ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

সুবিধাবঞ্চিত ছাতকের নাথপাড়ার মানুষ

নূর মিয়া রাজু, ছাতক (সুনামগঞ্জ) থেকে
৮ আগস্ট ২০২২, সোমবার
mzamin

সুনামগঞ্জের ছাতকে হিন্দু অধ্যুষিত প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম কপলা নাথপাড়া। অবহেলিত এ গ্রামে নাথ সম্প্রদায়ের প্রায় ১২০টি পরিবারের বসবাস। সিংহভাগ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত থাকলেও অবসরে বাঁশ-বেত দিয়ে নানান আকর্ষণীয় দ্রব্য তৈরি ও বাজারজাত করে থাকেন। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সরকারি-বেসরকারি অনেক সুযোগ-সুবিধাই এ গ্রামের মানুষের ভাগ্যে জোটে না। হিন্দু অধ্যুষিত এ গ্রামটি ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া শতাব্দির ভয়াবহ বন্যায় তছনছ করে দিয়েছে তাদের সাজানো গোছানো সংসার। গ্রামের অধিকাংশ ঘরবাড়ি কাঁচা হওয়ায় বন্যার পানি সরে যাওয়ার পরও মানুষের দুর্দশা কমেনি। সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের ছাতকের বড়কাপন পয়েন্ট থেকে ডানের রাস্তা ধরে প্রায় ২ কিলোমিটার গেলেই কপলা গ্রাম। গ্রামের পাকা রাস্তা থেকে ডান দিকের কাঁচা রাস্তায় অনেকটা ভেতরে নাথপাড়া গ্রাম। গ্রামের ঘর-বাড়িগুলো দেখলেই বোঝা যায়, এখানের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষের বসবাস দারিদ্র্য সীমার নিচে।

বিজ্ঞাপন
গ্রামের বেশির ভাগই টিনশেডের কাঁচা ঘর। এ গ্রামের মানুষের সঙ্গে আলাপচারিতায় ফুটে ওঠে তাদের সুখ-দুঃখে জীবনগাঁথা কাহিনী। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া শতাব্দির ভয়াবহ বন্যায় গোটা গ্রামের মানুষই ছিল পানিবন্দি। সহায়-সম্বল যাই ছিল সবই বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। বন্যার সময় কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে না গিয়ে নাথপাড়া গ্রামের সকলেই অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে নিজ ঘরেই অনাহারে-অর্ধাহারে কাটিয়েছে আপদকালীন বেশ কয়েকদিন। আবার কেউ কেউ নিজ ঘর থাকা বিপদজনক মনে করে আশ্রয় নিয়েছেন গ্রামের অন্যের ঘরে। এদিকে সুনামগঞ্জ জেলাসহ সিলেট অঞ্চলের ভয়াবহ বন্যার খবরে সরকারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সহায়তাকারী সংস্থা ত্রাণ নিয়ে বিভিন্ন দুর্গত এলাকায় পানিবন্দি মানুষের মাঝে বিতরণের খবর তারা শুনেছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়-শত শত ত্রাণ সহায়তাকারী সংস্থা বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ কার্যক্রম চালালেও নাথপাড়ার পানিবন্দি মানুষ থেকে যায় চোখের আড়ালে। তারা বঞ্চিত হয় সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি সাহায্য-সহায়তা থেকে। প্রায় ৩ সপ্তাহ পর পানিবন্দি থেকে মুক্ত হলেও পরবর্তী দিনগুলো এক দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যদিয়ে পার করতে হয়েছে নাথপাড়ার মানুষের। ভিটে-মাটি কর্দমাক্ত ও বানের স্রোতে ভেঙে যাওয়া জরাজীর্ণ ঘরে মানবেতর জীবনযাত্রা শুরু করে নাথপাড়ার অধিকাংশ পরিবার। এ অবস্থা থেকে এখনো পরিত্রাণ পাননি তারা। তবে তাদের হার না মানা জীবনযুদ্ধ থেমে থাকেনি ক্ষণিকের জন্যও। ছুটন নাথ, নিকু নাথ, ব্রজেন্দ্র নাথসহ গ্রামের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, নাথপাড়া গ্রামের মানুষ সব সময়ই সুবিধা বঞ্চিত থাকে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ গরিব কিন্তু পরিশ্রমি। সরকারি-বেসরকারি সাহায্য পাওয়া অধিকারও তাদের আছে। তারা সরকার ও সরকার সংশ্লিষ্ট সকলের কৃপাদৃষ্টি কামনা করেন। গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য গনেশ নাথ জানান, শুনেছি বন্যার্তদের মাঝে বিভিন্ন সংস্থা ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে। কিন্তু নাথপাড়ার কোনো পরিবারই ত্রাণের দেখা পায়নি। গ্রাম পুলিশ দিপালী নাথ জানান, স্থানীয় ইউপি সদস্যের দেয়া সরকারি  চাল ছাড়া নাথপাড়া মানুষের ভাগ্যে আর কিছু জোটেনি। তবে সহায়তা না পেলেও বন্যার সময় গ্রামে একে-অন্যের সাহায্য নিয়ে আপদকালীন সময় পার করেছেন নাথপাড়ার মানুষ। ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল জানান, বন্যার পানি উঠেনি এমন কোনো গ্রাম তার ওয়ার্ডে নেই। ওয়ার্ডের ধনি-গরিব সকলেই বন্যায় কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যার সময় অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম ছিল আশ্রয় কেন্দ্রমুখী। ত্রাণ পরিবহনের জন্য নৌকার ব্যবস্থা করা ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ। আর নৌকার ব্যবস্থা হলেও এর ভাড়া ছিল অস্বাভাবিক। নাথপাড়া গ্রামটি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় ত্রাণ সহায়তাকারী অনেক সংস্থাই গ্রাম বিমুখ হয়েছে। তিনি দু’দফায় ১০ কেজি ও  ৫ কেজি করে সরকারি চাল নাথপাড়া গ্রামের অন্তত ৩০টি পরিবারের মাঝে বিতরণ করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক জানান, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় তার ইউনিয়নের মানুষ অফুরন্ত ক্ষতির শিকার হয়েছে। বন্যার সময় বেসরকারিভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে যার যার মতো। সরকারিভাবে পরিষদের কাছে যেসব সহায়তা এসেছে ক্ষতিগ্রস্তের ভিত্তিতে প্রতিটি ওয়ার্ডে মেম্বারদের মাধ্যমে সমবণ্টন করা হয়েছে।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

সিন্ডিকেট চক্রের ঈদ বাণিজ্য/ ট্রেনের ১০৫৩ টাকার এসি চেয়ার ২৫০০

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status