওএম প্রকল্প, যেটি বেলজিয়ামের সমপরিমাণ একটি ভবিষ্যৎ মেগা প্রকল্প। ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং তেলের দাম পড়ে যাওয়ার ফলে সৌদিকে বর্তমানে কিছুটা ব্যয় সংকোচন করতে হয়েছে।

নিরাপত্তা ও তেলনির্ভর দীর্ঘ  মৈত্রী: সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক একটি মজবুত চুক্তির ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। যেখানে সৌদি আরব তেল সরবরাহ করে আর যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার তুরস্কে ভ্লাদিমির পুতিন ও ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠকে অংশ নিতে পারেন বলে জানিয়েছেন। তবে জেলেনস্কির এক সহযোগী জানান, পুতিন বৈঠকে অংশ নিলে তবেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সেখানে যাবেন। পুতিন এখনো তার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেননি এবং জেলেনস্কির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

ডনাল্ড ট্রাম্প এমন এক সময় সৌদি আরব সফর করছেন যখন বিশ্ব জুড়ে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে। ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেন সংকট নিরসনের পাশাপাশি গাজায় ১৯ মাস ধরে চলা যুদ্ধে নতুন ত্রাণ ব্যবস্থার জন্য চাপ দিচ্ছে এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে একটি নতুন যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে রাজি করানোর চেষ্টা করছে। ইসরাইল ট্রাম্পের সফরে দেশটি উপেক্ষিত হওয়ায় আপাতত মুখে কিছু না বললেও, ইসরাইলের গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওয়াশিংটনের বিরক্তিও বাড়ছে, কারণ গাজা যুদ্ধ বন্ধ করতে ইসরাইল ব্যর্থ হচ্ছে। এদিকে সপ্তাহান্তে ওমানে মার্কিন ও ইরানি কর্মকর্তাদের মধ্যে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। যাতে ওয়াশিংটন সন্তুষ্ট হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কূটনৈতিক চেষ্টা ব্যর্থ হলে তিনি সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নূরনিউজ জানায়, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ মোহাম্মদ বাঘেরি বলেছেন, প্রতিবেশী দেশগুলোকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে এবং ইরানের বিরুদ্ধে আক্রমণ হলে তার জবাব কঠোর হবে। ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের অস্ত্র চুক্তি করতে যাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে রয়টার্স। 
এতে উন্নতমানের বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম ও গোলাবারুদ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ সমপ্রতি বলেছেন, আব্রাহাম চুক্তির সমপ্রসারণে শিগগিরই অগ্রগতি হবে বলে তিনি আশা করছেন। প্রথম দফার চুক্তিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status