প্রথম পাতা
ঢাকায় লোডশেডিং বেড়েছে দেড় গুণ
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
৮ আগস্ট ২০২২, সোমবারঢাকায় লোডশেডিং আগের চেয়ে বেড়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী গতকাল ঢাকায় লোডশেডিং হয়েছে ৪৫১ মেগাওয়াট। যা গত ১০ দিন আগেও ছিল ২৮৭ মেগাওয়াট। লোডশেডিংয়ের বৃদ্ধির হার ৫৭ শতাংশ। এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টার লোডশেডিং করার কথা থাকলেও দুই থেকে তিন ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। ঢাকার বাইরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন এলাকায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি। কোনো কোনো এলাকায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। মহানগরীর মিরপুর এলাকায় তিন-চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। শুধু মিরপুরেই নয়, হাজারীবাগ এলাকায় দু-তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ করেছেন সেখানকার বাসিন্দা হান্নান মিয়া।
তাতে লোডশেডিং ধরা হয় ১ হাজার ৪৯৩ মেগাওয়াট। প্রাক্কলিত সর্বনিম্ন উৎপাদন ধরা হয় ১০ হাজার ২৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের। পিডিবি’র ওয়েব সাইটে উল্লিখিত বিদ্যুতের লোডশেডিং পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় লোডশেডিং ধরা হয়েছে ৪৫১ মেগাওয়াট এবং চাহিদা ৪ হাজার ৪৮৩ মেগাওয়াট, চট্টগ্রাম এলাকায় লোডশেডিং ১৫৮ মেগাওয়াট এবং চাহিদা ১ হাজার ২৭০ মেগাওয়াট, খুলনা এলাকায় ২১৩ মেগাওয়াট এবং চাহিদা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৭৬ মেগাওয়াট, রাজশাহী এলাকায় ১৯৮ মেগাওয়াট এবং চাহিদা ১ হাজার ৪৮৮ মেগাওয়াট, কুমিল্লা এলাকায় ১৬৪ মেগাওয়াট এবং চাহিদা ১ হাজার ২৬৬ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ১৪১ মেগাওয়াট লোডশেডিং এবং চাহিদা ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৬ মেগাওয়াট, সিলেটে ৫৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং এবং চাহিদা ৪৮৭ মেগাওয়াট, বরিশাল অঞ্চলে লোডশেডিং শূন্য এবং চাহিদা ৩৮১ মেগাওয়াট, রংপুর অঞ্চলে ১১১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং এবং চাহিদা ৮২৬ মেগাওয়াট। যদিও দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে সাড়ে ২৫ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। অন্যদিকে গত ২৮শে জুলাই কর্মদিবসে সারা দেশে সন্ধ্যায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার মেগাওয়াট। এই সময়ে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৮৭৬ মেগাওয়াট।
তাতে লোডশেডিং ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৬ মেগাওয়াট। সর্বনিম্ন উৎপাদন ধরা হয় ১০ হাজার ৭৬১ মেগাওয়াট। পিডিবি’র ওয়েবসাইটে উল্লিখিত বিদ্যুতের লোডশেডিং পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ওই দিন ঢাকায় লোডশেডিং ধরা হয়েছে ২৮৭ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামে ১১০ মেগাওয়াট, খুলনা এলাকায় ১৫২ মেগাওয়াট, রাজশাহী এলাকায় ১৪৪ মেগাওয়াট, কুমিল্লায় ১১৮ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ১০৩ মেগাওয়াট, সিলেটে ৪৩ মেগাওয়াট, বরিশালে শূন্য এবং রংপুর এলাকায় ৮১ মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং করার কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সূচি করে লোডশেডিংয়ের প্রথম ১০/১১ দিন সারা দেশে ১ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়। এসময়ে রাত ৮টার পর দৈনিক দোকানপাট, শপিং মল বন্ধ করার কারণে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। সরকার চেয়েছিল দোকানপাট বন্ধ থেকে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করবে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাকি অতিরিক্ত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য সব জায়গায় সমানভাবে রুটিন অনুযায়ী এখন লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এই সিস্টেমেই সরকার এগুতে চায় বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গত ১৮ই জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর ১৯শে জুলাই থেকে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
প্রতিদিন এক সপ্তাহ জোনভিত্তিক একঘণ্টা করে লোডশেডিং করার কথা বলা হলেও কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশি লোডশেডিং করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া রাত ৮টার পর শপিং মলসহ দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত কার্যকর এবং উপাসনালয়ে প্রার্থনার সময় ছাড়া এসি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বানো জানানো হয় সরকারের তরফে। রাত ৮টার পর দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমল খোলা থাকলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। রাত ৮টা থেকে কোনোরকম দোকানপাট, শপিংমল, আলোকসজ্জা-সব বন্ধ থাকবে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিভাগকে বলা হয়েছে, তারা খুব কঠিনভাবে এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন। যদি কেউ অমান্য করেন তাদের বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করার কথা বলা হয়েছিল।