ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

‘লাল দাগে’ যে ক্ষোভ সিলেটে

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১২ আগস্ট ২০২২, শুক্রবার
mzamin

পথ খুঁজছেন মদিনা মার্কেটের ভবন মালিকরা। পাঠানটুলা ও আখালিয়া এলাকার মালিকরাও সঙ্গী হয়েছেন। ‘লাল দাগে’ তাদের মধ্যে আতঙ্ক। দেখা দিয়েছে ক্ষোভও। যেকোনো সময় আসতে পারে বুলডোজার। ভাঙা হতে  পারে ভবন। এই মূহূর্তে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক নতুন করে বর্ধিত করার কোনো প্রক্রিয়া নেই। পানি নিষ্কাশনের ড্রেন নির্মাণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এটি কত বড় হবে? পাঁচ অথবা ছয় ফুট। জায়গা ছাড়তে রাজি জমির মালিকরা।

বিজ্ঞাপন
তবুও নাছোড়বান্দা সওজ কর্মকর্তারা। লাল দাগ দিয়ে রেখেছেন। এর আগে করেছেন মাইকিংও। বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছেন পত্রিকায়। কিন্তু ভবনের মালিকরা বলছেন অন্য কথা। তাদের দাবি- যেসব ভবনে লাল দাগ দেয়া হয়েছে সেগুলোর মাঠ পর্চা, তশদিক সবই তাদের নামে। সিটি করপোরেশন থেকে অনুমতি নিয়ে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। দেয়া হচ্ছে হোল্ডিং ট্যাক্সও। এরপরও কীভাবে তারা অবৈধ- প্রশ্ন তুলে গত মঙ্গলবার মদিনা মার্কেট এলাকায় ভবন মালিকরা বৈঠক করেছেন। সেখানে তারা একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছেন।

 এই কমিটি আলোচনা, আইনি লড়াই সব কিছুর জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ভবন মালিক ও ব্যবসায়ীরা। নগরের আম্বরখানা থেকে সুনামগঞ্জ সড়ক শুরু। এটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তা। কয়েক মাস আগে সওজ’র পক্ষ থেকে রাস্তার পাশ থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নোটিশ জারি করা হয়। এরপর মাসখানেক আগে অর্ধশতাধিক ভবনে লালদাগ দেয়া হয়। এতে দেখা গেছে; কোথাও কোথাও ৫০ থেকে ১০০ ফুট ভিতর পর্যন্ত দাগ পড়েছে। এরই মধ্যে তিনটি ভবন ভাঙা হয়েছে। পাঠানটুলা এলাকায় জামান ভিলা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আহাদ ভিলা সহ আরও দু’টি ভবন ভাঙা হচ্ছে। ভবন মালিক ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন- তাদের সময় দেয়া হয়নি। হঠাৎ করেই ভাঙা শুরু করে তিনটি ভবন। এতে সওজ’র কর্মকর্তাদের চেয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের উৎসাহ বেশি দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন তারা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভবনের মালিকরা জানিয়েছেন- এবার পাঠানটুলা এলাকার লাভলী রোড থেকে আখালিয়া এলাকার সিনেমা হল পর্যন্ত এলাকার রাস্তার দু’পাশের ভবনে লাল দাগ দেয়া হয়। এতে সওজ’র পক্ষ থেকে যুক্তি উপস্থাপন করে বলা হয়- ১৯৭২ সালে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। 

ওই অধিগ্রহণের ফলে লাল দাগ দেওয়া হচ্ছে। এবং এই স্থাপনাগুলোকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে সেগুলো ভাঙা হচ্ছে। তবে- মদিনা মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী ও ভবন মালিক হাবিবুর রহমান গতকাল জানিয়েছেন- ১৯৭২ সালে যে প্রজেক্টের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিলো; পরবর্তীতে সেই প্রজেক্ট ১৯৮৭ সালে বাতিল করা হয়। এরপর ভূমি মালিকদের অনেকেই নির্ধারিত নিয়মেই সেই ভূমিগুলো আবার ফেরত এনেছেন। যারা ফেরত আনতে পারেনি তারা পরবর্তীতে এই প্রক্রিয়া চালান। কারো কারো মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। আরএস, বিএস, মাঠ পর্চা, নামজারি, তশদিক সবই রয়েছে ভূমি মালিকদের নামে। এরপরও অনেকটা জোরপূর্বকভাবে সওজ ও সিটি করপোরেশন ভবন ভাঙতে শুরু করেছে। এটা ভবন মালিক ও ব্যবসায়ীদের ওপর জুলুম বলে দাবি করেন তিনি। ব্যবসায়ী সহ স্থানীয়রা জানিয়েছেন- এবারের অতিমাত্রার বর্ষণে সিলেট নগরীতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এটি ড্রেনেজ সমস্যার কারণে হয়েছে। আর অতিমাত্রায় বর্ষণের কারণে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের দু’পাশে জলজট তীব্র হয়।

 আর এ ঘটনার পর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নাখোশ হয়। এখন জলজটের অজুহাত তুলে সওজকে দিয়ে বৈধ মালিকদের ভবন ভাঙার প্রক্রিয়া করা হয়েছে বলে দাবি করেন তারা। সিলেট সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান মানবজমিনকে জানিয়েছেন- সম্পূর্ণ বিষয়টি ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। আইনের ফাঁক রয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। কেউ যদি দখলে রাখে অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে। তা না করে লাল দাগ দিয়ে ভবন ভেঙে ফেলা উচিত হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সওজ’র পক্ষ থেকে বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে- সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন- ভুমি অধিগ্রহণ করা আছে। পরে কে আবার ফেরত নিলো সেটি আমরা জানি না। অধিগ্রহণের ফলে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক স্থাপনায় লাল দাগ দেয়া হয়েছে। যদি কেউ বৈধতার প্রমাণ দেখাতে পারেন তাহলে আমরা ভাঙবো না। তিনি জানান- হঠাৎ করেই উচ্ছেদ চালানো হয়নি। এর আগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ও মাইকিং করা হয়েছে। তবে- এই মূহূর্তে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক বর্ধিতকরণের কোনো প্রকল্প তার হাতে নেই বলে জানান। এ নিয়ে তিনি ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলোচনা করছেন বলে জানান।

 এদিকে- সিলেট নগরীতে সিসিক ও সওজ’র চলমান অভিযানের বিষয়ে মতবিনিময় ও পরামর্শ সভা করেছেন ভবন মালিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। বুধবার রাতে মদিনা মার্কেটে মতবিনিময় সভায় আলোচনা ও আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে ১১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছেন। আহ্বায়ক করা হয়েছে সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিরণ মিয়াকে ও সদস্য সচিব হয়েছেন কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান। সদস্য করা হয়েছে- সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক, জগদীশ চন্দ্র দাস, খলিলুর রহমান খান, রফিকুল ইসলাম বাদল, আব্দুস সাত্তার, আব্দুল বাছিত মহসিন, এনাম আহমদ। মদিনা মার্কেটের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আব্দুর রাজ্জাক খান’র জ্যেষ্ঠ পুত্র আল মদিনা জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির মোতওয়াল্লি খলিলুর রহমান খানের সভাপতিত্বে ও সেলিম আহমদ শিবলীর পরিচালনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক। এ সময় ভূমি মালিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান, আসাদ ম্যানশনের মালিক মো. এনাম আহমদ, শাহজালাল সুপার মার্কেটের মালিক মিসবাউর রহমান, হিরণ মার্কেটের মালিক হিরণ মিয়া, পঞ্চ শাপলা মার্কেটের মালিক আবন মিয়া, ইকবাল ম্যানশনের মালিক এডভোকেট মনিরুজ্জামান সেলিম। 

মো. খলিলুর রহমান খান জানিয়েছেন- বেশ কিছুদিন ধরে পাঠানটুলা এলাকা থেকে আখালিয়া পর্যন্ত সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কের পাশের স্থাপনাগুলোর উপর এক নৈরাজ্য ও খামখেয়ালিভাবে উচ্ছেদ অভিযান চলছে যা খুবই দুঃখজনক ও অমানবিক। সিসিক ও সওজ নিয়মনীতি না মেনে হঠাৎ বুলডোজার নিয়ে বাসায় উপস্থিত। এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। পত্রিকা, মাইকিং, গণবিজ্ঞপ্তি সম্পত্তির নোটিশ হতে পারে না। সড়ক উন্নয়নের প্রয়োজন হলে আলাপ আলোচনার বা  মাধ্যমে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক এর মাধ্যমে হতে হবে। এছাড়া সরকারের একটি বিধান রয়েছে, যে প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়, সেই প্রকল্প বাতিল হয়ে গেলে ওই ভূমি মূল মালিক বরাবরে ফেরত প্রদান করা হয়। এসব বিষয় নিয়ে তারা আগামীকাল শনিবার সিলেট সফররত পররাষ্ট্র্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেবেন বলে জানান।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status