বাংলারজমিন
রংপুরে নদীকে বিল দেখিয়ে ইজারা দিলো প্রশাসন, শাস্তির দাবি গ্রামবাসীর
স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে
১৬ মার্চ ২০২৫, রবিবার
ইতিহাস-ঐতিহ্যে ঘেরা রংপুর মিঠাপুকুরের শালমারা নদী। যে নদীতে মাছ ধরে, বিভিন্ন কাজে নদীর পানি ব্যবহার জীবনযাপন করতো গ্রামবাসী, সেই শালমারা নদীকে বিল উল্লেখ করে প্রশাসন ৫৫ একর জমি ইজারা দিয়েছে। প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ডে রাগে- ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে গ্রামবাসী। এ নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হলে দায়ী থাকবে প্রশাসন বলে জানিয়েছেন নদীপাড়ের মানুষ। এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার নদী-বিল-জলাশয় বাণিজ্যিক কারণে লিজ প্রদান থেকে বিরত থাকার নির্দেশকে প্রশাসন উপেক্ষা করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতনরা।
জানা যায়, ২০২২ সালের ২৭ জুন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার অন্তর্গত শালমারা নদী দখলমুক্ত উৎসব হয়েছিল। সেই সময় শালমারাকে প্রবাহমান নদী হিসেবে প্রশাসন উল্লেখ করে দীর্ঘ ৪০ বছর পর ব্যক্তির নামে দেয়া বন্দোবস্ত বাতিল করে জেলা প্রশাসন। এতেই লাঠি খেলা, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আনন্দ উৎসব করেছিল নদীপাড়ের মানুষ। নদী উন্মুক্তের বছর না পেরিয়ে যেতেই আবারো শ্বাসরোধ করা হয়েছে শালমারার। অভিযোগ উঠেছে, এবার নদীটিকে ‘শালমারা বিল’ দেখিয়ে ৩টি স্থানে মৎসজীবী সমিতিকে ইজারা দিয়েছে প্রশাসন। শালমারা নদীকে সায়রাতভুক্ত দেখিয়ে মিঠাপুকুর জয়রামপুর আনোয়ার ও শিংগীকুড়া মৌজায় নদীর ৩৯ একর ৪০ শতক জমি ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যে, পার্শ্ববর্তী বড় হযরতপুর ইউনিয়নে ‘শাল রিভার ছোট’ নাম দিয়ে ৪ একর ২০ শতক এবং ভাংনী ইউনিয়নে ‘বুড়াইল নদী’ নামে ১১ একর ৬৪ শতক জমি ১৫ হাজার ৫’শ টাকায় লিজ দেয়া হয়েছে। এসব লিজ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রবাহমান শালমারাকে বদ্ধ জলাশয় হিসেবে দেখাতে নদীর চারদিকে আবাদি জমি রয়েছে উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি বছর লিজ কার্যকর হওয়ায় ইজারাদাররা নদীতে জাল দিয়ে ঘিরে মাছ চাষ শুরু করেছে। এতে করে শালমারা নদী পার্শ্ববর্তী কৃষকরা পানি উত্তোলন করে জমিতে সেচ দিতে পারছে না। সেইসঙ্গে জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ হয়ে গেছে।
মৎসজীবী আনোয়ার হোসেন, এই নদীতে আমাদের বাপ-দাদারা মাছ শিকার করে জীবন নির্বাহ করেছিল। আমরাও এই নদীর সুবিধা নিতাম, আজ আমাদের নদীর আর আমাদের নেই। রিভারাইন পিপলের পরিচালক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, স্থান বিশেষে শালমারা নদীর নাম চমকা, মিঠাপুকুরের কাফ্রিখাল নদীর সঙ্গে মিলিয়ে হয়ে বুড়াইল নাম হয়েছে। নদীটির একটি অংশ কয়েকজন প্রভাবশালী জেলাপ্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশ করে লিখে নিয়েছিল। রিভারাইন পিপল শালমারা নদী সুরক্ষা কমিটির আন্দোলনে রংপুরের ডিসি তিন-চার বছর আগে ব্যক্তিগত মালিকানা বাতিল করেছে। আবার সেই নদীকে বিল দেখিয়ে তারা ইজারা দিয়েছে। ভূমি কর্মকর্তারা পুরাতন রেকর্ড না ঘেঁটে নদীকে বিল হিসেবে দেখিয়ে ইজারা দিচ্ছে।
রংপুর মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র বর্মন বলেন, শালমারা দীর্ঘদিন ধরে সায়রাতভুক্ত হিসেবে রয়েছে। এনিয়ে কারো কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে সার্ভে করাসহ সায়রাতভুক্ত থেকে কর্তনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করবো। গত ১১ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী।