ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দেশ বিদেশ

মেননের আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার
৯ আগস্ট ২০২২, মঙ্গলবার

অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জেতার জন্য (আদিবাসীদের)কে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘ঐতিহ্যগত জ্ঞান, ভূমি, বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে আদিবাসী নারীর চ্যালেঞ্জ ও আমাদের দায়িত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি একথা বলেন। মেনন বলেন, আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জেতার পূর্বশর্ত হলো সবাইকে এক হওয়া। কিছু সুবিধার জন্য আপস করা যাবে না। সাধারণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে যুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আদিবাসীদের অধিকার ও স্বীকৃতি নিয়ে একই কথা ৫০ বছর ধরে বলে যেতে হচ্ছে। অভিবাসন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনমিতি পরিবর্তন করার জন্য পরিকল্পিতভাবে বাঙালিদের পুনর্বাসনের কাজটি করে জিয়াউর রহমানের সরকার। ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর পার্বত্য চট্টগ্রামে উচ্চ পর্যায়ের একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পুনর্বাসিত বাঙালিদের ফেরত আনা হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের জন্য নেদারল্যান্ড সরকার আগ্রহও প্রকাশ করে।

বিজ্ঞাপন
কিন্তু এরপর এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সংবিধান রচনার সময় আদিবাসী শব্দটি ছিল না, সেক্ষেত্রে সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২৩ ক-এর সংযোজন নিঃসন্দেহে একটি অগ্রগতি। তবে, এখানে আদিবাসীদের জন্য ‘উপজাতি’ ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’র মতো অবমাননাকর শব্দাবলী রাখা হয়েছে।
এএলআরডি’র চেয়ারপারসন ও নিজেরা করি-এর সমন্বয়কারী খুশী কবিরের সভাপতিত্বে সেমিনারে পৃথক দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা ও পুয়ামদো’র নির্বাহী কর্মকর্তা হৈমন্তি সরকার। পল্লব চাকমা তার প্রবন্ধ পাঠের সময়ে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে আদিবাসী নারীরা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, তাদের ঐতিহ্যগত পেশার ক্ষতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাবের সম্মুখীন। ভূমি বেদখলের উদ্দেশ্যে আদিবাসী নারী ও কন্যা শিশুদের যৌন ও শারীরিক সহিংসতা চালানো হচ্ছে। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্ষণ, দলগত ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা, যৌন হয়রানিসহ আদিবাসী নারীর প্রতি সহিংসতার কমপক্ষে ১২টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৭টি এবং সমতল এলাকায় ৫টি রয়েছে। তার প্রবন্ধে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আদিবাসীদের আত্মপরিচয়, ভাষা ও সংস্কৃতিসহ সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান, জাতীয় সংসদসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহে আদিবাসী নারীদের আসন সংরক্ষণসহ ৫টি সুপারিশ তুলে ধরেন।
সমতলের আদিবাসীদের বিশেষত দেশের উত্তরাঞ্চলের আদিবাসীরা পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীদের মতো সংঘবদ্ধ নয় উল্লেখ করে হৈমন্তি সরকার তার প্রবন্ধে পাঠের সময়ে বলেন, সমতলের আদিবাসীরা আশঙ্কাজনকভাবে দ্রুতগতিতে ভূমিহীন হয়ে পড়ছে। এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে করোনাকালে নারীর প্রতি সহিংসতা, মেয়েদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া, বাল্য বিবাহ, অবৈতনিক গৃহকর্ম, যৌন নির্যাতন ভয়াবহ আকারে বেড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই সময়ে ১৩ ভাগ মেয়ে শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। সমতলের জন্য তিনি পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের দাবি জানান।
বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ভূমিদস্যুরা দখল ও আধিপত্যের জন্য ভূমির উপর আগ্রাসন চালাচ্ছে, এভাবে তারা নারীকেও দখল ও আধিপত্যের বিষয় মনে করে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের বিচার চাইতে হবে। কৌশলগত অ্যালায়েন্স গড়ে আন্দোলন জোরদার করতে হবে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, রাষ্ট্রকে মানুষের কাছাকাছি নিতে হবে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ আদিবাসী মানুষেরা এ গ্রহের ৮০ ভাগ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে। অথচ তারাই আজ বিপন্ন। একজন ক্ষমতাসীন মানুষ, দেশের মন্ত্রী-আমলার মূল্যায়নের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রান্তিক মানুষের মূল্যায়ন। একজন প্রান্তিক মানুষ যদি বলে আমি ভালো আছি কেবল তখনই বলা যাবে দেশ ভালোভাবে চলছে। প্রান্তিক মানুষের মূল্যায়নই বলে দেবে দেশের মানুষ কেমন আছে।
ব্লাস্টের অনারারী নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, আদিবাসী নারীদের মামলায় আদালতের প্রগতিশীল ব্যাখ্যা বাংলাদেশের সকল নারীদের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনছে। তবে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে বাংলাদেশে আইনের ব্যাখ্যায় অসামঞ্জস্যতা বিদ্যমান। কারণ ওই ব্যাখ্যা অনুযায়ী বাংলাদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের আদিবাসী বলা যাবে না ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বলতে হবে, কিন্তু অন্যদেশে বসবাসরত আদিবাসীরা আদিবাসী হিসেবে অভিহিত করা যাবে।
দেশকে মুসলিম বাঙালিদের রাষ্ট্র বানানোর জন্য একান্ন বছর আগে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়নি উল্লেখ করে খুশী কবির বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশনকে দায়িত্ব দেয়া হলেও তাদের কাজ করতে দেয়া হয় না। সমতলের ভূমি কমিশন হলে তাকেও হয়তো কাজ করতে দেয়া হবে না। কমিশন যাতে ঠিকভাবে কাজ করতে পারে সেজন্য আমাদের কথা বলতে হবে।
আলোচকদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সহ-সভাপতি কাজল দেবনাথ প্রমুখ।

 

দেশ বিদেশ থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

দেশ বিদেশ সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status