দেশ বিদেশ
ওসির বিপুল সম্পদ
দুদকে আবেদন করেন, ব্যবস্থা না নিলে দেখবো: হাইকোর্ট
স্টাফ রিপোর্টার
১১ আগস্ট ২০২২, বৃহস্পতিবারঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলামের বাড়ি-প্লটসহ বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবীকে দুদককে আবেদন দিতে বলেছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আবেদনকারী আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হককে এ কথা বলেন।
আদালত বলেন, আইনের বিধান বাস্তবায়ন করেন। বিধান হলো, অভিযোগ দুদককে জানাতে হবে। দুদকে আবেদন দিয়ে আসেন। দুদক পদক্ষেপ না নিলে, চাইলে আবেদন নিয়ে আসতে পারেন। দুদক যদি ব্যবস্থা না নেয় বিষয়টা আমরা দেখবো। এরপর আদালত আগামী ২১শে আগস্ট পর্যন্ত আবেদনটির শুনানি মুলতবি করেন।
এরআগে গতকাল ওসি মনিরুলের অবৈধ সম্পদ ও দখল নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন আইনজীবী সুমন। রিটে ওসি মনিরুলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শকের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়। একইসঙ্গে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্পত্তি দখল, অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনে তার অবহেলা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে রুল চাওয়া হয় রিটে। এতে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার ও ওসি মনিরুলকে বিবাদী করা হয়।
রিটের শুনানিতে আবেদনকারী আইনজীবী প্রকাশিত প্রতিবেদনটির কিছু অংশ পড়ে শোনান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় আটতলা বাড়ি করেছেন। বানাচ্ছেন আরেকটি ডুপ্লেক্স বাড়ি। ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে তার রয়েছে চারটি প্লট। বাড়ি, প্লটসহ এই বিপুল সম্পদের মালিক ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম। রাজধানীর মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটিতে এক মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে পুলিশ সূত্র বলছে, যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, তার সম্পদের পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি। পুলিশের একজন পরিদর্শক হয়ে ওসি মনিরুল কীভাবে এত সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা নিয়ে পুলিশ বিভাগে আলোচনা চলছে। বর্তমানে তিনি নবম গ্রেডে ২২ হাজার টাকা স্কেলে সাকুল্যে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বেতন পান। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি এই সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯২ সালে উপ-পরিদর্শক (এস আই) পদে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন মনিরুল ইসলাম, যখন এই পদটি তৃতীয় শ্রেণির ছিল। ২০১২ সালে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ পরিদর্শক হন। প্রায় ৩০ বছরের চাকরিজীবনে বেশির ভাগ সময় ঢাকা রেঞ্জে ছিলেন। তার বাড়ি রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায়। ওসি মনিরুল ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় এস আই ও পরিদর্শক হিসেবে দুই দফায় প্রায় ৪ বছর ৮ মাস কাজ করেন। ওই সময় তিনি বছিলায় চার কাঠা জমিতে আটতলা বাড়ি করেন। ভবনে ১৩টি ফ্ল্যাট আছে। এলাকার জিতু মিয়ার মালিকানাধীন আবাসন প্রতিষ্ঠান বেয়ারা হাউজিংয়ে চার ও তিন কাঠার দুটি প্লট কেনেন তিনি। তিন কাঠার প্লটে ডুপ্লেক্স বাড়ির কাজ চলছে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আলী আকবর নগর এলাকার তেঘরিয়া মৌজায় ১০ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। এই প্লটে একটি টিনশেড ঘর করে আলফা বলপেন নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেয়া হয়েছে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার নতুন বাক্তারচর গ্রামের শেষ সীমানায় ও মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানার বালুচর গ্রামে চরপানিয়া মৌজায় ভেনাস লেকভিউ আবাসন প্রকল্পে ৬০ শতক জমি রয়েছে। ২০০৫ সালে মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটিতে মুক্তিযোদ্ধা ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সরোজ কান্তি সরকারের ছয় কাঠার জমি দখল করেন মনিরুল ইসলাম। তখন তিনি এস আই ছিলেন।