শেষের পাতা
চলন্ত বাস থেকে স্বামীকে ফেলে দিয়ে নারীকে গণধর্ষণ আসামিদের স্বীকারোক্তি
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
৮ আগস্ট ২০২২, সোমবারগাজীপুরের শ্রীপুরে যাত্রীবাহী তাকওয়া পরিবহন থেকে স্বামীকে ফেলে দিয়ে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় গাজীপুরের তিনজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঁচ অভিযুক্ত ও অপর আদালতে ওই নারী স্বীকারেক্তিমূলক জবানবিন্দ দেন। গাজীপুরের পুলিশ সুপার এ এস এম শফিউল্লাহ তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত রাকিব মোল্লা (২০) এবং সুমন হাসান (২২) জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৩ ইশরাত জেনিফার জেরিন এর আদালত, সুুমন খান (২০) জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৪ জোবায়দা নাসরিন বর্ণার আদালত এবং সজীব (২১) ও শাহীন মিয়া (১৯) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২ ইখলাস উদ্দিনের আদালতে ঘটনার স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ভিকটিম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৫ আলীফা বেগমের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
ভিক্টিমের বরাত দিয়ে এসপি জানান, নওগাঁ থেকে ওই নারী তার স্বামীকে নিয়ে একতা পরিবহনে গত শনিবার ভোর তিনটার দিকে গাজীপুরের বোগড়া বাইপাস এলাকায় আসেন। তারা সেখান থেকে মসয়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মাস্টারবাড়ী এলাকায় যাওয়ার জন্য যাত্রীবাহী পরিবহন খোঁজ করছিলেন। এ সময় তাকওয়া পরিবহন কোম্পানীর ওই বাসটির চালক, হেলপার ও কন্ডাক্টর মাস্টারবাড়ী যাওয়ার কথা বলে তাদের গাড়িতে তোলে। পরে আরও দুই ব্যক্তি বাসে ওঠে। বাসটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তায় গিয়ে ওই নারী ও তার স্বামীকে রেখে সকল যাত্রীকে নামিয়ে দেয়। পরে মাস্টারবাড়ী যাওয়ার পথে মাওনা চৌরাস্তা উড়ালসেতু এলাকায় নারীর স্বামীকে জোরপূর্বক পিটিয়ে বাস থেকে নামিয়ে দেয়।
কিছুদূর এগিয়ে ভাওয়ালের শালবন রাজেন্দ্রপুর এলাকায় নারীকে বাস থেকে নামিয়ে চলে যায়। নারীর স্বামীকে নামিয়ে দেয়ার পর তিনি শ্রীপুর থানা পুলিশকে ঘটনা অবহিত করেন। অপরদিকে, নারীকে রাজেন্দ্রপুর এলাকায় নামানোর পর তিনি সড়কে কর্তব্যরত গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের শরণাপন্ন হন। মেট্রোপলিটন জেলা পুলিশকে অবহিত করলে তাৎক্ষণিক নারীর কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শোনেন। জেলা ও গোয়েন্দা পুলিশ যৌথভাবে সড়কের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযুক্তদের ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় ভিকটিম বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
শ্রীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় শ্রীপুর থানায় মামলা করা হয়েছে। আসামি সবাই গ্রেপ্তার হয়েছে। আসামিদের কাছ থেকে ওই নারীর একটি মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ, ৪ হাজার টাকা, দুটি ট্রাভেল ব্যাগ, ব্যাগে থাকা দুই কেজি চাল, আধা কেজি ভুট্টা, ২৫০ গ্রাম পোলাওয়ের চাল, একটি এটিএম কার্ড, এক বয়াম আমের আচার ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে, গতকাল সকালে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে। হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের ডা. এএনএম আল মামুন ও ডা. সানজিদা হক এই ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। পরীক্ষার পর ডা. এএনএম আল মামুন জানান, প্রাথমিকভাবে ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তারপরও ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভিকটিমের ডিএনএ পরীক্ষার আলামত পাঠানো হয়েছে। তার কপালে আঘাতের চিহ্ন থাকায় মাথায় এক্স-রে করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।