অর্থ-বাণিজ্য
যে কারণে ঘুরে দাঁড়ালো শেয়ারবাজার
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৬ আগস্ট ২০২২, শনিবারফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয়ার পর উন্নতি হয়েছে শেয়ার বাজারের। এরসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কারণে শেয়ারবাজার এখন চাঙা হয়ে উঠেছে। এতদিন ধরে শেয়ারবাজারে যেসব নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারী ছিলেন, তারা আবারো সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। এতে করে বাজারে বাড়ছে লেনদেন। বাজারের পতন ঠেকাতে গত রোববার থেকে শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম বা ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরপর থেকে বাজারে সক্রিয় হতে শুরু করেন নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরা। এতে শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। এদিকে শেয়ারবাজারের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিটের হিসাব হবে শেয়ারের ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে নতুন এ নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সেই মতামত পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর আগে ২০১০ সালের ধসের পর থেকে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিট হিসাবের ক্ষেত্রে শেয়ারের ক্রয়মূল্যকে বাজারমূল্য হিসেবে বিবেচনার দাবি করে আসছিলেন শেয়ারবাজারের সংশ্লিষ্টরা। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে এ নিয়ে আলোচনা চললেও সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। গত ১২ই জুলাই নতুন গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সাবেক অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এ সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেন। এরই অংশ হিসেবে শেয়ারের ক্রয়মূল্যকে বাজারমূল্য বিবেচনা করার বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতামত চেয়ে গত ১৭ই জুলাই চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই চিঠির জবাব পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার নির্দেশনা জারি করা হয়। এর মাধ্যমে এক যুগের বেশি সময় ধরে চলে আসা অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হয়েছে। এদিকে টানা তিন সপ্তাহ পতনের পর গত সপ্তাহ বড় ধরনের ঊর্ধ্বমুখীতার মধ্য দিয়ে পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। সপ্তাহ জুড়ে লেনদেনে অংশ নেয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে মূল্যসূচকও। এতে এক সপ্তাহেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ২১ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে।
এর আগে তিন সপ্তাহের টানা পতনে ২৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাজার মূলধন কমে যায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, টানা পতনের মধ্যে শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী রাখতে বড় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস (দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দেয়া এবং পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসাবের ক্ষেত্রে বাজার মূল্যের বদলে ক্রয়মূল্য বিবেচনায় নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেয়া সম্মতি। প্রসঙ্গত, শেয়ারবাজারে টানা দরপতন হতে থাকলে গত ২৮শে জুলাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে প্রতিটি শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়, যা কার্যকর হয় গত রোববার থেকে। এতে দাম সমন্বয় করায় রোববার শেয়ার বাজারে লেনদেন শুরু হতেই সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়ে যায়। আর লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। এতে টানা পতন থেকে বেরিয়ে একদিনেই ডিএসই’র প্রধান সূচক বাড়ে ১৫৩ পয়েন্ট। আর সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার লেনদেনের শেষদিকে শেয়ারবাজারে ছড়িয়ে পড়ে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা গণনায় বাজার দামের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যকে বিবেচনায় নিতে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দিয়েছে। এতে একদিকে লেনদেনের গতি বাড়ে, অপরদিকে সূচকের বড় উত্থান হয়। অবশ্য মঙ্গলবার রাতেই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিঠির বিষয়টি প্রকাশ হতে থাকে।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার শেয়ার বাজারে লেনদেন শুরু হয় প্রায় সবক’টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে সবক’টি মূল্য সূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি বাড়ে লেনদেনের গতি। ফলে ডিএসইতে প্রায় তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেনের ঘটনা ঘটে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরুর দিকে শেয়ারবাজারে কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও লেনদেনের শেষদিকে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনের তথ্য চলে আসে। ফলে সবক’টি মূল্যসূচক বেড়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়। এতে সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকে। এতে গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১৩ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৪ লাখ ৯২ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়েছে ২১ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। আগের ৩ সপ্তাহের টানা পতনে বাজার মূলধন কমে ২৬ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা।
তথ্য বলছে, বাজার মূলধন বাড়ার পাশাপাশি গেল সপ্তাহে ডিএসইতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৭৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বেড়েছে। দাম কমেছে সাতটির। আটটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে গত সপ্তাহে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩৩১.৭৪ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৪৬ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট।