দেশ বিদেশ
২৩টি আইজিডব্লিউ কোম্পানির শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা
স্টাফ রিপোর্টার
১ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবারবাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের-বিটিআরসি’র এক সিদ্ধান্তের কারণে ২৩টি আইজিডব্লিউ কোম্পানির শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অরাজক অবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানে। অভিযোগ রয়েছে, ফ্যাসিস্ট সরকার আমলে মাত্র ছয়টি কোম্পানি আন্তর্জাতিক কলের ৯২১ কোটি টাকা লুট করে পালিয়ে গেছে, সে রকম পরিস্থিতি আবারো তৈরি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। আইওএফ (ইন্টারন্যাশনাল গেইটওয়ে অপারেটরস ফোরাম)-এর টপোলজি বাতিল করে পুরো খাতটিকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিয়েছে বিটিআরসি।
আন্তর্জাতিক গেটওয়ে অপারেটরস ফোরাম (আইওএফ) বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর এই সিদ্ধান্তে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। আইওএফ-এর দাবি, এসব বাতিলের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি এবং অভিযুক্ত পক্ষগুলোকে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেয়া হয়নি।
আইওএফ প্রেসিডেন্ট আসিফ সিরাজ রব্বানি বলেন, বিটিআরসি কোনো ধরনের পূর্ব আলোচনা ছাড়াই চুক্তি বাতিল করেছে এবং আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়নি, যা অত্যন্ত হতাশাজনক এবং অবিবেচনাপ্রসূত। অন্তত একটি শোকজ নোটিশ পেলেও আমরা অভিযোগের জবাব দিতে পারতাম।
অংশীজনের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা ছাড়া অনেকটা লুকোচুরি ও তড়িঘড়ি করে নেয়া এই সিদ্ধান্তকে তিনি উদ্দেশ্যমূলক ও বিনিয়োগ বিরুদ্ধ বলে অভিহিত করেন।
তিনি দাবি করেন, আইওএফ গঠনের আগে ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ছয়টি আইজিডব্লিউ যেখানে প্রায় ৯২১ কোটি টাকা খেলাপি হয়েছিল, সেখানে ২০১৫ সালে আইওএফ গঠনের পর থেকে রাজস্ব খাতে মোট ৫,৬০৭ কোটির বেশি টাকা জমা হয়েছে। যার মধ্যে ৪,৩৪২ কোটি রাজস্ব অংশীদারিত্ব, ৬৩৫ কোটি লাইসেন্স ফি এবং ৬৩০ কোটি টাকায় ভ্যাট ও অগ্রিম আয়কর রয়েছে। কাজেই এরকম গুরুত্বপূর্ণ একটি সংগঠনকে কোনো কিছু না জানিয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার একতরফা সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
রব্বানী দাবি করেন, ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দায়িত্ব নিয়ে তিনি প্রথমেই গউঝ (মার্কেট ডেভেলপমেন্ট এক্সপেন্সেস) ফান্ড বাতিল করেন। এই বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে বের করা হোক কারা কীভাবে অনিয়ম করেছে। আমরা নিয়ম মেনে ব্যবসা করতে চাই। ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজনের অনিয়মের দায় আমাদের কেন নিতে হবে?
আইওএফ-এর চিফ অপারেটিং অফিসার মুশফিক মনজুর জানান, প্রতিদিন এবং মাসিক ভিত্তিতে আইজিডব্লিউ ও আইওএস অনুযায়ী ট্রাফিক রিপোর্ট এবং বিস্তারিত আর্থিক তথ্য ধারাবাহিকভাবে কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে। আজ পর্যন্ত বিটিআরসি’র কোনো নির্দেশনা আইওএফ অগ্রাহ্য করেনি।
২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত সব আইজিডব্লিউ অপারেটর বিটিআরসিকে নিয়মিত পেমেন্ট করে আসছে। কেবল দুটি আইজিডব্লিউ’র অ্যাকাউন্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ফ্রিজ করে। ফলে তাদের সামান্য কিছু অর্থ বকেয়া পড়ে যায়। ওই অ্যাকাউন্টগুলোও বর্তমানে সচল। একটি অপারেটর ইতিমধ্যে পাওনা পরিশোধের জন্য আবেদন করলেও বিটিআরসি’র দিক থেকে এখনো কোনো সাড়া মেলেনি।
২০২৪ সালের ৩রা ডিসেম্বর বিটিআরসি তিনটি আইজিডব্লিউ-এর কার্যক্রম স্থগিত করে। অভিযোগ ছিল-বকেয়া পাওনা ও কল বিতরণে অসমতা। আইওএফ বলছে, এ সিদ্ধান্ত কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা ছাড়াই এবং আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে নেয়া হয়েছে।
চুক্তি পরিবর্তনের অভিযোগ প্রসঙ্গে আইওএফ-এর ব্যাখ্যা হচ্ছে বিটিআরসি’র পূর্বানুমোদন ছাড়া কখনো কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। ২০২৪ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর রেভিনিউ শেয়ারিং পার্টনার (আরএসপি) অনুপাতে সামান্য পরিবর্তনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিটিআরসি অনুমোদন না করায় পরে তা আর কার্যকর হয়নি।
এ ছাড়াও ৩রা ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে বিটিআরসি তিনটি ধারা পরিবর্তনের নির্দেশনা দেয়। আইওএফ একটি ধারা নির্দেশনা গ্রহণ করে। বাকি দুইটির জন্য বিকল্প প্রস্তাব দেয়, যা ৩০শে জানুয়ারি ২০২৫ সালে অনুমোদনের জন্য জমা দেয়। ৭ই ফেব্রুয়ারি একটি বৈঠকে আইওএফ প্রেসিডেন্ট কমিশনের সামনে ফোরামের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। সে বিষয়ে এখনো বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব আসেনি।
বিটিআরসি আইজিডব্লিউ আয়ের ৪০ শতাংশ পায়, তাই আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি ও পেমেন্ট তাদেরই করা উচিত। কিন্তু আইওএফ-কেই তারা এই কাজ করার নির্দেশনা দেয়।
নেটওয়ার্ক টপোলজি বাতিল প্রসঙ্গে এই খাত সংশ্লিষ্টদের অভিমত হলো- বিটিআরসি’র এই একতরফা পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশনকে অধারাবাহিক ও অস্থিতিশীল করে তুলবে এবং আইওএফ গঠনের পর এই খাতে যে অগ্রগতি ও শৃঙ্খলা এসেছে, তা বিনষ্ট করতে পারে।
বিটিআরসি’র কমিশনার (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইকবাল আহমেদ, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি (অব.) এ বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, তাদের বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়ার বিষয়টি ঠিক না। তিনি বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় লাইসেন্স বেশি নিয়েছে। বিডিং বাতিল হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা নিয়মিতভাবে পরপর ৩টি বৈঠক করেছি। এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আমরা তো তাদের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলছি।