ঢাকা, ১৫ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় দ্বিমত কমেছে

স্টাফ রিপোর্টার
২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে তৃতীয় দিনের আলোচনায় অধিকাংশ বিষয়ে একমত হয়েছে বিএনপি। কিছু কিছু বিষয়ে দ্বিমতও কমে এসেছে। এ ছাড়া সংসদ নেতা, টানা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সর্বোচ্চ মেয়াদ ও দলীয় প্রধানের বিষয়ে আগের অবস্থানেই রয়েছে দলটি। বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পরপর দুইবারের বেশি কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। কিন্তু একবার গ্যাপ দিয়ে দলের সিদ্ধান্তে হতে পারবেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেয়ারটেকার সরকারের প্রয়োজনীয়তা আছে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অ্যাপিলেট ডিভিশনের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি নির্দিষ্ট না করে ‘জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিদের মধ্যে ন্যূনতম দুই থেকে তিনজন’ রাখার প্রস্তাব করেছে বিএনপি। 

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে দিনব্যাপী জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে  বৈঠক শেষে এসব কথা জানিয়েছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকালের আলোচনার মধ্যদিয়ে টানা তিনদিনের আলোচনা হয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে।  

বৈঠক শেষে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন নিয়ে আলোচনা করেছি। এটা নিয়ে আমরা যথেষ্ট এক্সারসাইজ করেছি। ২০৮ টার মতো সুপারিশ জনপ্রশাসন সংস্কার সুপারিশ আছে। এরমধ্যে ১৮৭টা সুপারিশে আমরা একমত, আংশিক একমত ৫টা এবং একমত নই ১১টায়। মন্তব্যসহ ভিন্নমত দিয়েছি ৫টায়, এগুলোর বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। 

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের বিস্তারিত রিপোর্টে ২৪৩টি সুপারিশ আমরা পেয়েছি। সরাসরি আমরা ১৪১টির সঙ্গে একমত, ১৪টি সুপারিশে আংশিক একমত, ৬৪টি সুপারিশে মন্তব্যসহ ভিন্নমত, ২৪টি সুপারিশে কেবল আমরা একমত হইনি। দুদকের ক্ষেত্রে আমরা বিস্তারিত রিপোর্টে যাইনি। দুদক সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে ১৯ থেকে ২০টার মতো প্রস্তাব ছিল। তারমধ্যে সরাসরি আমরা ১১টি প্রস্তাবে একমত, বাকি ৭ থেকে ৮টার মতো বিষয়ে আমরা নীতিগতভাবে একমতসহ মন্তব্য দিয়েছিলাম- এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। দুর্নীতি দমন কমিশনের একটিতে শুধু আমরা একমত নই। কারণ আয়কর আইনের একটি ধারা আছে, সেই ধারাটা সংশোধনের বিষয়ে এখানে কথা আছে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে আমরা সর্বোচ্চ কার্যকর দেখতে চাই। 

তিনি বলেন, ২৮টি চ্যাপ্টারে বিচার বিভাগের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি ৮৯টি প্রস্তাব। তারমধ্যে ৬২টি বিষয়ে আমরা একমত হতে পেরেছি, ৯টি বিষয়ে আংশিক একমত, ১৮টি বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছি। বিচার বিভাগ নিয়ে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক উনাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হবে। আমরা চাই, বাংলাদেশে একটি স্বাধীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হোক। 

সালাহউদ্দিন বলেন, আর্টিকেল ১৬৯ বহাল রেখে সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় একটু জটিলতা আছে। এর জন্য ন্যাশনাল জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বিচারকের বয়সের ক্ষেত্রে ৭০ বছরের বিষয়টি আরও পর্যালোচনার কথা আমরা বলেছি। গতবার যেখানে আমরা সমাপ্ত করেছিলাম, সেটা হচ্ছে নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগ আলোচনা করেছি। নির্বাহী বিভাগের একদম শেষ দফা ছিল অ্যাটর্নি সার্ভিস। অ্যাটর্নি সার্ভিস সৃষ্টি করার জন্য স্থায়ী প্রসিকিউশন সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছি। তারাও একমত যে, অ্যাটর্নি সার্ভিস করা দরকার জেলা পর্যায়ে। তবে সেটা আইনের মাধ্যমে করতে হবে এবং এটা কনস্টিটিউশনে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। আইনের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমে ১০ পার্সেন্ট নিয়োগ দিয়ে এটা ট্রায়াল অ্যান্ড আরোর ভিত্তিতে এক্সপেরিমেন্ট করা হবে। তারপর এটা যদি ফলপ্রসূ হয়, অ্যাটর্নি সার্ভিসের পরিধি আরও বাড়ানো যাবে। এটা উনারাও মোটামুটি একমত। 

তিনি বলেন, আমরা বলেছি, সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের জন্য আর্টিকেল-১০০ এ প্রবিশন আছে। এইটার ওপর যেন কম্পালশন একটা আনতে পারি আমরা। জুডিশিয়ারিকে যেন আমরা একটা প্রবিশন করতে পারি। অথবা সাব সেকশন করতে পারি। যাতে প্রতি বছর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের জন্য বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যায়। তাতে একই ফাংশনটা করা যাবে। আর সুপ্রিম জুডিশিয়াল এপয়েন্টমেন্ট অথবা জুডিশিয়াল এপয়েন্টমেন্ট কমিশন নামে একটা কমিশন করার কথা উনারা (কমিশন) এখানে করেছেন। আমরা নীতিগতভাবে একমত, বলেছি- এটা সংসদে আলোচনা করতে হবে। কারণ সংবিধানে একটা নতুন প্রবিশন এড করা প্রয়োজন হবে যাতে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ নিয়োগের ক্ষেত্রে কী কী বিধি-বিধান কীভাবে সম্ভব ইত্যাদি আমরা বিস্তারিত এখানে আলাপ করছি না। সেটা আমরা নীতিগতভাবে একমত। তবে একটা নতুন বিধান যুক্ত করতে হবে সংবিধানে। আমরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু সবকিছু আমরা আইনানুগ এবং সাংবিধানিকভাবে করতে চাই। আর্টিকেল-৯৫ (২)তে বিচারকের যোগ্যতা মানদণ্ড এগুলো নির্ধারণ করা আছে। তারমধ্যে নতুন একটা ক্রাইটেরিয়া উনারা প্রেসক্রাইপ্ট করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপকদেরও যাতে বিচারক হিসেবে নিয়োগ করা যায়। আমরা বলেছি, এই বিষয়টা প্রস্তাবিত যে আইন আছে অথবা এখন যে আইনটা করার চেষ্টা করছে বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, যেটা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জড হয়েছে বিভিন্ন কারণে।  সেই যোগ্যতার ক্ষেত্রে এই বিধানটা তখন আইন করা যাবে। আমরা নীতিগতভাবে একমত। 

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাংবিধানিক কমিশন করার জন্য উনারা (কমিশন) বেশ কয়েকটি অঙ্গকে সাংবিধানিক কনস্টিটিউশনের মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং আরও একটি কমিশন করার কথা রয়েছে, যেটা এখন এক্সিজটেন্স নেই। আমরা  বলেছি, প্রত্যেকটি কমিশনকে যদি সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেটা জটিলতার সৃষ্টি হবে বিদ্যমান আইন দিয়ে যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে সে প্রতিষ্ঠানগুলো কনস্টিটিউশনে থাকা উচিত। তারপরও আমরা বলেছি, আমরা আরও আলোচনা করবো। আমরা যদি সংবিধানে এনে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে পারি। 

জরুরি অবস্থার প্রসঙ্গে বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, উনারা কিছু প্রবিশন করেছে। জরুরি অবস্থা জারি করবে, সেখানে ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনের একটা ভূমিকা থাকবে। আমরা বলেছি, এখানে ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনের ধারণার সঙ্গে আমরা একমত নই। আর জরুরি অবস্থা জারির ক্ষেত্রে উনারা প্রস্তাব করেছেন যাতে মৌলিক অধিকারসহ নাগরিকদের কিছু কিছু অধিকার স্থগিত থাকে। সেগুলো স্থগিত রাখা যাবে না আদালত মামলা করতে পারবে। কিন্তু আমরা বলেছি যে, জরুরি অবস্থা যখন জারি করতে হয়। এটা সংসদ এবং শাসন বিভাগে এক্সিকিউটিভের একটা ফাংশন থাকে। সেখানে কিছু কিছু অধিকার স্থগিত করতে হয়। তা না হলে জরুরি আইন জারির অর্থই থাকে না। সে বিষয়ে ওনারা আরেকটু চিন্তা করবেন বলেছেন, আমাদেরকে জানাবেন। 

তিনি আরও বলেন, নাগরিকতন্ত্রের সম্পত্তি আসলে প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তি। এগুলো রাষ্ট্রের কি কি সম্পদ থাকবে, সেটা বর্তমান বিধানে যেভাবে আছে- সেভাবে উনারা সন্তুষ্ট নয়। এটাকে আরও স্পেসিফাইড করতে চান। যেমন গভীর সমুদ্রে প্রযোজ্য অধিকারসমূহ, খনিজসম্পদ, মূল্যবান সামগ্রী এবং ব্লু-ইকোনমি, এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন এগুলো রি-ডিফাইন করতে চান। আমরা বলেছি, আমরা একমত- তবে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আরেকটু আলোচনা করে যাতে কোনো কিছু বাদ না যায়, আবার অনেক কিছু যেন আমরা অতিরিক্ত ইনক্লুড না করি। সেটা পরীক্ষা করতে হবে আমরা একমত।  

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে  বৈঠকে কমিশনের অন্যান্য সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, বিচারপতি এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি‘র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাঈল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সচিব আবু মো. মনিরুজ্জামান খান।
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status