প্রথম পাতা
গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশে বক্তারা
সরকারকে হটাতে হবে
স্টাফ রিপোর্টার
১২ আগস্ট ২০২২, শুক্রবারআত্মপ্রকাশের পর প্রথম জনসমাবেশ করেছে নবগঠিত ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। জ্বালানি তেলের দাম ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাত দল নিয়ে গঠিত মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। গণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার হঠানোর আহ্বান জানিয়ে নেতারা পাড়ায় পাড়ায় আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন। ‘ফ্যাসিবাদ হটাও, শাসন ব্যবস্থা বদলাও এবং জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি রুখে দাঁড়াও’ শীর্ষক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)’র সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য শতকরা ৫০ ভাগ বৃদ্ধি করেছে সরকার। বিশ্বের কোথাও ৫০ ভাগ দাম বৃদ্ধির নজির নেই। অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গরিব মানুষের কষ্ট হয়। এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হবে। আমাদের এ আন্দোলন কোনো ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের আন্দোলন বিদ্যমান ব্যবস্থার বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের কোনো নেতার অতীতে আপস করার কোনো ইতিহাস নেই। আমাদের লড়াই গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই, আমাদের এই লড়াইয়ে জিততে হবে। এই সরকারকে হটাতে হবে। এই সরকারের লোকদের বলবো, আপনারা কীভাবে দেশ ছেড়ে পালাবেন সেই চিন্তা করুন। আ স ম রব আরও বলেন, আমাদের আজকের এই লড়াইয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সরকার বলেছে, মরে গেলেও ক্ষমতা ছাড়বে না। আর আমাদের জীবন থাকতে কখনো আপস করবো না। মরতে হলে মরবো, স্বৈরাচারকে নামিয়ে তারপরে মরবো। আমাদের এই আন্দোলন সাত দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। রাস্তায় গণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন নিশ্চিত করতে হবে। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারা চোর, ডাকাত ও লুটেরা। আমরা দেশকে, দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য সরকারকে হটাতে চাই।
আমরা শুধু সরকারের পদত্যাগই চাই না। আমরা চাই এদেশের গঠনমূলক পরিবর্তন। তিনি সরকারি দলকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, সরকারের যেকোনো মন্ত্রী ভোটে দাঁড়াবে আর আমাদের গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে একজনকে সিলেক্ট করবো। তাহলে দেখা যাবে কে জেতে? আওয়ামী লীগ দেশের একটি প্রবীণ দল। কিন্তু দেশের জনগণ এখন তাদের ঘৃণা করে। জনগণ আর তাদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না। মান্না বলেন, এই সংবিধান আমরা বদলে দিতে চাই। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, ন্যায়বিচার করতে চাই। ১৪ বছর ধরে সরকার মানুষের অধিকার খর্ব করেছে। গণতন্ত্র মঞ্চের কেউ সেটি করেনি। তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর ৭০ হাজার কোটি টাকা সরাসরি পাচার হয়, আর গোপনে ২ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়। এই পাচারকারীদের নিয়ে সরকার কথা বলে না। পিকে হালদার বলেছে, তার সঙ্গে অনেক এমপি, মন্ত্রী ও রাঘব-বোয়াল জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চ নিয়ে সরকারের ভয় শুরু হয়েছে। ভয় পাওয়ার কারণ হলো, গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা সাধারণ মানুষের পক্ষে কথা বলবে। আমরা শুরু থেকেই বলছি, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আর না হলে কঠিন থেকে কঠিনতর আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে হটানো হবে।
তিনি আরও বলেন, মন্ত্রীরা বলছেন কেউ না খেয়ে ও বিনা কাপড়ে মারা যাচ্ছে না। মানুষ কী উলঙ্গ হয়ে এসে বলবে আমি অভাবে না খেয়ে আছি? মন্ত্রীরা জনগণকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করছেন। এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে এবং অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশ আজ ডাকাত ও দুর্নীতিবাজদের খপ্পরে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার মধ্যরাতে হঠাৎ করে তেলের দাম বাড়িয়ে দিলো। এক লাফে ৪১ শতাংশ থেকে ৫১ শতাংশ। এ দাম বাড়ানোর মানে কি? এ সিদ্ধান্ত সারা দেশের মানুষের জীবনকে নাভিশ্বাসের দিকে নিচ্ছে। তিনি বলেন, এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে প্রত্যাহার করতে হবে। ফ্যাসিবাদ কায়েম করে তারা গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর বলেন, সরকারের পতন ছাড়া এই জাতির মুক্তি হবে না। ক্যাবিনেটে নাকি আলোচনা হয় দেশের এমন বারোটা বাজিয়ে যাবো, ওরা ক্ষমতায় এসে দেশ চালাতে পারবে না। দেশকে তারা সেই দিকে নিয়ে যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কায় যেমন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন দখল করেছিল, দেশে শুধু সেটাই বাকি রয়েছে। কাজেই এই দেশের জনগণকে সেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
এই সরকারকে আর সুযোগ দেয়া যাবে না। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে হবে। আমাদের লক্ষ্য এক, এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে সরিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। সকল বিরোধীদলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। নুর আরও বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে। কৃষিপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষক সেভাবে উৎপাদন করতে পারবে না। কৃষকরা আজ কৃষিকাজ ছেড়ে শহরে ভিড় জমাচ্ছে। গার্মেন্টসহ ছোট-ছোট কারখানায় কাজ নিচ্ছে। ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, গত ৮ বছরে বিপিসি তেল থেকে ৪৬ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। তাহলে সেই টাকা কোথায় গেল? আমাদেরকে কেন রিজার্ভে হাত দিতে হবে? আজকে তেলে শূল্ক কমিয়ে আপনারা ৭০ টাকা দাম রাখতে পারতেন। কিন্তু তা না করে এক লাফে তেলের মূল্য ৪৬ টাকা বৃদ্ধি করেছেন। লুটপাট এবং বিদেশে টাকা পাচারের জন্য। অবিলম্বে এই স্বৈরাচারী, ফ্যাসিবাদী সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে। আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ এই শাসনের অবসান ঘটাতে এসেছি। যতদিন পর্যন্ত এই সরকারকে হটাতে না পারবো ততদিন আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, দেশে এই সংকট রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে হয়নি, সংকট তৈরি হয়েছে ডলার পাচার ও রিজার্ভ চুরির কারণে।
সুইস ব্যাংকে কারা টাকা রেখেছেন, তাদের টাকার উৎস কি? সরকার গত ১০ বছরে সুইস ব্যাংকের কাছে পাচারকারীর ডাটা চায়নি। সরকার সংসদে বসে পাচারের পক্ষে আইন করে। তারা ক্যাপাসিটির নাম করে কমপক্ষে ৭০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। মানুষের মুখের কথাকে বন্ধ করতে তারা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বানিয়েছে। দেশকে চুরি, লুট, খুন ও গুম থেকে রক্ষা করতে শেখ হাসিনাকে পরিবর্তন করতে হবে। আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ এই রাষ্ট্র ও সরকার কাঠামো ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে চাই। আমাদের এক দফা, সরকার এবং সরকার পরিচালনার আইন কানুনকেও যেতে হবে। সমাবেশ শেষে মঞ্চের নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে হাইকোর্ট মোড় হয়ে পল্টনে গিয়ে শেষ হয়।