ঢাকা, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

খেলা

ব্যাটিং স্টাইল বদলে যেভাবে ‘৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটার’ হয়ে উঠছেন শামীম

সৌরভ কুমার দাস
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবারmzamin

চলতি বিপিএলের লীগ পর্বের ম্যাচে ১২ বলে ৩০ রানের ক্যামিও খেলেন শামীম হোসেন পাটোয়ারি। ওই ম্যাচে চিটাগং কিংস বরিশালকে হারায় ২৪ রানে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে এই বাঁহাতি ব্যাটার বলেন, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি এবিডি ভিলিয়ার্সের বড় ভক্ত, তাকে অনুসরণও করেন। যাকে বলা হয় ৩৬০ ব্যাটার। উইকেটে চারপাশে ঘুরিয়ে অবলীলায় শট খেলতে পারার জন্য তাকে এটা বলা হয়। একই শট খেলে শামীমও ক্রমশ হয়ে উঠছেন বাংলাদেশের এবিডি ভিলিয়ার্স বা ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটার। 

এলিমিনেটর ম্যাচে সোমবার, ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে যখন শামীম উইকেটে আসেন চট্টগ্রাম ৩৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে। যেকোনো ব্যাটার অমন চাপের মুখে কম ঝুঁকি নিয়ে উইকেটে আঁকড়ে থাকতে চাইবেন। এ সময়ে পাল্টা আক্রমণে আউট হলে দল পড়বে আরও বিপদে। তবে শামীমদের মতো কলিজাওয়ালা ব্যাটাররা অবশ্য এসবের ভয় পান না। এ কারণেই সেদিন ওই পরিস্থিতিতে পারভেজ হোসেন ইমনকে সঙ্গে নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন। মোহাম্মদ নবীর মতো অফ স্পিনার বাঁহাতিদের জন্য সবসময়ই ভয়ঙ্কর। সেই নবীকে রিভার্স সুইপে যে ছক্কাটা মারলেন শামীম, নবী নিজেও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন। ওই ওভারে শামীমের সৌজন্যে ইমনও নবীকে চার্জ করার সুযোগ পান, হাঁকান বড় ছক্কা। ফলে শুরুতে ধাক্কা খাওয়া চট্টগ্রাম যেখানে ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়া শঙ্কায় ছিল, সেখান থেকে তারা পেয়ে যায় লড়াকু সংগ্রহ। শামীম খেলেন ক্যারিয়ার সেরা ৪৭ বলে ৭৯ রানের ইনিংস। চিটাগং কিংস ম্যাচ হারলেও শামীমের ব্যাটে অন্তত লড়াই করার সুযোগ পায় তারা। ক্রিকেট এখন আধুনিক হয়েছে, অনেক আনঅর্থোডক্স শট খেলতে দেখা যায় ব্যাটারদের। তবে চাপের মুখে যেকোনো ফরম্যাটে এই শট খেলার জন্য ডি ভিলিয়ার্সের পর ঋষভ পান্তই এগিয়ে। টেস্টেও বাঘা বাঘা পেসারদের রিভার্স সুইপ খেলে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। গেল বর্ডার-গাভাস্কার টেস্ট সিরিজে অজি ওপেনার স্যাম কনস্টাস হালের সেরা পেসার জাসপ্রীত বুমরাহকে রিভার্স সুইপ খেলে আলাদা নজর কাড়েন। এবারের বিপিএলে শামীমও একই কাজ করে চলছে প্রতি ম্যাচেই। কি অবলীলায় একের পর রিভার্স সুইপ, স্কুপ খেলছেন। রিভার্স সুইপগুলো অনেক সময় খেলছেন সুইচ হিটের মতো করে। শামীম আসলে দেখাচ্ছেন ক্রিকেটে এসব আনঅর্থডক্স শট কীভাবে এত ভালো আর ধারাবাহিকভাবে খেলা যায়। তবে, এর মানে এই নয় যে তিনি শুধুমাত্র এইসব শটের ওপর নির্ভর করেন। তার ব্যাট থেকে ক্লাসি শট যেমন কভার ড্রাইভ এবং স্কোয়ার কাটও দেখা যায়। তবে উইকেটের পেছনের শটগুলোই তাকে বাকিদের থেকে আলাদা করছে। আর কোনো বাংলাদেশি ব্যাটারকে কখনও এত নির্দ্বিধায় এসব শট ধারাবাহিকভাবে খেলতে দেখা যায়নি। এখানে অবশ্য সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ আশরাফুলের নাম আসতে পারে। তবে তারা উইকেটের পেছনে একটি শটই খেলেছেন, স্কুপ। সেখানে শামীম উইকেটে পেছনে খেলতে পারেন একাধিক শট। আর তার মতো শট খেলায় অন্য কোনো বাংলাদেশি ব্যাটার ‘মাস্টার’ লেভেলে পৌঁছাতে পারেননি। 

এবারের আসরে শামীমের ফিফটি ২টি। এর আগে প্রথম ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে খেলেন ৩৮ বলে ৭৮ রানের ইনিংস। ৫৪ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর উইকেটে এসে ২৩ বলেই পূর্ণ করেন ফিফটি। সেখানেও প্রথম বাউন্ডারিটা মারেন রিভার্স সুইপে। তবে ফিফটি ২টি হলেও বেশির ভাগ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে কার্যকর ক্যামিও। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত শামীমের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৪৫ রান, ৩০০-এর উপরে রান করা ব্যাটারদের মধ্যে তার স্ট্রাইক রেটই সর্বোচ্চ। এরমধ্যে ছক্কা মেরেছেন ১৮টি আর চার ৩২টি। অর্থাৎ বাউন্ডারি থেকেই এসেছে ২৩৬ রান। 

বাংলাদেশ যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ছিল, শামীম গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্যামিও খেলেছেন যেটা খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। অনেকেই মনে করেন, শামীম এই বিপিএলে সবচেয়ে ইমপ্যাক্টফুল ব্যাটার। অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট থেকেই শামীম আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত। তবে শীর্ষ ক্রিকেটে এসে খেই হারিয়েছেন দ্রুতই। জাতীয় দল থেকে বাদও পড়েন, এরপর যখন ফিরলেন তখন অনেকটা পরিবর্তন দেখা যায় তার মধ্যে। ফিটনেসে তো কাজ করেছেন তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন দেখা গেছে শামীমের ব্যাটিং পজিশনে। সর্বশেষ আয়ারল্যান্ড সিরিজে শামীমের ব্যাটিং পজিশন আর ওয়েস্ট ইন্ডিস সিরিজ থেকে এবারের বিপিএলে ব্যাটিং পজিশনে পার্থক্য আছে। আগে ব্যাটিংয়ের সময় শামীমের এলবো অর্থাৎ কনুই হাঁটু থেকে কিছুটা উপরে থাকতো, পরিবর্তনের পর কনুইটা সোজা রাখেন। এছাড়া আগে ব্যাটের পজিশন ছিল প্রথম স্লিপের দিকে, এখন সেটা থাকে কিপারের দিকে। বোলার তার ব্যাট দেখতেই পারে না।  এ ছাড়া ব্যাটটা আগের থেকে একটু উপরে রাখেন, হ্যান্ডেল ধরেন উপরের দিকে। এছাড়া শট খেলার পর শামীমের ব্যাটের সুইং শেষ হয় পিঠে গিয়ে। হাই আর কোর্ডিশনের ব্যাটারদের জন্য যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যাট সুইংয়ের কারণে শটে বাড়তি শক্তি পাচ্ছেন, হাতে শট বাড়ছে। সবচেয়ে আশার জায়গা, শামীম শুধু খেলার জন্য বা আন্দাজে এই শট খেলেন না। এসব শট খেলার জন্য খুবই দক্ষতার সঙ্গে সঠিক বল বাছেন তিনি। একজন ব্যাটারের জন্য যেটা অন্যতম সেরা গুণ। টি-টোয়েন্টিতে একজন ফিনিশারের ভূমিকা সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন। সময় কম, বল কম কিন্তু চ্যালেঞ্জ কার্যকরী ইনিংস খেলার। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে অন্যতম সেরা ফিনিশার দীনেশ কার্তিকের মতে, একজন ফিনিশারের হাতে অনেক সময়ই মাত্র ৮ থেকে ১০ বল থাকে ব্যবধান গড়ে দেয়ার জন্য। এবারের বিপিএলে শামীমের গড় ৩১। তার চেয়ে বেশি রান ৮ ব্যাটারের মধ্যে শুধু মেহেদী হাসান মিরাজের গড় তার চেয়ে কম। কার্তিকের মতে টি-টোয়েন্টিতে ফিনিশারের গড় ভালো মানেই সে ভালো খেলেনি। শামীম টি-টোয়েন্টিতে বেশ কয়েক বছর ধরেই ভালো করছেন। তবে মাঝে কিছুটা ছন্দ হারালেও টেকনিক বদলে আবার ফিরেছেন আগের চেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে। নিজেকে ধরে রাখতে পারলে টি-টোয়েন্টিতে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ বড় সম্পদ পেতে যাচ্ছে।

 

খেলা থেকে আরও পড়ুন

খেলা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status